লর্ডসে অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: টুইটার থেকে
টেস্ট অভিষেক, লর্ডস, শতরান- এই ক্রিকেটীয় শব্দগুলোর তাৎপর্য অপরিসীম। এর ত্র্যহস্পর্শ হলে সেই তাৎপর্য অন্য মাত্রা পায়। ১৯৯৬ সালের ২২ জুন সেই ত্র্যহস্পর্শই হয়েছিল। লর্ডসে অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই শতরানে ছিল দাপট, ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার, শাসন, সৌন্দর্য ২৫ বছর পরে এই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে অন্য তাৎপর্য। ওই একটি শতরান ২৫ বছর পরে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে দিয়েছে ১০০ বছর।
লর্ডসের মাঠে এক হার না মানা জেদের সূচনা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা শতরান যেন পাল্টে দিল ভারতীয় ক্রিকেটকে। একটা শতরান যেন বুঝিয়ে দিল বিদেশের মাটিতে ভারত শুধু খেলতে আসেনি, জিততে এসেছে। বিপক্ষের চোখে চোখ রাখতে শেখাল একটা শতরান। একের পর এক রেকর্ড, বিতর্ক, সাফল্য, ব্যর্থতা পার করে আজ তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান। শুধু সৌরভের সময়টুকু নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের ভিত তৈরির সূচনা যেন করেছিল ২৫ বছর আগে এক জেদি ছেলের লর্ডসের মাঠে অভিষেকে শতরান।
ভারতীয় ক্রিকেট যখন দুর্নীতির অভিযোগ দিশাহীন, তেমনই একটা সময় এলেন অধিনায়ক সৌরভ। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জয়, ঘরের মাঠের স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার ওপর রোলার চালানো, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জিতে লর্ডসের মাঠে জামা ওড়ানো, ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা, পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয়, নুইয়ে পড়া ভারতীয় ক্রিকেট তখন কলার তুলে ঘুরছে। সৌরভের হাত ধরে উঠে আসা যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বীরেন্দ্র সহবাগদের হাত ধরেই ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয় ভারতের। ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপের মতো সে বারেও প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন যুবরাজ। তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের জন্য আজও ধন্যবাদ জানান সৌরভকে। আজও প্রিয় 'দাদা'-র কথা বলেন হরভজন, সহবাগরা। ২০০৮ সালে অবসর নেওয়া দাদা যেন ভাইদের জন্য সামনের রাস্তাটা মসৃণ করে দিয়ে গিয়েছিলেন। আজও সেই সৌরভ লেগে রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজজয়ী বিরাট কোহলীর দলেও যেন সেই সুগন্ধই পাওয়া যায়। জয়কে যেন অভ্যাসে পরিণত করে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। কোহলীর অধিনায়কত্বে যে আগ্রাসী ভাব, তা যেন সৌরভের থেকেই পাওয়া। সেই সব কিছুর সূচনা হয়েছিল ২৫ বছর আগে লর্ডসের মাঠে। সেই ইতিহাস তৈরির কথাই যেন বলছে বিসিসিআই-এর টুইট।
ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জিতে লর্ডসের মাঠে জামা ওড়ানো। ছবি: টুইটার থেকে
মঙ্গলবার টুইট করে বিসিসিআই। তারা লেখে, ‘আজকের দিনে ১৯৯৬ সালে টেস্টে প্রথম শতরান করেন সৌরভ। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটে বল লাগিয়েছিলেন দ্রাবিড়। বাকিটা ইতিহাস।’ পরবর্তী সময় দুই জনেই ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে সৌরভ সামলাচ্ছেন বিসিসিআই-এর প্রধানের দায়িত্ব। দ্রাবিড় প্রশিক্ষক হিসেবে যাবেন শ্রীলঙ্কা সফরে।
২০ জুন, ১৯৯৬ সালে শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ড বনাম ভারত টেস্ট। অভিষেক ঘটেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাহুল দ্রাবিড়ের। টেস্টের তৃতীয় দিনে সৌরভের শতরান। ৩০১ বলে ১৩১ রানের ইনিংস খেলেন কলকাতার রাজপুত্র। ইনিংস সাজানো ছিল ২০টি চার দিয়ে। সেদিন তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন দ্রাবিড়। জুটিতে ৯৪ রান করেন ভারতীয় দলের দুই তারকা। ৯৫ রান করেছিলেন দ্রাবিড়। ৪২৯ রান করে ভারত। ড্র হয়ে যায় টেস্ট।
রবিবার সৌরভের অভিষেকের ২৫ বছর পূর্তিতে ফেসবুকে পোস্ট করেন স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘লর্ডসে সৌরভের অভিষেকের ২৫ বছর পার। ওর ক্রিকেট জীবনের শুরু। খুব কাছ থেকে গোটা কেরিয়ারটা দেখতে পেরে আমি গর্বিত।’