চর্চায়: ম্যান ইউনাইটেডের ম্যাচে এ ভাবেই প্যালেস্তাইনের পতাকা হাতে দেখা গেল পোগবা, ডিয়ালোকে। ছবি রয়টার্স।
নেভেনি বিক্ষোভের আগুন। এখনও তোপের মুখে গ্লেজ়ার পরিবার। তারই মধ্যে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম ফুলহ্যাম ম্যাচের পরে আরও এক চমকপ্রদ ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থকেরা।
ম্যাচের পরে পোগবা আর আমাড ডিয়ালো চমকে দিলেন স্টেডিয়ামের মধ্যেই প্যালেস্তাইনের পতাকা তুলে ধরে। গাজ়া লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েল। হামাস অধ্যুষিত এলাকায় প্রচুর প্রাণহানিও হচ্ছে। তারই প্রতিবাদে প্যালেস্তাইনকে সমর্থন করতে নেমে পড়েন ম্যান ইউয়ের এই দুই তারকা। যে অভিনব প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন ম্যান ইউ ম্যানেজার ওয়ে গুন্নার সোলসার।
তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘একটা দল চালাতে হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুটবলারদের আনতে হয়। এরা ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে উঠে আসেন। আমাদের উচিত এ সবের বিরোধিতা না করে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো।’’ ম্যান ইউ ম্যানেজারের অভিমত, একজন ফুটবলার সমাজসচেতন হতেই পারেন। তাতে অন্যায় কিছু নেই। প্রাসঙ্গিক বলেই তিনি মার্কাস র্যাশফোর্ডের সমাজসেবার বিষয়টি তোলেন। প্রসঙ্গত শনিবার এফএ কাপ ফাইনালের পরে লেস্টার সিটির হামজ়া চৌধুরী ও ওয়েসলি ফোফানাও এই একই ভাবে মাঠের মধ্যে এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবারের ম্যাচ ১-১ ড্র হয়। করোনা-বিধি শিথিল হওয়ায় স্টেডিয়ামে বসে সেই লড়াই দেখলেন হাজার দশেক সমর্থক।
তাঁদের খুশি করতে চেষ্টায় কসুর করেননি পল পোগবারা। অসাধারণ গোলও করেন এডিনসন কাভানি। ফের্নান্দেসের পাস ধরেই উরুগুয়ান স্ট্রাইকার লক্ষ্য করেন ফুলহ্যামের গোলরক্ষক আরিয়েলো নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। সেই সুযোগ নিয়ে ৪০ গজ দূর থেকে নিখুঁত লব করে তিনি বল জড়িয়ে দেন জালে। সেটা খেলার ১৬ মিনিটে। ম্যান ইউ অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেনি। ৭৬ মিনিটে ১-১ করে দেন ফুলহ্যামের
জো ব্রায়ান।
ম্যাচ ড্র করায় টেবলে দ্বিতীয় ম্যান ইউয়ের পয়েন্ট এখন ৭১, ৩৭ ম্যাচে। তবে ম্যাচের ফল নিয়ে রেড ডেভিলস সমর্থকদের বিশেষ আগ্রহ ছিল বলে মনে হয়নি। প্রায় সারা ক্ষণ তাঁরা গ্লেজ়ার পরিবারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বিদ্রোহী লিগে (প্রস্তাবিত ইউরোপীয় সুপার লিগ) খেলতে চেয়েছিল ম্যান ইউ। যা মেনে নিতে পারেননি ক্লাবের সভ্যেরা। গ্লেজ়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পরেও তাঁরা তাই একইরকম সরব। সমর্থকদের বক্তব্য, মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী মালিকেরা ক্লাবের আবেগ আদৌ উপলব্ধি করেন না। তাই তাঁরা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন,‘গো গ্লেজ়ার গো’ লেখা বড় বড় ব্যানার নিয়ে!
ম্যান ইউ ম্যানেজার ওয়ে গুন্নার সোলসার দলের পারফরম্যান্সে অবশ্য একেবারেই খুশি নন। তিনি মনে করেন, ইউরোপা লিগ ফাইনালে ভিয়ারিয়ালের মতো দলকে হারাতে হলে পোগবাদের আরও অনেক ভাল খেলতে হবে। ‘‘শেষ তিন ম্যাচে মোটেই আমরা ভাল খেলিনি। ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে তো ফুটবলারেরা সবাই নিজেদের ব্যক্তিগত দক্ষতা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি কখনওই ওদের এ ভাবে খেলতে বলিনি। বলবও না। শুধু দর্শকদের আনন্দ দিতে আমরা মাঠে নামি না। দলকে জেতানোটাই আসল উদ্দেশ্য। সেটাই ছেলেরা ভুলে যাচ্ছে,’’ বলেছেন হতাশ সোলসার। জানিয়েছেন, তাঁর ফুটবল জীবনে স্যর আলেক্স ফার্গুসনের প্রশিক্ষণে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার পরে কী ভাবে ম্যান ইউ দলটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। তাঁর ধারণা, ইউরোপা লিগ ফাইনালে (আগামী বুধবার, রাত ১২-৩০ থেকে খেলা) জিতলে তাঁর দল অন্য উচ্চতায় চলে যাবে। যার সাহায্যে আগামী দিনে ম্যান ইউ আবার প্রিমিয়ার লিগও জিততে পারে।