পুজোর সেই বিজ্ঞাপনী স্লোগানের দরকার নেই যে, সত্যি, অ্যাতো বড়!
সত্যিই বড়! পুজোর ঠিক আগে শহর কলকাতার সবচেয়ে বড় সেলিব্রিটি উৎসবের নাম এ বার পেলে।
ভোরের বেতারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনীর প্রারম্ভের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে শহরে ঢুকে যাচ্ছেন বিশ্ব ফুটবলের তথাকথিত সম্রাট। মহালয়ার আগের দিনই আসলে কলকাতায় পা দেবেন তিনি। শেষ এসেছিলেন সেই আটত্রিশ বছর আগে।
আপাতত ঠিক হয়েছে প্রথম দিনটা বিশ্রামে কাটিয়ে মহালয়ার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন দিয়ে উদ্বোধন হবে তাঁর কলকাতার নির্ঘণ্ট। সেই সাক্ষাৎ সেরে তিনি চলে যাবেন রাজারহাটে আটলেটিকোর টিম হোটেলে। আটলেটিকো কলকাতার প্লেয়ারদের সঙ্গে সেখানে তিনি দেখা করবেন। কথা বলবেন। রাতে নেতাজি ইন্ডোরে আবার তাঁকে নিয়ে চোখধাঁধানো শো— লেজেন্ডস নাইট। সেখানে পেলের পাশে থাকবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর ভিডিও লিঙ্কআপে সাংহাই থেকে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেবেন রাফায়েল নাদাল। ওই সময় সাংহাই ওপেেন খেলবেন নাদাল। ‘লেজেন্ডস টেন’ নামক নিউইয়র্কে অবস্থিত সংস্থার কাছে আপাতত পেলের ভাবমূর্তির সত্ত্ব রয়েছে। তারাই পেলেকে ভারতে আনছে।
কসমসের হয়ে যে বার ইডেনে খেলে গিয়েছিলেন পেলে, তখনও তিনি সক্রিয় ফুটবলার। তাঁকে ঘিরে সাতাত্তরের সেই অতলস্পর্শী মাদকতার কারণ সহজবোধ্য। কিন্তু ইনি বৃদ্ধের পর্যায়ভুক্ত। কোনও দেশের কোচ বা ফুটবল সংস্থার প্রধান-টধানও নন যে খবরে আছেন। তাঁকে ঘিরে কি পুরনো আবেগের ঢেউ উঠবে? সম্ভব সেটা? মঙ্গলবার সংগঠকদের পক্ষে এর জবাবে বলা হল, পেলে হচ্ছেন পেলে। পৃথিবীর যে দেশেই তিনি যখন যান, সেখানেই খবর তৈরি হয়ে যায়। এখানেও পেলের কলকাতা আগমন ঘিরে স্পনসর সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের মধ্যে রয়েছে মহেশ ভূপতির সংস্থাও। নাদালকে ভিডিও চ্যাটের জন্য জোগাড় করে দিচ্ছেন সম্ভবত মহেশই।
সৌরভ— তিনি কী জিজ্ঞেস করবেন পেলেকে লেজেন্ডস নাইটে? ফিফার অনূর্ধ্ব সতেরো বিশ্বকাপের এ দেশে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর সৌরভ এবং এক সময়ের উৎসাহী ফুটবলারও। রাতে বলছিলেন, ‘‘মারাদোনাকে টিভিতে লাইভ দেখেছি। পেলের পুরনো খেলা দেখেছি ফিল্মে। মারাদোনাকে মিট করার খুব ইচ্ছে রয়েছে আমার। পেলে হলেন আর এক কিংবদন্তি। আমার মনে হয় লেজেন্ডস নাইটের ওই রাতটা আমার জীবনের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।’’ সৌরভ এখনও ভেবে উঠতে পারেননি সম্মাননীয় বিদেশিকে কী প্রশ্ন করবেন?
‘‘আমার খেলোয়াড়জীবনে এমন সুযোগ পেলে অনেক কিছু জানতে চাইতাম। ওঁর ট্রেনিং মেথড, ফিটনেস রুটিন, সিস্টেম, জেতার সংস্কৃতি তৈরি সব নিয়ে। ক্রিকেট-ফুটবল যতই আলাদা হোক, কিছু কিছু কমন তো আছে। ওঁর কাছ থেকে জানতে পারলে দারুণ হত। এখন আমি রিটায়ার্ড— ওগুলো আর কাজে আসবে না। অন্য কিছু নিয়ে জানতে চাইব। হয়তো ওঁর জীবন নিয়ে প্রশ্ন করব,’’ বলেন সৌরভ।
স্থানীয় সংগঠক মাল্টিকন গ্রুপের তরফে জানা গেল পেলে যুবভারতীতে যাবেন এর পরের দিন। আটলেটিকোর খেলা দেখতে। কেরল ব্লাস্টার্সের সঙ্গে খেলা হলে তাদের বিশ্বখ্যাত মালিক আসবেন কি না, অনিশ্চিত। সচিন তেন্ডুলকর এখনও পাকা কথা দেননি। আইএসএলের সেই ম্যাচ দেখে উঠে স্পনসরদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে পেলের। রাতে কর্পোরেট ডিনার। মারাদোনার জন্য নৈশভোজে যেমন বিশেষ নিলামের ব্যবস্থা ছিল, এখানেও তাই। তফাতের মধ্যে পেলের ব্যক্তিগত স্মারকও কিছু নিলাম করা যায় কি না তার চেষ্টা করছেন সংগঠকেরা। সৌরভও দেবেন তাঁর কিছু স্মারক। যা টাকা উঠবে তার পুরোটাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে।
নৈশভোজের পরের দিনও পেলে কলকাতায়। যদিও সে দিনের কর্মসূচি কিছু স্থির হয়নি। কারও কারও মনে হচ্ছে পেলের আসন্ন জন্মদিনের প্রাক্-উৎসব উদযাপনের ওটা উপযুক্ত দিন হতে পারে। দিল্লি হয়ে পেলের ভারত ছাড়ার কথা ১৭ অক্টোবর। এর ঠিক ছয় দিন বাদে তাঁর জন্মদিন। যেমন-তেমন নয়, পঁচাত্তরতম জন্মদিন!
গোটা ফুটবল-পৃথিবীতে ২৩ অক্টোবর নিয়ে আগাম সাড়া পড়ে গিয়েছে। স্যান্টোসে পেলের জাদুঘরে বিশেষ প্রদর্শনী। সাও পাওলোর জাতীয় ফুটবল জাদুঘরে প্রদর্শনী। আর লন্ডনের বিখ্যাত হ্যালসিওন গ্যালারি তো জন্মদিনের এক মাস আগে থাকতেই বিশেষ প্রদর্শনী শুরু করে দিয়েছে তাঁর ওপর। বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের আঁকা তাঁর ছবি সেখানে প্রদর্শিত হবে। পেলে তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ‘‘এখন খেললে বার্সেলোনার হয়ে খেলতাম’’ বলা ছাড়াও অশেষ ধন্যবাদ দিয়েছেন হ্যালসিওন গ্যালারিকে। শোনা যাচ্ছে, বাকিংহ্যাম প্যালেসে রানিও তাঁকে বিশেষ জন্মদিন সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ডাকছেন।
গোটা বিশ্ব যে দিনটাকে আবেগে স্মরণ করতে চাইবে, তার ঠিক দশ দিন আগে সেই উৎসব আগাম পালনের সুযোগ পাচ্ছে কলকাতা। এই শহরে তাঁর জন্মদিন পালন বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্রাজিলীয়র ড্রিবলিং স্টাইলের মতোই অভিনব হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।