India

কিউয়ি সফরে অনিশ্চিত শিখর, সাদা বলেও জোর চর্চায় পৃথ্বী শ

রবিবার বেঙ্গালুরুতে শিখর ধওয়নের কাঁধে চোট লাগার পরে নতুন করে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে ক্রিকেটের জন্য ওপেনার খুঁজতে হচ্ছে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩৭
Share:

বিকল্প: চোটে প্রায় বাইরে ধওয়ন। সেঞ্চুরি করে নজরে পৃথ্বী (ডান দিকে)।

টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনেরও আগে আচমকাই সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে পৃথ্বী শয়ের সামনে। যিনি গত কয়েক মাসে বন্দনা-নিন্দা দুই পৃথক পৃথিবীই দেখে ফেলেছেন। এক দিকে যেমন ভারতের হয়ে সফল টেস্ট অভিষেক ঘটিয়েছেন, তেমনই প্রথমে চোট-আঘাতের জন্য ছিটকে গিয়েছেন, তার পরে ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে নির্বাসিত হয়েছেন।

Advertisement

অন্ধকার সময় পার করে দ্রুতই তিনি শিরোনামে ফিরতে পারেন। রবিবার বেঙ্গালুরুতে শিখর ধওয়নের কাঁধে চোট লাগার পরে নতুন করে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে ক্রিকেটের জন্য ওপেনার খুঁজতে হচ্ছে। চিন্নাস্বামীতে কোহালির ভারত ম্যাচ ও সিরিজ জেতার পরে ধওয়নকে দেখা যায় ‘স্লিং’ লাগিয়ে মাঠে নেমে করমর্দন করছেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে। তিনি যে নিউজ়িল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো বটেই, ওয়ান ডে-তেও ঘোর অনিশ্চিত, আনন্দবাজারে সোমবারেই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এমনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, পৃথ্বী শ পরিবর্ত হওয়ার দৌড়ে আছেন। তাঁর সঙ্গে নাম উঠছে সঞ্জু স্যামসনেরও। দু’জনেই এই মুহূর্তে নিউজ়িল্যান্ডে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলছেন।

ধওয়নকে নিয়ে অন্ধকার সোমবার আরও ঘনীভূত হয়েছে। আর পৃথ্বীর আকাশ ততই রৌদ্রোজ্জ্বল হতে শুরু করেছে। সোমবার মধ্যরাতে সিঙ্গাপুর হয়ে নিউজ়িল্যান্ডের পথে বেরিয়ে গেলেন কোহালিরা। আনন্দবাজারে দেওয়া পূর্বাভাস মতোই দলের সঙ্গে যাননি ধওয়ন। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে কোনও সিরিজেই তাঁর খেলার সম্ভাবনা নেই। কবে যে তাঁর হাতে আবার ব্যাট উঠবে, এখনই জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউ।

Advertisement

অন্য দিকে ধওয়নের পরিবর্ত হিসেবে দলে ঢোকার প্রধান দাবিদার হয়ে উঠেছেন পৃথ্বী। তিনি এখনও সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের হয়ে খেলেননি ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় ‘এ’ দল নিউজ়িল্যান্ড সফর করছে এবং সেখানে পৃথ্বীর আগ্রাসী ব্যাটিং তাঁকে প্রবল ভাবে দৌড়ে এনে দিয়েছে। রবিবারই নিউজ়িল্যান্ড একাদশের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে ১০০ বলে ১৫০ করেন পৃথ্বী। কয়েক দিন আগেই মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সময় কাঁধে চোট পেয়েছিলেন ডানহাতি ওপেনার। তখন তাঁর নিউজ়িল্যান্ড সফরে যাওয়া নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সব সংশয় কাটিয়ে এমন এক ইনিংস তিনি খেলেছেন, যা সকলকেই আবার তাঁর সম্পর্কে আশাবাদী করে তুলেছে।

ব্যাট হাতে পৃথ্বীর দাপটের কথা পৌঁছে যায় বেঙ্গালুরুতে থাকা ভারতীয় দলের মধ্যেও। তার পর থেকেই তাঁকে সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়ে আসার ভাবনা আরও গতি পেতে শুরু করেছে। নিউজ়িল্যান্ডে কোহালিদের সিরিজ শুরু হবে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। কুড়ি ওভারেও শিখরের পরিবর্ত হওয়ার ব্যাপারে এখন ফেভারিট পৃথ্বী। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন তিনি। এখন পর্যন্ত খুব আহামরি কিছু করতে না পারলেও অনেকেই মনে করছেন, সব ধরনের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার মতো প্রতিভা তাঁর রয়েছে।

পৃথ্বীর প্রতিভা নিয়ে যাঁরা উচ্ছ্বসিত, তাঁদের মধ্যে ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী রয়েছেন। ইংল্যান্ডে তাঁকে দেখার পরেই শাস্ত্রী বলে দিয়েছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেটকে আলোকিত করার জন্য নতুন এক প্রতিশ্রুতিমান এসে গিয়েছেন। এর পর পৃথ্বীর সফল টেস্ট অভিষেক দেখে শাস্ত্রী এমন মন্তব্যও করেন যে, তাঁর মধ্যে ব্রায়ান লারার ছায়া দেখতে পেয়েছেন। ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বাইরে থাকার সময়েও হেড কোচ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষকের মতো তরুণ সদস্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে পৃথ্বীকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে চাইলেও শাস্ত্রী একমত হননি। বরং আলাদা করে তাঁর সঙ্গে কথা বলে শাস্ত্রীয় ভঙ্গিতেই ‘ভোকাল টনিক’ দেন। তাঁকে বোঝান, এমন বিরল প্রতিভা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাঁড়াতে না পারলে তুমি নিজের দক্ষতার উপরেই অবিচার করবে।

তাই সন্দেহ নেই, যতই সাদা বলের ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা কম থাকুক, পৃথ্বীকে হাতে পেলে খুশিই হবেন শাস্ত্রী এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। মুম্বই এবং ভারতীয় ক্রিকেট মহলে অনেকে মনে করেন, সচিন তেন্ডুলকরের পরে সব চেয়ে প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার পৃথ্বী শ। মুম্বইয়ের স্কুল ক্রিকেটে সচিনের মতোই রেকর্ড রান করে যাঁর উত্থান। প্রশ্ন হচ্ছে, সচিনের শৃঙ্খলা, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং নিয়ন্ত্রণ পৃথ্বী দেখাতে পারবেন কি না। তার উপরেই নির্ভর করবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যাত্রার মেয়াদ। কারও কারও মতে, সাম্প্রতিক ঝড়-ঝাপ্টা থেকে শিক্ষা নিয়েছে পৃথ্বী। জীবনের রাস্তায় বেহিসেবি ড্রাইভিং করা থেকে বিরত থাকার ব্রত নিয়েছেন। প্রতিজ্ঞা করেছেন, এখন থেকে ক্রিকেটেই হবে তাঁর এক এবং একমাত্র ধ্যানজ্ঞান।

সত্যিই কি সচিন তেন্ডুলকরের মতো সংযম আর শৃঙ্খলা দেখিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের পরবর্তী মহাতারকা হয়ে উঠতে পারবেন? নাকি জীবনের রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সচিনের বাল্যবন্ধু এবং রমাকান্ত আচরেকরের সারদাশ্রমের আর এক প্রতিভাবান ছাত্র বিনোদ কাম্বলির মতো হারিয়ে যাবেন? সময়ই তার উত্তর দেবে। আপাতত শুধু এটুকু বলা যেতে পারে, স্মরণীয় অভিষেকের পরেও গত এক বছর উল্টোপাল্টা ড্রাইভিংয়ে বেসামাল হয়ে পড়ার পরে ফের নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন। কিন্তু পৃথ্বী শ মনে রাখলে ভাল করবেন যে, ক্রিকেট যেমন দু’হাত ভরে দেয়, তেমন ছিনিয়েও নেয়। তাই প্রতিভাবান হয়েও হারিয়ে যাওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। বারবার ভুল করলে ক্ষমা করে না ক্রিকেট!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement