ক্যাসপার রুড। ছবি: টুইটার
সাত বছর আগে এক ভারতীয়ের কাছে জুনিয়র উইম্বলডনের ডাবলস সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন। সেই ক্যাসপার রুড ফরাসি ওপেনের ফাইনাল খেলতে নামছেন রবিবার। যিনি হারিয়েছিলেন, সেই সুমিত নাগাল পেশাদার টেনিসে সাফল্য পাননি। রুড খেলবেন রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে। যাঁকে আদর্শ হিসেবে সামনে রেখেই তিনি বড় হয়েছেন।
বাবা ক্রিস্টিয়ান রুডের কাছে টেনিসে হাতেখড়ি নরওয়ের রুডের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে ওঠা বাবা কয়েক দিন আগে পর্যন্ত দেশের সেরা টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গত সপ্তাহেই বাবাকে টপকে গিয়েছিলেন ছেলে। জনপ্রিয়তায় সিনিয়র রুড অবশ্য দেশে এখনও অনেকটাই এগিয়ে। রবিবারের ফাইনালে নিজের আদর্শকে হারাতে পারলে এ ক্ষেত্রেও জুনিয়র রুড ছাপিয়ে যেতে পারেন বাবাকে। সম্ভাবনা ভালই। কারণ, রুডের টেনিস পরিণত হয়েছে নাদালের অ্যাকাডেমিতেই। সরাসরি নাদালের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ অবশ্য হয়নি তাঁর।
নরওয়ের কোনও টেনিস খেলোয়াড় কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলেননি। রুডই প্রথম। সেমিফাইনালে প্রথম সেটে হারার পরেও মারিন চিলিচকে হারিয়েছেন ক্রমতালিকায় আট নম্বরে থাকা ২৩ বছরের তরুণ। ২০১৪ সালের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে ১৬টি এস সার্ভিস করেছেন। উইনার মেরেছেন ৪১টি। রুড টেনিস সার্কিটে নাদালের মতোই ক্লে-কোর্টের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। লাল মাটির কোর্টেই তাঁর পরিসংখ্যান সবথেকে ভাল।
ফাইনালে ২১টি গ্র্যান্ড স্লাম খেতাবের মালিকের বিরুদ্ধে খেলতে হবে। রুড কি স্নায়ুর চাপে ভুগছেন? না। রুডের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া।তবে সবার আগে নেটের অন্য দিকে থাকা নাদালকে প্রতিটি মুহূর্তে জরিপ করতে চান। সেমিফাইনালে জেতার পর রুড বলেছেন, ‘‘ভাল শুরু করতে পারিনি। তাও ম্যাচটা আমার কাছে বিশেষ হয়ে থাকবে। এ বার সামনে নাদাল। সুরকির কোর্টে ঠিক কী ভাবে খেলতে হয়, তার সেরা উদাহরণ নাদাল। কখনও হাল ছাড়ে না। কখনও অভিযোগ করে না। ওকে দেখেই তো এগিয়েছি টেনিস জীবনে।’’
রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচের বিরুদ্ধে খেললেও প্রথম বার সামনে নাদাল। পারবেন স্প্যানিয়ার্ডের ১৪তম ফরাসি ওপেন জয়ের সামনে দেওয়াল তুলতে। আত্মবিশ্বাসী রুড বলেছেন, ‘‘জানি, ম্যাচটা ভীষণ কঠিন হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে সঠিক সময়েই নাদালের মুখোমুখি হচ্ছি। নাদালের বিরুদ্ধে খেলার জন্য গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালের থেকে ভাল মঞ্চ আর কী হতে পারে ! মনে হয় নিজের অ্যাকাডেমির ছাত্রের বিরুদ্ধে খেলতে নাদালেরও ভাল লাগবে।’’
শনিবার ৩৬ বছর পূর্ণ করা নাদাল খেলবেন ৩০তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল। ২৩-এর রুড প্রথম। ২০১৫-র শেষে পেশাদার টেনিসে পা দেওয়ার আগে জুনিয়র পর্যায় রুডের সেরা সাফল্য ছিল ২০১৫ সালের ফরাসি ওপেন এবং ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠা। তত দিনে নাদালের ন’বার ফরাসি ওপেন-সহ গোল্ডেন ক্যারিয়ার স্ল্যাম জেতা হয়ে গিয়েছে। এই মরসুমেই মায়ামি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে আলেকজান্ডার জেরেভকে হারিয়েছেন রুড। সেই জেরেভ যিনি চোট পাওয়ার আগে পর্যন্ত সেমিফাইনালে নাদালের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন।
ফরাসি ওপেনে পুরুষদের ফাইনালে লড়াই তাই গুরু-শিষ্যের। নবীন-প্রবীণের। অভিজ্ঞতা-তারুণ্যের। নাদালকে লড়তে হবে নিজের অ্যাকাডেমিতে গোকুলে বেড়ে ওঠা অন্যতম সেরা ছাত্রের বিরুদ্ধে। রুডের সামনে গুরুদক্ষিণা দেওয়ার সুযোগ। পারবেন একলব্য রুড? উত্তর লুকিয়ে রবিবারের ফিলিপ শাতিয়ের লাল মাটিতে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।