সফল: ওয়ান ডে ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির পরে শ্রেয়স।
ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের সময় থেকে চলতে চার নম্বর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আপাতত থামিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি। আর কোনও বিজয় শঙ্কর নয়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের চার নম্বর এখন শ্রেয়স আইয়ার। হ্যামিল্টনে বুধবার সেঞ্চুরি করে নিজের দাবিকে আরও জোরাল ভাবে প্রতিষ্ঠা করে দিতে পেরেছেন শ্রেয়স।
চার নম্বরে নেমে এই সাফল্যের কারণ হিসেবে অবশ্য ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা অর্জনকে তুলে ধরছেন উদীয়মান তারকা। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করার পরে শ্রেয়স বলছেন, ‘‘ভারতীয় এ দলের হয়ে সব সময় আমি চার নম্বরে ব্যাট করতে পারিনি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং অর্ডার বদলাতে হয়েছে। তিন থেকে পাঁচ নম্বরের মধ্যে আমি ব্যাট করেছি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নানা প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলে আমি পোক্ত হতে পেরেছি।’’ কোহালির দলে জায়গা করে নিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। প্রথমে সুযোগ পেয়েও ছিটকে যান। এখন ১৬টি ওয়ান ডে খেলার পরে ৪৮-এর উপর গড় তাঁর।
বিশ্বকাপের পরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। যেন বুঝিয়ে দেওয়া যে, বিশ্বকাপে চার নম্বরে তোমার জায়গায় অম্বাতি রায়াডু, বিজয় শঙ্করদের নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে ডুবেছি। তাই আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গিয়ে তোমার উপরেই আস্থা রাখতে চাইছি। ঠিক এই সময়টাই ‘এ’ দলের হয়ে খেলছিলেন শ্রেয়স এবং সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেক পরিণত করে তুলেছে। বলছেন, ‘‘ভারতীয় এ দলের খেলাটা আমাকে খুব সাহায্য করেছে। যখনই আমি এ দলের হয়ে খেলতে যেতাম, নিজেকে একটাই কথা বলতাম। যতগুলো ম্যাচ পাব, সবগুলোতে সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। এ দলে পরিবেশটাও দারুণ। কোনও চাপই নেই।’’ এখন এনসিএ ডিরেক্টর রাহুল দ্রাবিড়ের কোচিংয়ে বেড়ে ওঠা ‘এ’ দলের তরুণ রত্নদের মধ্যে তিনি এক জন। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ে ‘এ’ দলে যোগ দেওয়া তাই তাঁর মনোবল ভেঙে দেয়নি। বরং আরও অনেক কিছু শিখিয়েছে। ‘‘ভারতীয় দলের এক ধাপ নীচে এ দল। সে ভাবে মনেই হয়নি, আমি দৌড় থেকে ছিটকে গেলাম। পরিচিত সেই সব মুখই রোজ দেখতে পেতাম,’’ বলছেন শ্রেয়স। যিনি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১০৭ বলে ১০৩) করেও দেখলেন, দল হেরে গেল। আক্ষেপ যাচ্ছে না তাঁর, ‘‘জীবনের প্রথম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি করে আমি খুব খুশি। কিন্তু আরও খুশি হতাম যদি আমি রান পাওয়ার দিনে দল জিতত।’’ যোগ করলেন, ‘‘আশা করব অনেক সেঞ্চুরির মধ্যে প্রথম এটা। চেষ্টা করব, পরের বার সেঞ্চুরি করলে যেন দলকেও জেতাতে পারি।’’
বিরাট কোহালির সঙ্গে ১০২ রান যোগ করেন শ্রেয়স, তার পর কেল এল রাহুলের সঙ্গে ১৩৫ রান। এই দু’টি জুটিই ভারতকে বড় স্কোরে পৌঁছে দেয়। পিচ কেমন ছিল? শ্রেয়সের জবাব, ‘‘বল থেমে থেমে আসছিল। তবে অসমান বাউন্স ছিল না। আমরা ঠিক করেছিলাম, বড় পার্টনারশিপ গড়ে তোলার দিকে মন দিতে হবে।’’ যে ভাবে পরিকল্পনা করে ইনিংসটাকে সাজিয়েছেন, তা নিয়ে খুশি মুম্বইয়ের তরুণ তারকা। যিনি আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক। ‘‘ধৈর্য ধরে এগোতে চেয়েছিলাম। নিজের উপর বিশ্বাস ছিল যে, একটা সময়ের পর আমি বড় স্ট্রোক ঠিকই খেলেত নিতে পারব। সেই কারণে ডট বল (যে বলে কোনও রান হয় না) নিয়ে উদ্বিগ্ন হইনি,’’ বলে তিনি যোগ করছেন, ‘‘৩৪৮ সহজ টার্গেট ছিল না। ওরা খুব ভাল রান তাড়া করেছে। তবে দ্বিতায়ার্ধে পিচ অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। বল খুব ভাল ব্যাটে আসছিল। শিশিরের প্রভাবও বোলারদের কাজ কঠিন করে দিয়েছিল।’’ নতুন ভূমিকায় কে এল রাহুল দারুণ সফল। ওপেনার থেকে নেমে এসে পাঁচ নম্বরে নিয়মিত ভাবে দ্রুতগতিতে রান তুলছেন। শ্রেয়সও তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত, ‘‘দুর্দান্ত ব্যাট করছে। এত সুন্দর বল দেখছে যে, কী বলব!’’ ভারতের ফিল্ডিং নিয়ে ফের প্রশ্ন থেকে গেল। সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডকে জেতানো রস টেলরের ক্যাচ পড়ে মাত্র ১০ রানে। ভারতীয় বোলিংয়ে সেই নিয়ন্ত্রণও চোখে পড়েনি। ২৬ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। শ্রেয়স যদিও সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘‘প্রত্যেকেরই খারাপ দিন যায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, আমরা খুবই ভাল ফিল্ডিং দল। বোলার আর ফিল্ডারদের মনোবল বাড়ানোর দায়িত্বও নিতে হবে সকলে মিলে।’’
তিন ম্যাচের এক দিনের সিরিজে অবশ্য বেশি সময় হাতে থাকছে না শ্রেয়সদের হাতে। মনোবল বাড়িয়ে পরের ম্যাচই জিততে হবে। না হলে সিরিজই যে পিছলে যাবে হাত থেকে!