ঘরে-ফেরা: আইএসএলে তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কলকাতায় টিম মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গে ট্রফি নিয়ে এটিকে দলের কোচ ও ফুটবলারেরা। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অঘটন না ঘটলে আগামী মরসুমে কলকাতাতেই হবে আইএসএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। চেন্নাইয়িন এফসিকে হারিয়ে এটিকের তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পরের মরসুমের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন আইএসএল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য তাঁদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে কলকাতার নাম।
কেন? আইএসএল কর্তাদের যুক্তি, ‘‘পরের মরসুমে এটিকে ও মোহনবাগান একসঙ্গে আইএসএলে খেলবে। দুই ক্লাবের সংযুক্তিকরণ ফুটবলপ্রেমীদের মনে কতটা উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে, তা যুবভারতীতে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বেও আমরা দেখেছি। এত দর্শক অন্য কোনও স্টেডিয়ামে হবে না। তাই আমাদের প্রথম পছন্দ কলকাতা। সরকারি ভাবে ঘোষণা করতে অবশ্য একটু সময় লাগবে।’’
কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের নিয়ে এটিকে কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসও উচ্ছ্বসিত। খোলাখুলিই তিনি বলেছেন, ‘‘কলকাতা আমার অন্যতম প্রিয় শহর। কলকাতার মানুষের ভালবাসার টানেই এটিকের প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বার কোচ হওয়ার জন্য রাজি হয়ে যাই।’’ আরও বললেন, “ছেড়ে চলে গেলেও এটিকের সঙ্গে সবসময়ই আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। গত বছর মে-জুনে আমার হাতে যখন কোনও ক্লাবের প্রস্তাব ছিল না, তখন ওরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এটিকের প্রতি আমার বিশেষ অনুভূতি রয়েছে। আশা করি এই সম্পর্কটা বহু দিন বজায় থাকবে।’’
পরের মরসুমে এটিকে-মোহনবাগান আইএসএলে খেলবে। নতুন দল নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা? হাবাস বলছেন, ‘‘পরের মরসুম নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। তবে মোহনবাগান ভারতের অন্যতম সেরা ক্লাব। আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ওদের অভিনন্দন। এটিকে-মোহনবাগানকে ভারত সেরা করাই আমার লক্ষ্য।’’
চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ফাইনাল চলাকালীন উত্তেজনায় এক বারের জন্যও রিজার্ভ বেঞ্চে বসেননি হাবাস। এত চিৎকার করেছেন যে, গলা ভেঙে গিয়েছে। স্পেনীয় কোচের হাত ধরেই প্রথম আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এটিকে। ছ’বছর পরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখলেন ফুটবলপ্রেমীরা। দুর্দান্ত সাফল্যের রহস্যটা কী? হাবাসের ব্যাখ্যা, ‘‘আমার মনে হয়, এ বার ভারতীয় ও বিদেশি ফুটবলারদের মিশ্রণটা খুবই ভাল হয়েছে। তা ছাড়া আমি এত দিন ধরে কোচিং করছি। সব দলেই নানা রকম সমস্যা থাকে কিন্তু এটিকেতে মাঠে ও মাঠের বাইরে এই মরসুমে কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা একটা পরিবারের মতো। এটাই আমাদের সাফল্যের রহস্য।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘কার্ল ম্যাকহিউয়ের চোটটা আমাদের কাছে খুবই গুরুতর ছিল। কারণ, ও একসঙ্গে মাঝমাঠ ও রক্ষণ সামলাত। কার্লের বিকল্প পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দলের সকলে মিলে ওর অভাব পূরণ করে দিয়েছে। এই দলগত সংহতি আমাদের সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।’’
আপনার কোচিংয়ে দু’বার আইএসএল জিতেছে এটিকে। কোচ হিসেবে কোন জয়টা বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে? হাবাসের কথায়, ‘‘এ বারের জয়টা একেবারে অন্য রকম।’’ কেন? এটিকে কোচের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম বার আইএসএলে এতটা পেশাদারিত্ব ছিল না, এত প্রতিযোগিতাও ছিল না। এখন অনেক ভাল কোচ ও ফুটবলাররা খেলছে। দল ও ম্যাচ অনেক বেশি। যদিও অভিষেকের আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ বারেরটা আমার কাছে স্পেশ্যাল।’’
ফাইনালে ৪০ মিনিটে চোট পেয়ে রয় কৃষ্ণ বেরিয়ে যাওয়ার পরে যে এটিকের খেলার ছন্দ কিছুটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মেনে নিয়েছেন হাবাস। বললেন, ‘‘প্রথমার্ধে আমরা অনেক ভাল খেলেছি। রয় কৃষ্ণ চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধানটা ধরে রাখার মতো লোকের অভাব হচ্ছিল। তবে ফুটবলে গোলই শেষ কথা, যেটা আমরা বেশি করতে পেরেছি। তবে ব্যবধানটা ধরে রাখতে পারবে কি না, দ্বিতীয়ার্ধে সেই চিন্তা ঢুকে পড়েছিল ছেলেদের মাথায়। কারণ, চেন্নাই খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ। ওরা দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।’’ এটিকে কোচ যোগ করলেন, ‘‘দলের সেরা ফুটবলার ও অধিনায়ক হঠাৎ চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় মানসিক চাপে পড়ে গিয়েছিল ছেলেরা। তার পরে ভাল খেলতে না পারলেও দুর্দান্ত লড়াই করেছে ছেলেরা। এই মানসিকতাই আমাদের দলের অস্ত্র। ওদের জন্য আমি গর্বিত।’’
রয় কৃষ্ণের চোট শুধু নয়, করোনা-আতঙ্কে দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে খেলাটাও যে কঠিন ছিল, অস্বীকার করেননি এটিকে কোচ। বললেন, ‘‘ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা সহজ নয়। ছেলেদের আমি শুরু থেকেই বলে দিয়েছিলাম, কী ভাবে এই পরিস্থিতিতেও নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে করতে হবে। ফাইনালে খেলতে গেলে বাড়তি মানসিক শক্তিও প্রয়োজন। তবে করোনাভাইরাসের সমস্যাটা মারাত্মক। মানুষের জীবন ফুটবলের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’