২০০৭ সালে বিশ্বকাপজয়ী টি-টোয়েন্টি দলে তিনি ছিলেন। খেলেছিলেন ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও। দুই ফরম্যাটেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বকাপজয়ী দলে তিনি ছিলেন। তার পরও সর্বকালের সেরা এক দিনের দল গড়ার সময় নেতৃত্বের মুকুট ধোনির মাথায় বসালেন না শ্রীসন্থ। তাঁর প্রথম এগারোয় পাঁচ ভারতীয় থাকলেও নেই রোহিত শর্মা। যিনি এই ফরম্যাটে তিন বার পেরিয়াছেন দু’শোর সীমানা। প্রশ্ন থাকছে দলের পঞ্চম বোলার নিয়েও।
শ্রীসন্থের দলে ওপেন করবেন সচিন তেন্ডুলকর। ওপেনার হিসেবে এক দিনের ক্রিকেটে অন্য মাত্রা যোগ করেছিলেন লিটল চ্যাম্পিয়ন। তিনিই ৫০ ওভারের ফরম্যাটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। এই ফরম্যাটে ৪৯ সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। এটাও রেকর্ড। এই ঘরানায় ১৮৪২৬ রানও তো সবচেয়ে বেশি।
ওপেনিংয়ে সচিনের সঙ্গী হবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন বোলারদের লাইন-লেংথ নিয়ে বাড়াবে বিরক্তি। আর ওপেনিংয়ে জুটি হিসেবে দু’জনে দুর্দান্ত সফল। ৩১১ ম্যাচে রয়েছে ১১৩৬৩ রান। গড় ৪১.০২। ২২ সেঞ্চুরির পাশাপাশি মিডিয়াম পেসে নিয়েছেন ১০০ উইকেট। সিম-সহায়ক কন্ডিশনে বেশ কার্যকরী। আর দলের তিনিই অধিনায়ক।
তিনে নামবেন ব্রায়ান লারা। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির রেকর্ডও ঈর্ষণীয়। ২৯৯ ম্যাচে করেছেন ১০৪০৫ রান। গড় ৪০.৪৮। ১৯ সেঞ্চুরি ও ৬৩ হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এক সময় সচিনের সঙ্গে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে উচ্চারিত হত ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়কের নাম। লারার উপস্থিতি বোলারদের দুশ্চিন্তা বাড়াবে।
তিনে লারা বলেই চারে নামতে বাধ্য হবেন বিরাট কোহালি। ২০১১ বিশ্বকাপে তিনি ধোনির দলের হয়েও নামতেন চার নন্বরে। ভারত অধিনায়ক হলেন চেজমাস্টার। তবে শুধু রান তাড়া করাই নয়, প্রথমে ব্যাট করে দলকে বড় রানের নিরাপত্তায় পৌঁছে দিতেও পারেন। এই ফরম্যাটে ৪৩ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি। গড় ৫৯.৩৩।
পাঁচে অবশ্যই এবি ডি’ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকার এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান বলা হয়। মাঠের সব প্রান্তে শট খেলার অবিশ্বাস্য দক্ষতা রয়েছে তাঁর। ৫৩.৫০ গড়ে ৯৫৭৭ রান করেছেন তিনি এক দিনের ক্রিকেটে। শতরানের সংখ্যা ২৫।
ছয়ে যুবরাজ সিংহ। ভারতীয় দলের হয়ে এই জায়গায় দীর্ঘ দিন ভরসা দিয়েছেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারও হয়েছিলেন তিনি। ৩০৪ ওয়ানডে ম্যাচে ৮৭০১ রান করেছেন ৩৬.৫৫ গড়ে। রয়েছে ১৪ সেঞ্চুরি। পাশাপাশি, বাঁহাতি স্পিনে নিয়েছেন ১১১ উইকেট। পঞ্চম বোলার হিসেবে সৌরভের সঙ্গে হাত ঘোরাবেন যুবরাজ।
দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিনিশারও তিনি। ৩৫০ ম্যাচে ৫০.৫৭ গড়ে ১০৭৭৩ রান করেছেন তিনি। সেঞ্চুরির সংখ্যা ১০। সঙ্গে ৩২১ ক্যাচ আর ১২৩ স্টাম্পিং রয়েছে।
শ্রীসন্থের দলের অলরাউন্ডার হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাক কালিস। এই সময়ের সেরা অলরাউন্ডার তিনি। রেকর্ডেই তা প্রতিফলিত। ৩২৮ একদিনের ম্যাচে ৪৪.৩৬ গড়ে করেছেন ১১৫৭৯ রান। রয়েছে ১৭ সেঞ্চুরি। এর সঙ্গে মিডিয়াম পেসার হিসেবে নিয়েছেন ২৭৩ উইকেট। ইকনমি রেট ভাল ভাল, ৪.৮৪।
শ্রীসন্থের দলের একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার হলেন অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন। কিংবদন্তি লেগস্পিনার ১৯৪ ম্যাচে নিয়েছেন ২৯৩ উইকেট। গড় ২৫.৭৩, ইকনমি রেট ৪.২৫। লেগস্পিন-গুগলিতে ব্যাটসম্যানের বিভ্রান্তি বাড়াতে তিনি ওস্তাদ।
নতুন বল হাতে আক্রমণ শুরু করবেন অ্যালান ডোনাল্ড। ১৬৪ ম্যাচে ২৭২ উইকেট নিয়েছেন প্রোটিয়া পেসার। গড় ২১.৭৮। ইকনমি রেট ৪.১৫। দুর্দান্ত পরিসংখ্যান তাঁর। জিঙ্ক অক্সাইড মুখে মেখে দৌড়ে আসার সময় ডোনাল্ড হয়ে উঠতেন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক।
নতুন বলে ডোনাল্ডের সঙ্গী গ্লেন ম্যাকগ্রা। অস্ট্রেলিয়ার এই পেসার ২৫০ এক দিনের ম্যাচে নিয়েছেন ৩৮১ উইকেট। গড় ২২.০২, ইকনমি রেট ৩.৮৮। পেসার হিসেবে রীতিমতো চোখধাঁধানো কেরিয়ারে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিন বার।
এই দলের দ্বাদশ ব্যক্তি শ্রীসন্থ নিজেই। একসময় চিহ্নিত হয়েছিলে অসামান্য প্রতিশ্রুতিবান পেসার হিসেবে। কিন্তু ৫৩ একদিনের ম্যাচের চেয়ে বেশি খেলতে পারেননি। নিয়েছেন ৭৫ উইকেট। গড় ৩৩.৪৪, ইকনমি রেট ৬.০৭। বদমেজাজ, নাটুকে হাব-ভাব, অতিরিক্ত আগ্রাসন তো ছিলই, আইপিএলে দুর্নীতির অভিযোগ কেরিয়ার শেষ করে দিয়েছে কেরলের এই ক্রিকেটারের।