৭৩ বছর ধরে যে স্বপ্ন অধরা ছিল তা পূরণ করলেন লক্ষ্য সেন, কিদম্বি শ্রীকান্তরা। আর তাই তো চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট পাওয়ার পরেই গ্যালারির দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিলেন আপাত শান্ত শ্রীকান্ত। গ্যালারি থেকে ছুটে এলেন বাকি খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা।
টমাস কাপ জিতে ভারতীয় খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। ছবি: টুইটার
কিদম্বি শ্রীকান্তের লাফিয়ে উঠে মারা স্ম্যাশ ইন্দোনেশিয়ার জোনাথন ক্রিস্টির র্যাকেটের নাগালের বাইরে কোর্ট ছুঁতেই ইতিহাস তৈরি হল। টমাস কাপের ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম বার ‘ব্যাডমিন্টনের বিশ্বকাপ’ জিতল ভারত। ৭৩ বছর ধরে যে স্বপ্ন অধরা ছিল তা পূরণ করলেন লক্ষ্য সেন, কিদম্বি শ্রীকান্তরা। আর তাই তো চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট পাওয়ার পরেই গ্যালারির দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার দিলেন আপাত শান্ত শ্রীকান্ত। গ্যালারি থেকে ছুটে এলেন বাকি খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা। ব্যাঙ্ককের ইমপ্যাক্ট এরিনাতে তখন একটাই চিৎকার, ‘ভারত মাতা কী জয়’। যেন এক টুকরো ভারত নেমে এসেছে সেখানে। প্রকাশ পাড়ুকোন, পুলেল্লা গোপীচন্দরা নিজেদের সেরা সময়ে যা করতে পারেননি সেটাই করে দেখালেন আন্ডারডগ প্রণয়, লক্ষ্যরা। সেরা হওয়ার পরে উচ্ছ্বাসেও দেখা গেল সেই মুক্তির স্বাদ। কোর্টেই ভাংড়া নাচলেন সাত্বিকসাইরাজ নানকিরেড্ডি, চিরাগ শেট্টিরা।
ফাইনালে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকারা যেন পণ করে নেমেছিলেন যে জিতেই ফিরবেন। নইলে টমাস কাপের সব থেকে সফল দেশ ইন্দোনেশিয়াকে (সব থেকে বেশি ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা) এ ভাবে ৩-০ ব্যবধানে হারানো যায়। প্রতিটা ম্যাচে টান টান লড়াই হল। পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েননি ভারতীয় শাটলাররা। তার ফল পেলেন। তিনটি ম্যাচেই পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসে ভারত। প্রতিটা পয়েন্টের জন্য পায়ের ঘাম মাথায় ফেললেন শ্রীকান্তরা। তাঁদের ঘাম-রক্তের পুরস্কার পেলেন। মরার আগে পর্যন্ত না মরার জেদ, হারার আগে পর্যন্ত না হারার মানসিকতা শ্রীকান্তদের জেতাল। তাঁরা বুঝিয়ে দিলেন, যদি লক্ষ্য ঠিক রেখে পরিশ্রম করা হয় তা হলে তার ফল মিলবে, মিলবেই।
উচ্ছ্বাসে মাতলেন চিরাগরা। ছবি: টুইটার
প্রথম ম্যাচে লক্ষ্য পিছিয়ে গিয়েও জেতেন। প্রথম গেমে ৮-২১ ব্যবধানে হেরে যান তিনি। বলা যায় জিনটিং উড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু সেখান থেকে দেখা গেল মরিয়া লড়াই। গ্যালারি থেকে ‘ভারত মাতা কী জয়’ চিৎকার উদ্বুদ্ধ করছিল লক্ষ্যকে। তাঁর মরিয়া লড়াই দেখা গেল শেষ দু’টি গেমে। লক্ষ্যর নাছোড় মনোভাবই জয় এনে দিল ভারতকে। খেলার ফল ৮-২১, ২১-১৭, ২১-১৬। ফিরে আসার লড়াই দেখালেন লক্ষ্য। তাঁর জয় চাগিয়ে দিল চিরাগদের। দ্বিতীয় ম্যাচে ডাবলসের লড়াইয়ে চিরাগ এবং সাত্বিকসাইরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন মহম্মদ এহসান এবং সুকামুলিয়োর। লক্ষ্যর মতো চিরাগরাও প্রথমে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হার মানেননি। শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। চিরাগের উপস্থিত বুদ্ধি নজর কেড়েছে। শট মারার মাঝেই যে ভাবে র্যাকেট বদলে নেন চিরাগ তা অবাক করে দেয় দর্শকদের। স্তম্ভিত হয়ে পয়েন্ট হারায় ইন্দোনেশিয়াও। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত জেতে ১৮-২১, ২৩-২১, ২১-১৯ ফলে। জেতার পরেই জার্সি খুলে আস্ফালন করলেন চিরাগ। সেমিফাইনালের ডাবলসে হেরেছিলেন। সেই রাগ পুষিয়ে নিলেন ফাইনালে।
ভারত মাতা কী জয় চিৎকারে ভরল ইমপ্যাক্ট এরিনা। ছবি: টুইটার
তৃতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন এ বারের টমাস কাপে ভারতের সেরা শাটলার শ্রীকান্ত। এ বার একটিও ম্যাচ হারেননি তিনি। ফাইনালেও সেটাই করে দেখালেন। প্রথম সেটে ক্রিস্টিকে ২১-১৫ ফলে হেলায় হারালেন। দ্বিতীয় সেটে একটা সময় ১৫-১৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে লড়াই করেন। পর পর দু’বার ম্যাচ পয়েন্ট পেতে দেননি ক্রিস্টিকে। শেষ পর্যন্ত ২৩-২১ ব্যবধানে জেতেন তিনি।