Paris Olympics 2024

অলিম্পিক্সের সেরা ৩ মুহূর্ত বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন, কোন তিন জনের পারফরম্যান্স শীর্ষে?

১১ অগস্ট, রবিবার শেষ হয়েছে অলিম্পিক্স। দশ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই এই অলিম্পিক্সের পর বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। অলিম্পিক্সের সেরা তিনটি মুহূর্ত বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ১১:২০
Share:

(বাঁদিক থেকে) আর্মান্দো ডুপ্লান্টিস, সিমোন বাইলস এবং স্টিফেন কারি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

১১ অগস্ট, রবিবার শেষ হয়েছে অলিম্পিক্স। ৩২টি খেলায় ৩২৯টি ইভেন্ট ছিল। গত তিন বারের মতোই পদক তালিকায় সবার উপরে শেষ করেছে আমেরিকা। তবে কড়া টক্কর দিয়েছে চিন। চমকে দিয়েছে আয়োজক দেশ ফ্রান্স। দেশের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা প্রদর্শন করেছে অস্ট্রেলিয়া। দশ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই এই অলিম্পিক্সের পর বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। প্রচুর স্মরণীয় মুহূর্ত এবং পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছে অলিম্পিক্সে। তৈরি হয়েছে বিশ্বরেকর্ড। তার মধ্যে থেকেই সেরা তিনটি মুহূর্ত বেছে নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

পোল ভল্টে ডুপ্লান্টিসের বিশ্বরেকর্ড

অলিম্পিক্সে পোল ভল্টে তিনি যে সোনা জিতবেন, তা নিয়ে কারওরই সন্দেহ ছিল না। প্রশ্ন ছিল, আর্মান্দো ডুপ্লান্টিস কি নতুন কোনও বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারবেন? সুইডেনের ক্রীড়াবিদ সেই কাজ করেছেন। নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। এক বার-দু’বার নয়, টানা ন’বার নিজের বিশ্বরেকর্ড ভাঙলেন তিনি। জল্পনা চলছে, সের্গেই বুবকাকে টপকে পোল ভল্টে ডুপ্লান্টিসই কি সর্বকালের সেরা?

Advertisement

প্যারিসের স্তাদ দ্য ফ্রাঁস স্টেডিয়াম গত ৫ অগস্ট কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। বেশির ভাগই এসেছিলেন ছেলেদের ১০০ মিটার ফাইনাল দেখতে। নোয়া লাইলস না কিশানে থমসন, কে বিশ্বের দ্রুততম মানব হন, তা চোখের সামনে থেকে দেখার আগ্রহ ছিল সকলেরই। যে কোনও অলিম্পিক্সের মতো এটিই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুচর্চিত ইভেন্ট। কিন্তু সেই রাতেই বাজিমাত করেছিলেন ডুপ্লান্টিস, সমর্থকদের কাছে যাঁর আদরের নাম ‘মোন্ডো’।

দৌড় শুরু করার আগে ডান কাঁধে পোল রেখে গভীর নিঃশ্বাস নিয়েছিলেন ডুপ্লান্টিস। তত ক্ষণে জানা হয়ে গিয়েছে, নিজের জন্য ৬.২৫ মিটার উচ্চতা রেখেছেন। অতীতে কোনও দিন কেউ তার ধারেকাছে যাননি। ডুপ্লান্টিসের নিজের রেকর্ডের থেকেও যা এক সেন্টিমিটার বেশি ছিল। দৌড় শুরু করে, লাফিয়ে পোলের শেষ প্রান্ত ছুয়ে ডুপ্লান্টিসের শরীর যখন ‘হাইট বার’-এর ও পারে পড়ছে, তখনই উল্লাস শুরু করে দিয়েছিলেন গ্যালারির একাংশে থাকা হলুদ জার্সিধারী সমর্থকেরা। রাবার প্যাডের উপর পড়েই সেই দিকে ছুটতে শুরু করেছিলেন ডুপ্লান্টিস। প্রথমেই জড়িয়ে ধরেছিলেন বান্ধবীকে। স্কোরবোর্ডে তখন জ্বলজ্বল করছে, ‘ডুপ্লান্টিস ক্রিয়েট্‌স নিউ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’!

আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে বাইলসের সোনা

রিয়োর সাফল্যের পর টোকিয়োর ব্যর্থতা। নিজেকে সর্বকালের সেরা প্রমাণ করতে প্যারিসে গিয়েছিলেন সিমোন বাইলস। সোনার হ্যাটট্রিক করে সেই কাজ অনেকটাই করে ফেলেছেন। অলিম্পিক্সে বাইলসের প্রশ্নাতীত সাফল্য তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অন্য উচ্চতায়। সাধারণত জিমন্যাস্টিক্সে কেউ কেউ যে কোনও একটা ইভেন্টে সেরা হন। কিন্তু বাইলস প্রায় সবেতেই সেরা। ব্যালান্স বিমে কোনও পদক পাননি। বাকি চারটি ইভেন্টে তিনটি সোনা, একটি রুপো।

৩০ জুলাই দলগত বিভাগে প্রথম সোনা জিতেছিলেন বাইলস। চারটি রোটেশনেই নেমেছিলেন। শেষ করেছিলেন তাঁর পছন্দের ফ্লোর ইভেন্ট দিয়ে। গোটা ইভেন্টে এক বারও দেখে মনে হয়নি চাপে ছিল আমেরিকা। হাসতে হাসতে সোনা নিয়ে গিয়েছিল তারা। খেলা শেষে সতীর্থদের জড়িয়ে ধরেছিলেন বাইলস।

দ্বিতীয় সোনা মেয়েদের অলরাউন্ড ইভেন্টে। বাইলস শুরু করেছিলেন ভল্ট দিয়ে। মেয়েদের ব্যক্তিগত এই ইভেন্টে আছে চারটি রাউন্ড, ভল্ট, আনইভেন বারস, ব্যালান্স বিম এবং ফ্লোর এক্সারসাইজ। বাইলস শুরু করেছিলেন ভল্ট দিয়ে। সেখানে তিনি মোট ১৫.৭৬৬ স্কোর করেছিলেন। আনইভেনে বারসে বাইলস স্কোর করেছিলেন ১৩.৭৩৩। ব্যালান্স বিমে ১৪.৪৬৬ স্কোর করেছিলেন বাইলস। তিনটি রাউন্ড শেষে শীর্ষে ছিলেন তিনি। ফ্লোর এক্সারসাইজের পর সোনা নিশ্চিত করেছিলেন বাইলস।

তৃতীয় সোনা ভল্টে। ফাইনালে চার নম্বর প্রতিযোগী ছিলেন বাইলস। তাঁর আগে যে তিন জন ছিলেন তাঁরা সে রকম ভাল করতে পারেননি। ফলে বাইলসের আত্মবিশ্বাস চরমে ছিল। প্রথম ভল্টে তিনি ১৫.৭০০ স্কোর করেছিলেন। সেখানেই সোনা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন তিনি। পরের ভল্টে ১৪.৯০০ স্কোর করেছিলেন বাইলস। তাঁর গড় স্কোর হয়েছিল ১৫.৩০০। বাকিদের থেকে তা ছিল অনেকটাই বেশি।

পুরুষদের বাস্কেটবলে স্টিফেন কারির কেরামতি

আমেরিকা না ফ্রান্স, বাস্কেটবলের বিশ্বে এখন সেরা কে তা নিয়ে চর্চা রয়েছে বহু দিন ধরেই। তাই এই দুই দেশ যখন অলিম্পিক্স বাস্কেটবলের ফাইনালে উঠেছিল, তখন কেউই অবাক হননি। জল্পনা চলছিল, অলিম্পিক্স বাস্কেটবলে আমেরিকার একাধিপত্যে কি থাবা বসাতে পারবে ভিক্টর ওয়েমবানিয়ামার ফ্রান্স? না কি ১৯৯২-এর ‘ড্রিম টিম’-এর সঙ্গে তুলনা চলতে থাকা আমেরিকা নিজেদের দাপট ধরে রাখতে পারবে?

কে ছিলেন না আমেরিকা দলে? লেব্রন জেমস, কেভিন ডুরান্ট, জেসন টাটুম, জোয়েল এমব্লিডরা। সবাইকে ছাপিয়ে যে স্টিফেন কারি নায়ক হয়ে যাবেন তা কে জানত। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল আমেরিকার। ক্রমশই বাড়ছিল তাদের লিড। তৃতীয় কোয়ার্টারের শুরুতে ব্যবধান বেড়ে হয়েছিল ১৪ পয়েন্টের। ভিক্টর এবং গুয়েরশন ইয়াবুশেলের সৌজন্যে ব্যবধান এর বেশি হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে খেলা আরও জমে ওঠে। শেষ মিনিটে মরণপণ লড়াই করে ফ্রান্স। এক সময় ৭২-৬৬ স্কোর হয়ে গিয়েছিল।

বার্সি অ্যারেনায় ফরাসি সমর্থকদের চিৎকারে তখন কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। আমেরিকা আবার এগিয়ে যায়। তিন মিনিট বাকি থাকতে মাত্র তিন পয়েন্ট পিছনে ছিল ফ্রান্স। কে জানত কারি গোটা খেলাই পাল্টে দেবেন। মাত্র ১৩২ সেকেন্ডের মধ্যে চার বার তিন পয়েন্ট স্কোর করেন। চোখের পলকে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে যায় আমেরিকা। শেষ পর্যন্ত জেতে ৯৬-৮৭ পয়েন্টে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement