মরিয়া: ওমানের সাদ আল মুখাইনির বিরুদ্ধে বল দখলের লড়াইয়ে ভারতের আশিক। মঙ্গলবার। এআইএফএফ
এক যুগ আগে প্রাক-বিশ্বকাপ ম্যাচে নেপাল বনাম ওমান ম্যাচের
কথা মনে পড়ছিল মঙ্গলবার ম্যাচটা দেখতে বসে। সে বার নেপালের কোচ ছিলাম আমি। ওমানের বিরুদ্ধে মাস্কাটে খেলতে যাওয়ার সময়ে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে নেপাল ফুটবলের এক কর্তা বলেছিলেন, ‘‘শ্যামদা দেখবেন আমরা যেন আট-দশ গোল না খাই।’’
মাস্কাটে নেমে নেপালের ফুটবলারদের বলেছিলাম, ‘‘তোমাদের ফুটবলের উপরে দেশের মানুষের আস্থাটাই চলে গিয়েছে। না হলে, নেপাল ফেডারেশনের কর্তা আট-দশ গোল খাওয়ার ভয় পান কী ভাবে?’’ ছেলেদের বলেছিলাম, আক্রমণাত্মক খেলতে। যাতে ওমান পাল্টা ধাক্কা খায়। মাঠে সে দিন প্রথম মিনিট থেকে সেটাই করেছিল আমার ছেলেরা।
ম্যাচে যদিও ওমান জেতে ৩-০। কিন্তু প্রশংসিত হয়েছিল নেপালের আক্রমণাত্মক ফুটবল। নিজের কোচিং জীবনের এই কথা বলার কারণ একটাই। তা হল, ওমানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে ইগর স্তিমাচের দলের হারানোর কিছু ছিল না। তাই প্রথম থেকে একটু আক্রমণাত্মক হতেই পারত ভারত।
এই ওমানের বিরুদ্ধেই প্রথম পর্বের ম্যাচে গুয়াহাটিতে সুনীল ছেত্রীর গোলে এগিয়ে গিয়েও হেরেছিলাম আমরা। কিন্তু সেই হারের পরেও প্রশংসিত হয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে সুনীল, উদান্ত সিংহদের জেতার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা। দোহায় গিয়ে কাতার ম্যাচে রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়ে প্রতি-আক্রমণে দ্বিতীয়ার্ধে সেরা ফুটবল খেলেছিল ভারত। আমার প্রশ্ন, সেই ফুটবলটাই আমাদের ছেলেরা প্রথমার্ধে খেলছে না কেন? এই ম্যাচের আগে পাঁচ দলের গ্রুপ ‘ই’-তে ভারত ছিল চার নম্বরে। আমাদের কাছে হারানোর কিছুই ছিল না। তা হলে আমরা কেন শুরু থেকে আক্রমণাত্মক হলাম না?
আমার মতে, এর দু’টো কারণ। এক, চোটের কারণে সন্দেশ ঝিঙ্গনের দলে না থাকা। ওর অনুপস্থিতিতে রক্ষণকে আস্থা দিতে পারছে না আদিল খান, রাহুল ভেকেরা। দুই, কাতারের বিরুদ্ধে দর্শনীয় পারফরম্যান্সের পরে প্রত্যাশার চাপের মোকাবিলা করতে পারেনি ভারতীয়রা।
এ দিন ওমানের বিরুদ্ধে রাহুল ভেকে শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ছিল। ছয় মিনিটে মুহসেন আল ঘাসানিকে বক্সে ফাউল করে পেনাল্টি পাইয়ে দিল ওমানকে। ভারতের ভাগ্য ভাল, সেই পেনাল্টি ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেয় মুহসেনই। ৩৩ মিনিটে আদিল খান ও আনাসের মাঝখান দিয়ে বলটা ধরে গোল করে গেল ওই মুহসেন। ওই সময়ে দরকার ছিল বলে চোখ রাখা। মুহসেনকে কেউ ‘মার্কিং’ করেনি। মাঝমাঠ থেকে মহসিন জোহর আল খালদির বলটা বাড়ানোর সময়ে ভারতের লেফ্ট হাফ ট্যাকলও করেনি।
হারের ফলে কাতার বিশ্বকাপের স্বপ্ন আপাতত শেষ। এর পরে টানা তিন ম্যাচ জিতে যদি সুনীল ছেত্রীরা অলৌকিক পারফরম্যান্স দেখায়, তা হলে আলাদা প্রশ্ন। না হলে কাতার বিশ্বকাপে খেলার আশা আর দেখছি না।
ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, নিশু কুমার, রাহুল ভেকে (সার্থক গোলুই), আদিল খান (আনাস এডাথোডিকা), আশিক কুরুনিয়ান, প্রণয় হালদার (বিনীত রাই), ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, ফারুখ চৌধরি, উদান্ত সিংহ, সুনীল ছেত্রী, মনবীর সিংহ।
ওমান: আল হাবসি, আল মুসালাম্মি, আল ঘাফ্রি (আর্শাদ আল আলায়ি), আল হিদি, মহসিন আল ঘাসানি (আল মুকবলি), সাদ মুখাইনি, মুবারক, মহম্মদ আল আলায়ি, আল বুশাইদি, আল সাদি, আল আঘবরি।