Ravi Shastri

Ravi Shastri: ১৯৮৫-তে জেতা রবি শাস্ত্রীর সেই গাড়ি ৩৭ বছর পর দেখলেন মেয়ে

১৯৮৫ সালে বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপের সেরা ক্রিকেটার হয়ে আউডি গাড়ি জিতেছিলেন শাস্ত্রী। সেই প্রসঙ্গে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন শাস্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ ১৩:২৪
Share:

সেই গাড়ির সঙ্গে শাস্ত্রী। ছবি টুইটার

প্রায় ৩৭ বছর কেটে গিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার কথা এখনও ভুলতে পারেননি রবি শাস্ত্রী। ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপে ‘চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স’ হয়ে আউডি গাড়ি জিতেছিলেন। মেলবোর্নে প্রথম বার চালানোর অভিজ্ঞতা, তার পর ভারতে নিয়ে আসা এবং মেয়ের প্রথম বার সেটা দেখা— গাড়ি নিয়ে নিজের বিভিন্ন আবেগের কথা লিখেছেন ভারতের প্রাক্তন কোচ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে পাকিস্তানকে হারিয়ে তখন সদ্য চালু হওয়া রঙিন জার্সির ক্রিকেটে বিজয়ী হয়েছিল ভারত। প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হয়ে গাড়িটি জিতেছিলেন শাস্ত্রী।

Advertisement

সেই ম্যাচের কথা বলতে গিয়ে শাস্ত্রী লিখেছেন, “ফাইনাল জিততে তখন আমাদের ১৫-২০ রান বাকি। জাভেদ মিয়াঁদাদ কী ফিল্ডিং সাজিয়েছে, সেটা দেখছিলাম। ও নিজে মিড-উইকেটে দাঁড়িয়েছিল। ভাবল, আমি বোধ হয় গাড়িটা দেখছি। কটাক্ষ করে বলল, ‘বার বার ও দিকে তাকিয়ে কী দেখছ? গাড়ির দিকে তাকাচ্ছ কেন? ওটা তুমি জিততে পারবে না।’ এর পর আমি গাড়ির দিকে এমন করে তাকালাম, যাতে ও দেখতে পায়। বললাম, ‘ওটা কিন্তু আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।’ গাড়ির চাবি পাওয়ার আগে এ ভাবেই কিছুটা মজা শুরু হয়ে গিয়েছিল।”

গাড়ি শাস্ত্রী জিতেছিলেন, কিন্তু বেশি উন্মাদনা ছিল সতীর্থদের। শাস্ত্রী লিখেছেন, সুনীল গাওস্কর আগেই সামনের আসনে বসে পড়েছিলেন। কপিল দেব ছিলেন পিছনে। মোহিন্দর অমরনাথ বনেটে। সদানন্দ বিশ্বনাথ গাড়ির ছাদে। বাকিরাও ওঠার চেষ্টা করছিলেন। চালকের আসনে গিয়ে বসেছিলেন শাস্ত্রী। পেট্রল রয়েছে দেখে মাঠেই তিনি গাড়ি চালাতে শুরু করে দিয়েছিলেন। গোটা স্টেডিয়াম হতবাক।

Advertisement

সেই দিন মেলবোর্নে গাড়ি চালানোর সময়।

এর পরেই শাস্ত্রী লিখেছেন, “আমার জীবনে যা কিছু, তার মধ্যে এই গাড়ি সবার উপরে থাকবে। ছ’টা ছয় মেরেছি। তার গুরুত্ব জানি। কিন্তু গাড়ি পাওয়া সবার উপরে থাকবে। সময়টা ভেবে দেখুন। এক দিনের ক্রিকেট চলছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে দিন-রাতের ম্যাচ খেলছি, প্রথম বার ভারতে আসছে চ্যানেল নাইন, ১৯৮৩-তে সাদা জার্সিতে খেলার পর রঙিন জার্সিতে খেলা, দুর্দান্ত সম্প্রচার, তার উপর পাকিস্তানকে ফাইনালে হারিয়ে জেতা। কেউ কোনও দিন এ জিনিস ভুলতে পারবে না।”

এর পরেই শাস্ত্রী লিখেছেন, “ওটা আমার গাড়ি নয়, দেশের সম্পদ। ভারতীয় দলের গাড়ি। মেলবোর্নে ওই গাড়ি চালানো সবাই মনে রেখেছে। বিশ্বকাপজয়ী দল ঠিক তার পরেই আর একটা বড় প্রতিযোগিতায় জিতে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে গাড়ি চেপে ঘুরছে। বহু মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই জিনিস মনে রেখেছে।”

প্রতিযোগিতার দু’মাস পরে গাড়িটি হাতে পান শাস্ত্রী। বিশাল একটি শিপিং কন্টেনারে সেটি এসেছিল। গাড়ি দেখতে আট-দশ হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন বন্দরে। আউডির তরফেই এক ড্রাইভার গাড়িটি শাস্ত্রীর বাড়ি পৌঁছে দেন।

এর পরে একটি বিড়ম্বনাও তৈরি হয়েছিল। মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ীর একই গাড়ি ছিল। তিনি গাড়ি নিয়ে বেরোলেই লোকে ভাবত শাস্ত্রী বেরিয়েছেন। ফলে ভিড় জমে যেত, তৈরি হত যানজট। পরে ওই ব্যবসায়ী নিজের গাড়ির পিছনে লিখে দেন, ‘আই অ্যাম নট দ্য চ্যাম্পিয়ন অব চ্যাম্পিয়ন্স’।

শাস্ত্রী লিখেছেন, ফাইনালে মাঠে গাড়ি চালানোর পর সেই গাড়িতে অনেক দাগ হয়ে গিয়েছিল। সংস্থার তরফে নতুন একটি গাড়ি পাঠানো হয়। তাঁর বাবা মাঝেমাঝে রবিবার ওই গাড়ি নিয়ে বেরোতেন। তখনও লোকের ধারণা হত, শাস্ত্রীই বোধ হয় গাড়ির ভিতরে রয়েছেন। ভিড় জমে যেত। ফলে শাস্ত্রীর বাবাও এক সময় ওই গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন।

শাস্ত্রী জানিয়েছেন, এখন ওই গাড়ি নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁর মেয়ে প্রথম বারের জন্য সেই গাড়ি দেখতে পেয়েছেন। শাস্ত্রীর ইচ্ছে, মেয়েকে নিয়ে এক বার অন্তত সেই গাড়িতে চড়ে ঘুরবেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement