‘সাদা জামার ক্রিকেটে’ প্রয়াসকে দেখতে চান বাবা

দিল্লিতে ছোটবেলা কেটেছে প্রয়াসের। তিন বছর বয়সে প্লাস্টিকের ব্যাটে খেলার সময়ে তার বল ছোড়া দেখে  নজর পড়েছিল এক দাদুর। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ে স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৪১
Share:

প্রয়াস রায়বর্মণ।

সুনীল গাওস্কর না বিরাট কোহালি— কে বড় ক্রিকেটার সে নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে তর্ক বাধে প্রায়ই। বিরাটের ভক্ত ছেলে এ বার তাঁর সঙ্গেই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করার সুযোগ পেয়েছে আইপিএলে। দুর্গাপুরের বছর সতেরোর প্রয়াস রায়বর্মণ এ বার আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও। ছেলে আইপিএলে সুযোগ পাওয়ায় তাঁর বাবা, দিল্লি প্রবাসী চিকিৎসক কৌশিকবাবু ফোনে বলেন, ‘‘আমরা খুব খুশি। তবে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া নয়, লক্ষ্য কিন্তু ‘সাদা জামার ক্রিকেট’। ছেলেকে সে কথা বলে দিয়েছি।’’

Advertisement

দিল্লিতে ছোটবেলা কেটেছে প্রয়াসের। তিন বছর বয়সে প্লাস্টিকের ব্যাটে খেলার সময়ে তার বল ছোড়া দেখে নজর পড়েছিল এক দাদুর। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ে স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাকে। এর পরে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে প্রয়াস চলে আসে দুর্গাপুরে। শহরের বিধাননগরে দাদু চিত্তরঞ্জনবাবু ও ঠাকুমা রিক্তাদেবীর কাছে বড় হতে থাকে সে। দুর্গাপুর ক্রিকেট ক্লাবে শিবনাথ রায়ের কাছে চলে ক্রিকেটের ঘষামাজা।

আদতে লেগস্পিনার, প্রয়োজনে ব্যাটও করতে পারে প্রয়াস। টানা দু’বছর শিবনাথবাবুর কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে কলকাতা-যাত্রা। অম্বর রায় টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব ১৪ বাংলা দলে যখন সুযোগ পায়, তখন প্রয়াসের বয়স ১২ বছর। বাংলাদেশেও খেলতে গিয়েছিল সে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পরপর নানা টুর্নামেন্টে বাংলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছে প্রয়াস। এ বছর বিজয় হাজারে ট্রফিতে অভিষেক ম্যাচে জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ৫ ওভার বল করে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেয়। টুর্নামেন্টে বাংলার হয়ে সর্বোচ্চ ১১টি উইকেটও পায়। অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যালেঞ্জার ট্রফি খেলেছে প্রয়াস। অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলের সম্ভাব্য তালিকাতেও জায়গা পেয়েছে সে। তবে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে এখনও অভিষেক হয়নি তার। তার আগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে গেলেন আইপিএলে।

Advertisement

প্রয়াসের বাবা কৌশিকবাবু জানান, ছেলের সৌজন্যে তাঁর দিল্লির বাড়িতে বিরাট কোহালির গোটা দশেক বড় পোস্টার শোভা পাচ্ছে। ছেলের ক্রিকেট খেলায় বরাবর উৎসাহ জুগিয়েছেন মা মল্লিকাদেবীও। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘এত কম বয়সে আইপিএলে সুযোগ, ভাবতেই পারছি না! ছেলেকে বারবার বলেছি, মাথা যেন নিচু থাকে। চাকচিক্যে ভেসে যেও না। আদর্শ ক্রিকেটারদের কাছে থেকে শেখার সুযোগ পাচ্ছ, শিখে নাও।’’ তাঁর স্বপ্ন, ছেলে এক দিন দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলবে। তাঁর কথায়, ‘‘সাদা জামার ক্রিকেটই তো আসল।’’ এখন কলকাতার ফ্ল্যাটে দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে থাকে প্রয়াস। ক্রিকেট থেকে ছুটি পেলে তিন জন চলে আসেন দুর্গাপুরে।

প্রয়াসের প্রশিক্ষণ শুরু মূলত দুর্গাপুর ক্রিকেট ক্লাবের কোচ শিবনাথবাবুর কাছে। মাঝে কলকাতার প্রণব নন্দী, জয়ন্ত ঘোষদস্তিদার, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, আব্দুল মুনায়েম-সহ আরও অনেকে রয়েছেন। এখন বাংলা দলের কোচ সাইরাজ বাহুতুলের কাছেও নিয়মিত শিখছেন প্রয়াস।

শিবনাথবাবু জানান, লেগস্পিন করার সময়ে লাইন-লেংথ ঠিক রেখে প্রয়াস একটু জোরের উপরে বল করে। তিনি বলেন, ‘‘শুরু থেকেই খুব প্রতিশ্রুতিমান প্রয়াস। আইপিএলে ওর সাফল্যে কামনা করি।’’ দুর্গাপুর ক্রিকেট ক্লাব থেকে বাংলার রঞ্জি দলে অনেকেই সুযোগ পেয়েছেন। আইপিএলের দলেও ঢুকেছেন রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নশেখর মণ্ডলেরা। তবে তাঁরা মাঠে নামার সুযোগ পাননি। প্রয়াসের হাত ধরে সেই ছবিটা বদলায় কি না, আশায় দুর্গাপুরবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement