শুরু করেছিলেন বহু আশা জাগিয়ে। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ উইকেট কিপার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল টেস্টে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল পার্থিব পটেলের ক্রিকেট কেরিয়ার।
১৯৮৫ সালের ৯ মার্চ পার্থিবের জন্ম আমদাবাদে। উইকেট কিপার হিসেবে জাতীয় দলে অভিষেক ২০০২ সালে। এর পর দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তৃত কেরিয়ারে তিনি জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠতে পারেননি।
২০০২ সালের অগস্টে ট্রেন্টব্রিজে জীবনের প্রথম টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ১৫৩ দিন। এর আগে পাকিস্তানের হানিফ মহম্মদ প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন ১৭ বছর ৩০০ দিন বয়সে। সেই রেকর্ড ভেঙে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট উইকেট কিপারের তকমা পান পার্থিব।
পরের বছর ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে খেলেন পার্থিব। তবে এক দিকে তাঁর খারাপ ফর্ম, অন্য দিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্থান, এই দুই মিলিয়ে পার্থিবের কেরিয়ার ধাক্কা খায়। শেষে এ রকম পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায়, তিনি দলে তখনই ডাক পেতেন যখন সিনিয়র কোনও খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেওয়া হত।
২০০৩ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন পার্থিব। কিন্তু একটা ম্যাচও খেলেননি। সে সময় রাহুল দ্রাবিড়কে খেলানো হত উইকেট কিপার এবং একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। যাতে দলে আরও এক জন ব্যাটসম্যান বা বোলারকে নেওয়া যায়।
২০১০ সালে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের চতুর্থ ও পঞ্চম ওয়ান ডে ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন পার্থিব। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দু’টি ম্যাচেই পর পর অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি।
পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল তেন্ডুলকর, ধোনি, জাহির খান-সহ একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারকে। সেই সফরে সুযোগ পেয়েছিলেন পার্থিব এবং ঋদ্ধিমান সাহা দু’জনেই।
সফরের একটি টি-২০ ম্যাচে ওই ফরম্যাটে অভিষেক হয়েছিল পার্থিবের। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে তে তিনি ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এর পর বিস্মৃত পার্থিবকে দলে সুযোগ দেওয়া হয় ২০১৬ সালে।
সে বছর আহত ঋদ্ধিমান সাহার বদলে মোহালিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সুযোগ পান পার্থিব। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ৫৪ বলে অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস দলকে জয়ের পথে এগিয়ে দিয়েছিল। ৮ বছর পরে তিনি টেস্ট খেলেছিলেন।
২৫ টেস্টে তিনি কট বিহাইন্ড করেছেন ৬২টি। স্টাম্পিংয়ে তাঁর শিকার ১০। রান করেছেন ৯৩৪। গড় ৩১.১৩। সর্বোচ্চ ৭১। ৩৮টি ওয়ানডেতে কট বিহাইন্ড করেছেন ৩০ জন ব্যাটসম্যানকে। স্টাম্পিং করেছেন ৯ জনকে। মোট রান ৭৩৬। গড় ২৩.৭৪। সর্বোচ্চ ৯৫।
২০১৬-১৭ মরসুমে তাঁর অধিনায়কত্বে মুম্বইকে হারিয়ে প্রথম বার রঞ্জি টুর্নামেন্ট জেতে গুজরাত। পরবর্তীতে ইন্ডিয়া বি এবং দলীপ ট্রফিতে ইন্ডিয়া গ্রিন দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
আইপিএল-এ অনেক দলের হয়ে খেলেছেন পার্থিব। চেন্নাই সুপার কিংস, কোচি টাস্কার্স, ডেকান চার্জার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে বিভিন্ন সময়ে খেলেছেন তিনি।
ক্রিকেট জীবনে পার্থিবের আদর্শ ছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং কুমার সঙ্গকারা। তাঁদের মতো উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কতটা পূরণ করতে পেরেছেন বা পারেননি, সে সব পরিসংখ্যানবিদদের হিসেব।
তবে পার্থিবের স্বপ্নপূরণের সঙ্গী তাঁর স্ত্রী অবনী। আমদাবাদে পার্থিবের প্রতিবেশী ছিলেন অবনী জাভেরি। সেই সূত্রে দু’জনের পরিচয় ছোট থেকেই। পরবর্তী সময়ে ভাললাগা থেকে ভালবাসা এলেও মুখ ফুটে কেউ কাউকে বলেননি। তবে বজায় ছিল বন্ধুত্ব।
জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে পার্থিব ঠিক করেন এ বার সাহস সঞ্চয় করে প্রোপোজ করে ফেলতেই হবে। তাঁর প্রোপোজ করার ধরন ছিল আদ্যন্ত রোমান্টিক। আমদাবাদের শহরতলিতে লংড্রাইভে গিয়েছিলেন তিনি এবং অবনী।
এর পর লংড্রাইভের বিরতিতে অবনীর উপর প্রায় পুষ্পবৃষ্টি করে প্রোপোজ করেছিলেন পার্থিব। উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে সময় নেননি অবনী। ২০০৮ সালে নিজের জন্মদিনে দীর্ঘ দিনের প্রেয়সীর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন ২৩ বছর বয়সি পার্থিব।
অবনী পেশায় এক জন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার। স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ে ভেনিকাকে নিয়ে পার্থিবের ঘরোয়া জীবন ঝলমলে। ক্রিকেট থেকে সদ্য অবসরের পরে তিনি এখন আদ্যন্ত ফ্যামিলিম্যান।