Neeraj Chopra

Javelin Throw: অলিম্পিক্সে সোনা দিয়েছে জ্যাভলিন, ১২৫ বছর ধরে ভারতকে জ্যাভলিন দেয় কলকাতার ‘অলিম্পিয়া’

নীরজের হাতে যে ধাতব জ্যাভলিন দেখা গিয়েছে তা অবশ্য এখানে পাওয়া যায় না। কলকাতার অলিম্পিয়ার খ্যাতি বাঁশের তৈরি জ্যাভলিনের জন্যই।

Advertisement

পিনাকপাণি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২১ ১১:২২
Share:

কলকাতার বৌবাজারের এই দোকানের বয়স ১২৫ বছর।

১৮৯৬। বছরটা গোটা পৃথিবীর কাছেই স্মরণীয়। সে বছরই আথেন্সে আধুনিক অলিম্পিক্সের সূচনা হয়। আর সেই একই বছরে আথেন্স থেকে প্রায় ৬ হাজার ৩০৯ কিলোমিটার দূরে কলকাতা শহরে শুরু হয়েছিল ‘অলিম্পিয়া স্পোর্টিং হাউস’-এর পথ চলা। বৌবাজার এলাকার এই ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানের সঙ্গে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক্সেরও যেন নাড়ির যোগ রয়েছে। এই প্রথম বার অ্যাথলেটিক্সে সোনা পেয়েছে ভারত। জ্যাভলিন দিয়ে সোনায় লক্ষ্যভেদ করেছেন নীরজ চোপড়া। আর ভারতে জ্যাভলিনের অন্যতম প্রাচীন প্রস্তুতকারী সংস্থা কলকাতার এই‘অলিম্পিয়া’।

Advertisement

১ নম্বর নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটের এই দোকানটা দেখলেই বোঝা যায় অনেক ইতিহাস জমে আছে কোণে কোণে। এখন ব্যবসা দেখেন শেখরচন্দ্র বসু। তাঁর ছেলে ঋদ্ধিশেখরও বাবার সঙ্গে জ্যাভলিন তৈরি থেকে বিপণন— গোটা বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত। সোনাজয়ী নীরজের হাতে যে ধাতব জ্যাভলিন দেখা গিয়েছে তা অবশ্য এখানে পাওয়া যায় না। কলকাতার ‘অলিম্পিয়া’র নাম বাঁশের জ্যাভলিনের জন্যই। ঋদ্ধির কথায়, ‘‘একটা সময় পর্যন্ত ভারতে জ্যাভলিন মানেই ছিল অলিম্পিয়া। বাম্বু জ্যাভলিন বানানো এবং বিক্রির জন্য গোটা দেশেই আমাদের সংস্থার নাম সবার আগে উচ্চারিত হত। কিন্তু পরবর্তী কালে চিন এই বাজার ধরে নেয়। আমরাও শুধু জ্যাভলিনে আটকে না থেকে অন্য ক্রীড়া সামগ্রী তৈরি ও বিক্রিতে গুরুত্ব বাড়াতে থাকি। তবে এখনও বাঁশের জ্যাভলিন পেতে হলে আমাদের কাছেই আসতে হবে।’’

ব্যবসার শুরুটা অবশ্য জ্যাভলিন নয়, শুরু হয় মাছ ধরার ছিপ তৈরি দিয়ে। শুরুর দিনের কাহিনি শোনালেন শেখরচন্দ্র। এই ব্যবসার শুরুটা শেখরচন্দ্রের বাবা বিভূতিভূষণ বসুর হাতে। তবে, কলকাতায় জ্যাভলিন তৈরির ইতিহাস বলতে গেলে আরও একজনের কথা বলতে হবে। শেখরচন্দ্র বলেন, ‘‘আমার দাদু খুব কম বয়সে মারা যান। বাবাকে জ্যাভলিনের ব্যবসায় নিয়ে আসেন তাঁর এক সম্পর্কিত কাকা সরোজ ঘোষ। আমরা ঘোষদাদু ডাকতাম। বাবা, শুধু জ্যাভলিন নয়, বাঁশের অন্য সামগ্রী বানানোর জন্য গোটা দেশের ‘বাম্বু ম্যাপ’ তৈরি করেন। আসলে বাঁশ অনেক রকমের। জ্যাভলিনের বাঁশকে ‘বার্মা বাম্বু’ বলা হয়। বাবা এক সময়ে বার্মায় থাকতেন। ওখানেই চাষ এবং উৎপাদন হত। তখন অলিম্পিয়ার জ্যাভলিন রফতানি হত ইউরোপের অনেক দেশে।’’

Advertisement

অলিম্পিয়ার বাম্বু জ্যাভলিন।

শুধু জ্যাভলিন নয়, তিরন্দাজির বাঁশের সরঞ্জামও বানায় অলিম্পিয়া। শেখরচন্দ্রের কথায় ‘‘কোন বাঁশ দিয়ে জ্যাভলিন হবে আর কোনটা দিয়ে তির বা ধনুক, তা আলাদা আলাদা। জ্যাভলিনের জন্য যে বাঁশ তার নির্দিষ্ট মাপ, নির্দিষ্ট ওজন হতে হবে। এই বাঁশের উপরের অংশ আর আর নীচের অংশের পরিধি আলাদা। ধাতু বা সিন্থেটিকের ক্ষেত্রে আলাদা করে পরিধি ছোট বা বড় করে নেওয়া যায়। কিন্তু বাঁশের জ্যাভলিনে এটা প্রাকৃতিক ভাবেই হয়।’’ দেশের বিভিন্ন জায়গা এবং মায়ানমার থেকে জ্যাভলিনের বাঁশ আসে কলকাতায়। বারুইপুরে সেই বাঁশকে নির্দিষ্ট তামপাত্রার গরম জলে পোড়ানো (স্মোকিং) হয়। এর পরে বর্শা (জ্যাভলিন)-র চেহারা পায় বাঁশ।

‘অলিম্পিয়া’য় পাওয়া যায় দু’রকমের জ্যাভলিন। ছেলেদের জন্য ৮০০ গ্রাম আর মেয়েদের জন্য ৬০০ গ্রাম ওজনের। শেখরচন্দ্র বললেন, ‘‘অভ্যাসের জন্য আমাদের তৈরি জ্যাভলিনের তুলনাই নেই। ধাতব জ্যাভলিনের থেকে এগুলো টেকেও বেশি দিন। আর দাম তো অনেক কম। অন্য সংস্থার সাধারণ একটা জ্যাভলিন ১৫ হাজার টাকার নীচে পাবেন না। কিন্তু আমরা এখন ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করি।’’

নীরজের জ্যাভলিন সোনা এনে দেওয়ার পরে কি ভারতে নতুন করে চাহিদা তৈরি হবে? ততটা আশাবাদী নন শেখরচন্দ্র। বললেন, ‘‘ভারতে অ্যাথলিটের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলা যায়। আর জ্যাভলিন থ্রো খুবই কঠিন খেলা। এই সব হার্ড গেমে সাফল্য সহজে আসে না। আমরা সোনা জিতেছি এটা ঠিক, কিন্তু আমার তো এখনও অলৌকিক কিছু ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।’’ শেখরচন্দ্রের ছেলে ঋদ্ধিশেখর অবশ্য আশাবাদী। তিনি বললেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে ব্যবসা করি। বিক্রি বাড়বে কিনা এখনই বলতে পারব না, তবে অলিম্পিক্সে নীরজ সোনা জেতার পরে ট্রেড এনকোয়্যারি বেড়েছে। আগে সপ্তাহে দু-তিনটে খোঁজ আসত। গত ক’দিনে সেটা ৫০-এর কাছাকাছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement