প্রাপ্তি: এক দিন আগে তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবরে হইচই পড়ে যায়। সেই নিশা ৬৫ কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন। ছবি টুইটার।
একদিন আগেই চাঞ্চল্যকর খবরটায় আঁতকে উঠেছিলেন সবাই! যে কোনও ভাবেই হোক রটে যায়, কুস্তিগির নিশা দাহিয়াকে নাকি হরিয়ানার সোনপতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আরও রটে, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাঁর মা এবং ভাইও। এ হেন ভুল খবরে পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক রূপ নেয়, নিশাকে স্বয়ং গণমাধ্যমে ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে জানাতে হয়, তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই দিব্যি সুস্থ আছেন।
মজার ব্যাপার, এই ঘটনার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরেই নিশা জাতীয় কুস্তিতে ৬৫ কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন। উত্তর প্রদেশের গোন্ডায় বৃহস্পতিবারের ফাইনালে তিনি মাত্র ৩০ সেকেন্ডে উড়িয়ে দিলেন পঞ্জাবের যশপ্রীত কৌরকে। অনূর্ধ্ব ২৩ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া কুস্তিগিরকে কার্যত ফাইনালে কোনও প্রতিরোধের সামনেই পড়তে হয়নি। এমনিতেও গোন্ডায় এ বার একটা ম্যাচেই ভাল রকম লড়তে হয়েছে নিশাকে। সেটা প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে, হরিয়ানার প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে।
জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিশা বলেছেন, ‘‘বলা যায়, এখানে আমার অভিযান দারুণ ভাবেই শেষ করতে পারলাম। সত্যি কথা বলতে, এতটা আমি নিজেও ভাবিনি। অথচ গতকাল আমি মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম ওই ভুল খবরটার জেরে। বলতে গেলে, রাতে ঘুমোতেও পারিনি ভাল করে। এমনিতেই রাতারাতি ওজন কমে যাওয়ায় আমার শক্তিতেও কিছুটা খামতি দেখা দিয়েছিল। বিশ্বাস করুন, এই রকম বাজে একটা ব্যাপার কী ভাবে সামলাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না।’’
ঘটনা হচ্ছে, বুধবার হরিয়ানায় আততায়ীর গুলিতে সত্যিই এক সম্ভাবনাময় কুস্তিগিরের মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, তাঁর নামও নিশা! ভুল খবর রটে যাওয়ার সেটাই আসল কারণ। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন নিশা যা নিয়ে আরও বলেছেন, ‘‘যে কোনও খেলোয়াড়ই চায়, তার পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হোক। তা সেটা ভাল বা খারাপ যা-ই হোক না কেন। কিন্তু এ ভাবে ভুল মৃত্যুর খবরে জড়িয়ে কেউই আলোচনায় উঠে আসতে চাইবে না। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। ভয়ঙ্কর এই খবরটা জন্য আমার কাছে এত ফোন আসছিল, যে বলার নয়! একটা সময় তো বাধ্য হয়ে ফোনই সুইচ অফ করে দিয়েছিলাম।’’ যোগ করেছেন, ‘‘এ সব নিয়ে কাল খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবু চেষ্টা করেছি, যতটা সম্ভব নিজের খেলায় মনঃসংযোগ করতে। ভাগ্য ভাল, শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের সময় আমার পারফরম্যান্সে এ সবের কোনও প্রভাব পড়েনি।’’
বৃহস্পতিবারের ফাইনালটা একপেশে হলেও সেমিফাইনালে যে কঠিন লড়াইয়ের সামনে পড়তে হয়েছিল, তা স্বীকার করেছেন নিশা। যে কারণে প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে তিনি জেতেন ৭-৬ ফলে। এ দিকে এ দিনই মেয়েদের ৭৬ কেজিতে সোনা জেতেন ৩৭ বছরে পা দেওয়া গুরশরণপ্রীত কৌর। তাঁর লড়াইটা ছিল পূজা সিংহের সঙ্গে। যিনি ডান হাতে মারাত্মক চোট পেয়ে কার্যত কাঁদতে কাঁদতে ম্যাচই ছেড়ে দেন। জাতীয় আসরে গুরশরনপ্রীতের এটা সপ্তম সোনা। গোন্ডায় এ বার জাতীয় প্রতিযোগিতার গ্রেকো স্টাইলের লড়াইগুলি প্রথম দিনই শেষ হয়ে যায়। এখানে সব ক’টি ওজন বিভাগের ফাইনালিস্টরাই কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে নামার সুযোগ পাবেন। যা প্রিটোরিয়ায় হবে ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর। সোনা জয়ীদের খরচ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার। রুপোজয়ীদের প্রিটোরিয়ায় যেতে হবে নিজেদের খরচে।