ঘাস চাই, বেশি রোলার নয়, মন্ত্র দুবাই পিচ কারিগরের

যে দ্বৈরথের বাইশ গজ তৈরি হয়েছিল দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক টবি লামসডেনের হাত ধরে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে লামসডেন একটা পরামর্শ দিতে চান।

Advertisement

কৌশিক দাশ

আবু ধাবি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১৭
Share:

প্রস্তুতি: ইডেনে চলছে গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টের কাজ। স্প্রে করার পাশাপাশি আউটফিল্ডে জল দেওয়ায় ব্যস্ত মাঠকর্মীরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

আর চার দিন পরেই ইডেন দেখবে গোলাপি বলের টেস্ট ক্রিকেট। কিন্তু ভারতে দিনরাতের টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেক হওয়ার অনেক আগেই দুবাই দেখে ফেলেছিল এই ক্রিকেট বিপ্লব। ২০১৬ এবং ২০১৭— পরপর দু’বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ওই শহরে দিনরাতের টেস্ট খেলেছিল পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এক বার জিতেছিল, এক বার হেরেছিল।

Advertisement

যে দ্বৈরথের বাইশ গজ তৈরি হয়েছিল দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক টবি লামসডেনের হাত ধরে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে লামসডেন একটা পরামর্শ দিতে চান। আনন্দবাজারকে সোমবার দুবাই থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘পিচে কিন্তু কিছু ঘাস ছেড়ে রাখতে হবে। আর বেশি রোলার চালানো চলবে না। তা হলেই গোলাপি বলের জন্য একটা আদর্শ পিচ তৈরি করা যাবে।’’

আপনি মরুশহরে দারুণ সব ক্রিকেট পিচ উপহার দিয়েছেন। লাল এবং গোলাপি বলের পিচ তৈরি করার ক্ষেত্রে কী কিছু আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? লামসডেন বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, একটু তো নিতেই হয়। উপমহাদেশের ক্ষেত্রে কাজটা একটু কঠিন হয়ে যায়। পিচে ঘাস রাখতে হবে, আবার দেখতে হবে সেই ঘাস সবুজ হলে চলবে না।’’ কেন এই বাড়তি ঘাস রাখা প্রয়োজন, তাও বলেছেন লামসডেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘পিচে ঘাস না থাকলে গোলাপি বলের পালিশ খুব তাড়াতাড়ি উঠে যাবে। যেটা মোটেও ঠিক নয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ইডেনে শিশিরের মোকাবিলা করতে শামিদের মহড়ায় হয়তো ভিজে বল

অভিজ্ঞ: ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট নিয়েও আগ্রহী টবি লামসডেন।

নিজের তৈরি পিচে দুটো টেস্ট ম্যাচ দেখার পরে লামসডেন মনে করেন, দিনরাতের ম্যাচে বিশেষ বিশেষ কিছু সময়ে ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন করে তোলেন পেসাররা। সেগুলো ঠিক কখন? দুবাইয়ের পিচ কারিগর বললেন, ‘‘যখন ঠিক সন্ধ্যা হচ্ছে, তখন দেখেছি বল বেশি সুইং করছে। এর কারণটা ঠিক কী, বলতে পারব না। মনে হয়, ওই সময় দিনের আলো কমে আসে আর কৃত্রিম আলোও (ফ্লাডলাইট) পুরোপুরি জ্বলে ওঠে না। আলোর তীব্রতা কম থাকায় বল একটু বেশি সুইং করে।’’ আর দ্বিতীয়টা? ‘‘নতুন বলে রাতে যদি কোনও দল বল করার সুযোগ পায়, তা হলে কিন্তু ব্যাটসম্যানের কাজ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আর সাধারণত খেলার শেষ ঘণ্টায় নতুন বল নেওয়ার সুযোগ থাকে। তখনও কিন্তু সুইং বোলার আর পেসাররা সাহায্য পায়,’’ বলেছেন এই পিচ প্রস্তুতকারক।

দুবাইয়ে সেপ্টেম্বরের গরমে ভাল ক্রিকেট পিচ তৈরি করা কতটা যে কঠিন, তা বলছিলেন লামসডেন। একই সঙ্গে পিচকে আর্দ্র রাখতে হবে, আবার ঘাসও থাকতে হবে। কিন্তু এর বাইরেও পিচ প্রস্তুতকারকদের সামনে একটা বড় পরীক্ষা থাকে, সেটা মনে করিয়ে দিতে চান তিনি। সেটা হল, বাইরে থেকে আসা কোনও নির্দেশ!

আরও পড়ুন: বাঁ-হাতি পেসার পেতে লাগবে ধৈর্য, বলছেন জাহির

অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পিচ তৈরির অভিজ্ঞতা থেকে লামসডেন বলছেন, ‘‘ভাল পিচ বানানোর দায়িত্বটা পিচ প্রস্তুতকারকদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। ওরাই সব চেয়ে ভাল বোঝে কী ভাবে সেরা পিচ তৈরি করা যায়। তাই আমি সব সময় আশা করে থাকি, আয়োজক দেশের তরফে যেন পিচ প্রস্তুতকরকদের কোনও নির্দেশ দেওয়া না হয়।’’

দিনরাতের টেস্টে যে ব্যাপারটা বড় হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেটা হল শিশির। দুবাইয়ে তিনি দেখেছেন সেটা। ইডেনেও শিশির একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করেন এই পিচ প্রস্তুতকারক। তিনি বলছেন, ‘‘দুবাইয়ে আমরা রাতে শিশির পেয়েছি। সে জন্য তরল রাসায়নিক স্প্রে করতে হয়েছিল। যাতে ঘাসের ডগায় শিশির না জমে যায়। আর শীতকালে রাতের দিকে তো শিশির পড়বেই।’’

নভেম্বরের ২২ তারিখ থেকে শুরু এই টেস্টে তা হলে শিশির রুখতে কী করা উচিত? লামসডেনের দাওয়াই, ‘‘প্রত্যেক দিন স্প্রে তো করতেই হবে। তা ছাড়া দেখতে হবে মাটিতে আর্দ্রতা কেমন। দেখতে হবে ঘাসের শিশির ধরে রাখার ক্ষমতা কতটা। তার পরে সেই মতো কাজ করতে হবে।’’

আপনি নিজে দিনরাতের টেস্টের সাক্ষী থেকেছেন। স্পিনাররা কি সত্যিই সমস্যায় পড়ে যায় গোলাপি বলে বল করতে? লামসডেনের উপলব্ধি, ‘‘আমি যত দূর দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে রাতে স্পিনারদের বল আয়ত্তে (গ্রিপ) আনতে সমস্যা হয়। বল যে ভিজে যায়, এমনটা নয়। কিন্তু তাও বলকে ঠিক মতো ঘোরাতে একটু সমস্যা হয় স্পিনারদের।’’

ইডেনের দিনরাতের টেস্টের দিকে আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে থাকবেন লামসডেন। আর আশা করবেন, পিচে কিছুটা ঘাস থাকবে। উইকেটে মাত্রাতিরিক্ত রোলার চলবে না। আর কোনও নির্দেশ আসবে না বাইশ গজ তৈরি করার ব্যাপারে! ‘‘তা হলেই দেখবেন ব্যাট বলের লড়াইটা জমে যাবে,’’ বলছেন লামসডেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement