HS Prannoy

HS Prannoy: চোট-আঘাত, প্রত্যাখ্যান, বিতর্ক— সবই সামলেছেন! ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের প্রণয় কাহিনি

জীবনে অনেক বাধা পেরিয়ে এসেছেন। অনেক কিছু মুখ বুজে সয়েছেন। কিন্তু নিজের কাজে ব্রতী ছিলেন এইচএস প্রণয়। কখনও মনকে বিক্ষিপ্ত হতে দেননি। নিজের কাজটা করে গিয়েছেন। টানা দু’টি মরণ-বাঁচন ম্যাচে জয়। টমাস কাপ ফাইনালে ভারতকে তোলার মুখ্য কারিগর তাঁকে ছাড়া আর কাউকে ভাবাই যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ১৬:৩৬
Share:

কী ভাবে ব্যাডমিন্টনে উত্থান প্রণয়ের ফাইল ছবি

গোড়ালিতে বেদম যন্ত্রণা হচ্ছিল। ডেনমার্কের রাসমাস জেমকের বিরুদ্ধে কোর্টে এক সময় ঠিক করে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। কিন্তু এইচএস প্রণয় জানতেন, কোর্টে তাঁর দিকে যে ক’টি ক্যামেরা তাক করা হয়েছে, তার মাধ্যমে তাঁকে দেখছেন কোটি কোটি মানুষ। সবার আশা-ভরসা রয়েছে তাঁর উপরেই। ইতিহাস তৈরি করতে তো আর মাত্র কয়েকটা পয়েন্ট বাকি। এক বার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী! প্রণয় তাই হাল ছাড়েননি। অসহ্য ব্যথা মুখ বুজে সহ্য করেছেন। ম্যাচ জিতে দেশকে ফাইনালে তুলে তবেই কোর্ট ছেড়েছেন। এক বার নয়, টানা দু’বার। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যন্ত্রণাবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর লড়াই মন কেড়ে নিলেও, তার আগের ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধেও দেশকে জিতিয়ে ৪৩ বছর পর টমাস কাপে পদক নিশ্চিত করেন। ফাইনালে তাঁকে আর নামতেই দিলেন না সতীর্থরা। আগেই খেলা শেষ করে দিলেন। ইতিহাস ততক্ষণে লেখা হয়ে গিয়েছে।

চোট-আঘাত এই প্রথম নয়, গোটা জীবনেই তাঁকে কাহিল করেছে। সবে যখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন শুরু করেছেন, তখনই তাঁর জীবন থেকে দু’টি মূল্যবান বছর কেড়ে নেয় চোট। কিদম্বি শ্রীকান্ত বা পারুপল্লি কাশ্যপ, অথবা সাম্প্রতিক কালে লক্ষ্য সেনও হয়তো প্রণয়কে টপকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু চোট-আঘাত বার বার জীবনে বাধা হয়ে না দাঁড়ালে প্রণয়েরই ভারতের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার কথা।

Advertisement

কেরলের মোটামুটি মধ্যবিত্ত পরিবারেই তাঁর জন্ম। ফুটবল-পাগল রাজ্যে ব্যাডমিন্টন শেখা শুরু বাবা সুনীলের হাত ধরেই। বিমান সংস্থায় চাকরি করা বাবা সর্বভারতীয় এয়ারফোর্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। আট বছর বয়সেই প্রণয়ের হাতে তিনি র‌্যাকেট তুলে দেন। প্রাথমিক শিক্ষা বাবার থেকেই পাওয়া। দিনরাত ব্যাডমিন্টন নিয়ে পড়াশুনো করে, খেলা দেখে ছেলেকে তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুনীল এক সময় বুঝতে পারেন, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে গেলে আরও উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দরকার প্রণয়ের। বিভিন্ন কোচের কাছে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন ছেলেকে।

