ক্যাসপার রুড এবং নোভাক জোকোভিচ। — ফাইল চিত্র
কার্লোস আলকারাজকে সেমিফাইনালে হারানোর পর অনেকেই বলে দিচ্ছেন, ফাইনালের আগেই ‘ফাইনাল’ জিতে ফেলেছেন নোভাক জোকোভিচ। কিন্তু তাই বলে ফাইনালে লড়াই একদম সহজ হয়ে যাবে, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। নরওয়ের ক্যাসপার রুডের বিরুদ্ধে রবিবার খেলতে হবে জোকোভিচকে। গত বারের মতো এ বারও ফাইনালে উঠেছেন রুড।
দ্বিতীয় বাছাই ড্যানিল মেদভেদেভ আগেই ছিটকে গিয়েছিলেন। প্রথম বাছাই আলকারাজও বিদায় নেন সেমিফাইনালে। ফরাসি ওপেনের ফাইনালে তাই দেখা যাবে তৃতীয় বনাম চতুর্থ বাছাইয়ের লড়াই। এ বারও কোনও অখ্যাত খেলোয়াড় এসে চমক দেখাতে পারলেন না। জেরেভ কত দিন আর ‘প্রতিভাবান’ হয়ে থাকবেন সেই নিয়ে জল্পনা চলছে। ফলে সুরকির কোর্টে এই মুহূর্তে যিনি অন্যতম ধারাবাহিক খেলোয়াড়, সেই রুডই উঠেছেন ফাইনালে।
নিঃসন্দেহে ফাইনালে এগিয়ে থেকেই নামছেন জোকোভিচ। গত দু’সপ্তাহে তিনি বেশ ভাল ছন্দে রয়েছেন। সুরকির কোর্টে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজনও তিনি। মানসিক ভাবেও ভাল জায়গায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খেলা যত গড়ায় ততই নাকি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন জোকোভিচ। আলকারাজের বিরুদ্ধে ম্যাচে সেটা দেখা গিয়েছে। তবে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন রুড। তাঁর খেলার অন্যতম অস্ত্র টপস্পিন ফোরহ্যান্ড। পয়েন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগান। জোকোভিচের বিরুদ্ধে তা দেখা যেতে পারে।
জোকোভিচের শক্তি
১) সার্বিয়ার জোকোভিচের প্রধান শক্তি বেস লাইন থেকে খেলা। খুব বেশি নেটে যান না তিনি। বেস লাইন থেকে লম্বা র্যালি খেলেন। প্রতিপক্ষকে দৌড় করান।
২) জোকোভিচের সার্ভিস বেশ জোরালো। রুড সমস্যায় পড়তে পারেন।
৩) এ বারের ফরাসি ওপেনে মাঝেমধ্যে নেটের কাছে যেতে দেখা যাচ্ছে জোকারকে। হার্ড কোর্ট বা ঘাসের কোর্টে যেটা সচরাচর খেলেন না, সেই ড্রপ শট খেলতে দেখা যাচ্ছে জোকোভিচকে।
রুডের শক্তি
১) সুরকির কোর্টে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে সুরকির কোর্টে ভাল খেলেছেন তিনি। জোকোভিচের বিরুদ্ধে তাঁর খেলার বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগতে পারে।
২) শক্তিশালী ফোরহ্যান্ড মারায় দক্ষ। কোর্টের দু’প্রান্ত থেকেই ‘উইনার’ মারতে পারেন। খেলার মধ্যেও আগ্রাসী ব্যাপার রয়েছে।
৩) রুড তরুণ খেলোয়াড়। তাই খেলার মধ্যে একটা ভয়ডরহীন ব্যাপার রয়েছে। শারীরিক ভাবেও বেশি শক্তিশালী। প্রত্যাশার চাপ মাথার উপরে নেই।
জোকোভিচের দুর্বলতা
১) ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের বিশেষ কিছু দুর্বলতা নেই। তবে ৩৬ বছর বয়স হওয়ায় খেলা পাঁচ সেটে গড়ালে শারীরিক ভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন তিনি।
২) নেট লাইনে যাওয়ার প্রবণতা কম জোকোভিচের। কিন্তু ড্রপ শট মূলত নেট লাইনের কাছেই পড়ে। ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন জোকোভিচ।
রুডের দুর্বলতা
১) গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা। গত বার নাদালের কাছে সরাসরি সেটে হেরে যান। ফাইনালে ম্যাচ বের করার মতো অভিজ্ঞতা নেই। জোকোভিচ অভিজ্ঞতার দিক থেকে নাদালের সমকক্ষ।
২) রুডের আগ্রাসী কৌশল বিপদে পড়তে তাঁদের ক্ষেত্রে, যাঁরা দরকারে রক্ষণাত্মক খেলতে পারেন। জোকোভিচ সেই গোত্রেই পড়েন। যদি জোকোভিচ রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করেন, তা হলে রুডের কাছে সমস্যার কারণ থাকছে।
ফাইনাল নিয়ে জোকোভিচ
সেমিফাইনালে আলকারাজকে হারানোর পর জোকোভিচ বলেছেন, “চাপ বরাবরই আমার কাঁধে থাকে। তাই ও সব নিয়ে ভাবছি না। চাপ আমার জীবনেরই একটা অংশ। বরং মনে করি চাপ থাকা ভাল। এতে আলাদা করে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। আশা করি সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে রবিবার নামতে পারব। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বলেছিলাম, সুরকির কোর্টে রোলাঁ গারোজই সেরা। ফাইনালে আসার ব্যাপারে যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার তা নিয়েছি। রবিবার নিজের সেরা টেনিস খেলব। ইতিহাস নিয়ে ভাবছি না। আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার জন্যে তৈরি।”
ফাইনাল নিয়ে রুড
আলেকজান্ডার জেরেভকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দেওয়ার পরে রুড বলেন, “রোলাঁ গারোজে আসার আগে কখনওই ভাবিনি আমি সেরা হিসাবে নামছি। এক একটা ম্যাচ ধরে এগিয়েছি। ফাইনালে ফিরতে পেরে নিঃসন্দেহে ভাল লাগছে। গত বারের মতো ফাইনালে ওঠার ব্যাপারটা মাথায় ছিল আগে থেকেই।”
মুখোমুখি লড়াই
রুডের বিরুদ্ধে ৪-০ এগিয়ে জোকোভিচ। শেষ বার দু’জনে মুখোমুখি হয়েছিলেন ২০২২ এটিপি ফাইনালসে। জোকোভিচ জেতেন ৭-৫, ৬-৩।
কখন খেলা, কোথায় দেখা যাবে
রবিবার খেলতে নামবেন জোকোভিচ ও আলকারাজ। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে খেলা শুরু হবে। খেলা দেখা যাবে সোনি টেন-এর বিভিন্ন চ্যানেলে।