স্বপ্নপূরণ: দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ট্রফি জয়ের আনন্দে আত্মহারা নেয়োমি ওসাকা শুয়ে পড়লেন কোর্টে। জাপানি তারকা এশীয় খেলোয়াড় হিসেবে তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের নজিরও গড়লেন। ইউএসএ টুডে স্পোর্টস
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতে নেয়োমি ওসাকা কোটি কোটি দর্শকদের বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে মুখ খোলার আহ্বান জানালেন। শনিবার রাতে ওসাকা মেয়েদের সিঙ্গলসের ফাইনালে তিন সেটের লড়াইয়ে হারান ভিক্টোরিয়া আজ়ারেঙ্কাকে। ফল ১-৬, ৬-৩, ৬-৩।
২০১৮ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন এবং ২০১৯ অস্ট্রেলীয় ওপেনের পরে তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পাশাপাশি এ বার নজর কেড়ে নিয়েছিল ওসাকার কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ফ্লাশিং মেডোজে সাতটি ম্যাচেই তাঁকে সাত জন কৃষ্ণাঙ্গের নাম লেখা মুখাবরণ পরতে দেখা গিয়েছিল। যাঁরা পুলিশের হাতে মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল ওসাকার উদ্দেশ্য।
ফাইনালের জন্য কোর্টে যখন তিনি প্রবেশ করেন তাঁর মুখাবরণে লেখা ছিল তামির রাইস-এর নাম। ১২ বছর বয়সি আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোর তামির ২০১৪ সালে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিল ওহিয়োতে। তাঁর এই প্রতিবাদের পাশে দাঁড়িয়ে ২২ বছর বয়সি জাপানি তরুণীর ঠাকুরদা তেতসুয়ো সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমার নাতনি ভীষণ সাহসী। ওর জন্য আমি গর্বিত।’’ জাপানের সংবাদমাধ্যমেও নেয়োমির এশিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি জয় ও প্রতিবাদের প্রশংসা করা হয়েছে। জাপানের একটি সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘নেয়োমির এই জয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানুষদের আরও সংগঠিত করবে।’’ নেয়োমিকে ফাইনালে প্রশ্ন করা হয় তিনি এই প্রতিবাদের মাধ্যমে কোন বার্তা দিতে চান? যা শুনে পাল্টা ওসাকা প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কোন বার্তা পাচ্ছেন? আমি চাই এই বিষয়ে মানুষ মুখ খোলা শুরু করুক।’’ জাপানে জন্ম হলেও যুক্তরাষ্ট্রেই বড় হয়েছেন নেয়োমি। থাকেন লস অ্যাঞ্জেলেসে। তাই মাার্কিন মুলুক তাঁর কাছে নিজের দেশের মতোই। ‘‘আমি কোর্টের বাইরে যা যা করেছি সেটা কোর্টের মধ্যেও করার চেষ্টা করেছি। এই ব্যাপারটা আমায় আরও শক্তি দিয়েছে। কারণ, আমি চেয়েছিলাম প্রতিটা ম্যাচ জিতে আরও নাম সবার সামনে আনতে,’’ বলেছেন দ্বিতীয় বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ী।
তৃপ্ত: ট্রফি নিয়ে রবিবার সকালে ফোটোসেশনে ওসাকা। গেটি ইমেজেস
যুক্তরাষ্ট্র ওপেন শুরু হওয়ার আগে থেকেই ওসাকার এই প্রতিবাদ হইচই ফেলে দিয়েছিল টেনিস দুনিয়ায়। গত মাসে জ্যাকব ব্লেক নামে কৃষ্ণাঙ্গের পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পরে ওয়েস্টার্ন ও সাদার্ন ওপেনে তিনি সেমিফাইনাল থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিংবদন্তি বিলি জিন কিং-সহ আরও অনেকে। ট্রফি জেতার পরে ওসাকার আর একটা ইচ্ছেও পূরণ হয়েছে। আগে দেখেছেন, ফাইনালে জিতেই কোর্টে শুয়ে পড়তে বিজয়ীদের। কী দেখেন তাঁরা ও ভাবে জানার ইচ্ছে ছিল। শনিবারও তিনি ম্যাচ জিতে কোর্টে শুয়ে পড়েন। এই সুযোগটা পেয়ে তিনি খুশি। ওসাকার আরও সেই ইচ্ছে যে সাত জনের স্মৃতিকে তিনি সম্মান জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা। ওসাকার এই একই সঙ্গে আন্তরিক এবং প্রতিবাদী রূপের জন্যই এখন তাঁকে বলা শুরু হয়ে গিয়েছে, মাঠের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন মাঠের বাইরেও।