কিন্তু বেশিরভাগ জায়গা থেকেই প্রত্যাখ্যাত হতে হয়। কোর্টে তখন প্রণয়ের নড়াচড়া যথেষ্ট শ্লথ ছিল। তাই কোচেরা পরামর্শ দেন সিঙ্গলসের বদলে ডাবলসে খেলতে। প্রণয় কিছুতেই রাজি ছিলেন না। তাঁর ইচ্ছে ছিল সিঙ্গলসে খেলার। এমন সময় খুদে প্রণয়কে দেখেন পুল্লেলা গোপীচন্দ। তত দিনে হায়দরাবাদে তাঁর অ্যাকাডেমি রমরমিয়ে চলছে। নতুন নতুন প্রতিভা তুলে আনায় মগ্ন হয়ে রয়েছেন গোপীচন্দ। প্রণয়ের প্রথম পেশাদার প্রশিক্ষণ গোপীচন্দের থেকেই পাওয়া।

Advertisement

২০১০ সালেই আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে প্রবেশ। তার আগে জুনিয়র এবং সিনিয়র ন্যাশনালে খেলে পদক জিতে ফেলেছেন। ২০১১-য় প্রথম আন্তর্জাতিক পদক জেতেন প্রণয়। বাহরিন আন্তর্জাতিকে হারান সৌরভ বর্মাকে। এর পরেই চোটের কারণে দু’টি বছর নষ্ট হয় তাঁর। ২০১৩-য় কোর্টে ফিরে টাটা আন্তর্জাতিক ওপেনের ফাইনালে উঠে সৌরভের কাছেই হেরে যান। ২০১৪-য় দু’টি জাতীয় র‌্যাঙ্কিং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা জেতেন। পাশাপাশি তিন গ্রাঁ প্রি ইভেন্টের সেমিফাইনালে ওঠেন। ২০১৫ সালে ইন্ডিয়া সুপার সিরিজে বিশ্বের দু’নম্বর খেলোয়াড় ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনকে হারিয়ে চমকে দেন।

২০১৬-য় দক্ষিণ এশীয় গেমসে পুরুষ দলের হয়ে সোনা এবং পুরুষ সিঙ্গলসে রুপো জেতেন। এশীয় দলগত চ্যাম্পিয়নশিপে পুরুষ দলের হয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন। সে বছরই প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগ শুরু হয়। সেখানেও দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকেন প্রণয়। একই বছরে সুইস ওপেন গ্রাঁ প্রি-তে জিতে সোনা পান। ২০১৭-য় প্রথম ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইউএস ওপেন ব্যাডমিন্টনে জেতেন। পরের বছর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতেন।

চোটের কারণে এরপর বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় খেলতে পারেননি। করোনার কারণে সমস্ত যোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতা বাতিল হওয়ায় অলিম্পিক্সেও যাওয়া হয়নি। ২০২১ বছরের শুরুটাও খারাপ হয়েছিল। সুইস ওপেন এবং অল ইংল্যান্ডে হতাশ করেন। তবে ইন্দোনেশিয়া ওপেনে অ্যাক্সেলসেনকে হারান। এর পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বের ৯ নম্বর এনজি কা লং আঙ্গুসকে ছিটকে দেন। ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্সের সুবাদে বিশ্বের ২৭ নম্বর খেলোয়াড় হয়ে যান তিনি। এ বছরও মার্চে সুইস ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন। তার পর টমাস কাপে সাফল্য জীবন সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইয়ে দিল তাঁর।

বিতর্কও সঙ্গী প্রণয়ের জীবনে। ২০২০-তে সর্বভারতীয় ব্যাডমিন্টন সংস্থার তাঁর নাম অর্জুন পুরস্কারের জন্য মনোনীত না করায় এক হাত নিয়েছিলেন। পরে সংস্থা জানায়, শৃঙ্খলাজনিত কারণেই প্রণয়ের নাম পাঠানো হয়নি। দু’বছরের জীবন কতটা বদলে গেল প্রণয়ের। এখন তিনিই গোটা দেশের নয়নের মণি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement