শনিবার ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে এসে নির্বাচক-প্রধান বলে গেলেন, ‘‘রোহিত শর্মা আমাদের দেশের এক নম্বর ক্রিকেটার।’’
চেতন শর্মা ফের সাংবাদিকদের সামনে আবির্ভূত হলেন। এবং হয়েই বিতর্কিত কিছু কথাবার্তা বলে মিলিয়ে গেলেন।
যেমন বিরাট কোহলিকে যতই ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা মুখ ভাবুক বিশ্ব, চেতনের অন্য কিছু ভাবনা রয়েছে। শনিবার ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে এসে নির্বাচক-প্রধান বলে গেলেন, ‘‘রোহিত শর্মা আমাদের দেশের এক নম্বর ক্রিকেটার। তিন ধরনের ক্রিকেটই ও খেলে।’’ এখানেই থামেননি চেতন। যোগ করলেন, ‘‘এত বড় এক জন ক্রিকেটার যখন অধিনায়ক হয়, নির্বাচক কমিটি তো চাইবেই, ওর অধীনে ভবিষ্যৎ অধিনায়ক গড়ে তুলতে।’’
কী সেই ভবিষ্যতের নকশা, তা-ও জানাতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, কে এল রাহুল, যশপ্রীত বুমরা, ঋষভ পন্থ— তিন জনকেই নাকি ভাবনায় রাখা হচ্ছে ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে। শুনে কারও কারও মনে পড়ে যাচ্ছে স্টিভ ওয়দের প্রাক্তন কোচ এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সে ‘বহু অধিনায়ক’-এর তত্ত্ব তুলে ধরা জন বুকাননকে। সেই সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ই ছিলেন কেকেআরের অধিনায়ক। বুকানন প্রস্তাব দেন, একাধিক নেতা তৈরি রাখা দরকার। একা সৌরভের হাতে নয়, ম্যাচ অনুযায়ী নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দিতে চান ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। তখন আজগুবি বলে অনেকে উড়িয়ে দিয়েছিল। সৌরভ নিজেও বলেছিলেন, কিছুই মাথামুণ্ডু বুঝে উঠতে পারছেন না। এখন সৌরভের বোর্ডই অনেকটা সেই পথ অনুসরণ করতে চাইছে।
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা বুঝুন না বুঝুন, অধিনায়কত্বের এই মেলা অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন কে এল রাহুল। ইতিমধ্যেই সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন বুমরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে সহ-অধিনায়ক হয়েছেন ঋষভ পন্থ। কোহলিকে ওয়ান ডে নেতৃত্ব থেকে সরানোর সময় স্বয়ং সৌরভ বলেছিলেন, ‘‘খুব বেশি নেতৃত্ব-মুখ থাকা দলের পক্ষে ভাল নয়।’’ সব মিলিয়ে বেশ বিভ্রান্ত বোর্ড এবং দিশাহীন নির্বাচন নীতি।
ক্রিকেটবিশ্বে কিং কোহলির আবেদন ছাড়াও পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে রোহিতকে ‘ভারতের সেরা ক্রিকেটার’ আখ্যা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে তর্ক উঠতে বাধ্য। সাদা বলে নিঃসন্দেহে তিনি (তাতেও কোহলির চেয়ে গড়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে) অন্যতম সেরা কিন্তু প্রশ্ন থেকে গিয়েছে টেস্ট ব্যাটিং নিয়ে। টেস্টে রোহিতের ব্যাটিং গড় ৪৬.৮৭, কোহলির ৫০.৩০। ওয়ান ডে, যা কি না রোহিতের শক্তির জায়গা, তাতে তাঁর ব্যাটি গড় ৪৮.৬০। কোহলির অবিশ্বাস্য গড় ৫৮.০৭। টি-টোয়েন্টিতে রোহিতের গড় ৩৩.২২, কোহলির ৫১.৫০। কোহলি একমাত্র ব্যাটসম্যান, যাঁর তিন ধরনের ক্রিকেটেই পঞ্চাশের উপরে ব্যাটিং গড়। টেস্টে কোহলির ২৭টি সেঞ্চুরি, রোহিতের সেখানে আট বছরের উপরে খেলে ৮টি।
বিদেশের মাঠে রোহিতের টেস্ট সেঞ্চুরি একটি, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ওভালে। বিরাটের সেখানে ১৪টি সেঞ্চুরি রয়েছে বিদেশে টেস্টে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকায় চোটের কারণে খেলতে দেখা যায়নি রোহিতকে। যে সব জায়গায় দুর্ধর্ষ সব ইনিংস রয়েছে কোহলির। সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে কোহলির রয়েছে ৭০টি সেঞ্চুরি। তার আগে আছেন শুধু সচিন তেন্ডুলকর (১০০ সেঞ্চুরি) এবং রিকি পন্টিং (৭১ সেঞ্চুরি)। রোহিতের সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে রয়েছে ৪১ সেঞ্চুরি। ইউনিস খান, চন্দ্রপলদের সমান।
বিশ্ব ক্রিকেটেও যখন সেরা ব্যাটসম্যান কে নিয়ে তর্ক হয় এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে স্টিভ স্মিথ, নিউজ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন এবং ইংল্যান্ডের জো রুটের সঙ্গে তুলনা টানা হয়, তখন ভারত থেকে কোহলির নামই নেওয়া হয়, অন্য কারও নয়। তার পরেও চেতনের ‘রোহিত ভারতের এক নম্বর ক্রিকেটার’ ঘোষণার মধ্যে কি বলার চেষ্টা যে, কোহলিকে এক নম্বর ভাবছি না? প্রশ্ন উঠতে বাধ্য বিশেষ করে যখন নির্বাচক কমিটির প্রধান এর আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসে প্রাক্তন অধিনায়ককে আক্রমণ করে গিয়েছেন।
চার জন ক্রিকেটারকে বলে দেওয়া যে, তোমাদের কথা আর ভাবা হবে না, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। চেতনের দাবি, ‘‘আমরা ওদের বলেছি, এই দু’টো টেস্ট ম্যাচের জন্য তোমাদের কথা ভাবছি না। অন্যদের দেখতে চাই। রঞ্জি খেলো, আমরা তোমাদের কথা ভাবব। একটা সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, যে সময়টায় অন্যদের দেখে নিতে চাইছি।’’ ঋদ্ধিমান সাহা আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এমন কিছুই তাঁকে বলা হয়নি। বরং তিনি যখন জিজ্ঞেস করেন, ভবিষ্যতের সিরিজ়ে তাঁকে নেওয়া হবে কি না, তখন চেতন কিছুই নিশ্চিত করে বলেননি।
যা পরিস্থিতি, আবার সেই ‘কে সত্যি বলছে’ প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল!