অভিজ্ঞতার অভাব ধরা পড়ল পন্থের খেলায়। ছবি— এএফপি।
টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভারতের বিরুদ্ধে এর আগে জয় অধরা থেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের। রবিবার রোহিত শর্মার ভারতকে মাটি ধরিয়ে ইতিহাস তৈরি করল বাংলাদেশ। অথচ ভারত সফরে আসার আগে কত ঝড় ঝঞ্ঝাই না পোহাতে হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। ক্রিকেটাররা বিদ্রোহ করে বসেন। শাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে মাঠের বাইরের এই সব ঘটনার জের এসে পড়েনি মাঠের ভিতরে।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাট ঝলসে ওঠায় রাজধানীতে বাংলাদেশ হারাল ভারতকে। সেই সঙ্গে ভারতের মাটিতে জয়ের খরা কাটাল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট। ৪৩ বলে ৬০ রান করে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুশফিকুর। কিন্তু, তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিন-তিনবার জীবন পান বাংলাদেশের উইকেটকিপার। তার মধ্যে ঋষভ পন্থের জন্য দু’বার নিশ্চিত এলবিডব্লিউয়ের ডিআরএস নেয়নি ভারত। ক্রুণাল পাণ্ড্য মুশফিকুরের ক্যাচ ফেলে দেন একবার। মুশফিকুরের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যদি একাধিকবার জীবন পান, তা হলে জেতার কথা কী ভাবে আশা করতে পারে ভারত!
এখনকার ক্রিকেটে রিভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য দলের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উইকেটকিপার। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে নির্দেশ দিতেন রিভিউ নিতে হবে কিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ধোনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে। এই কারণে ডিআরএস-এর নামই হয়ে গিয়েছে ‘ধোনি রিভিউ সিস্টেম’। ধোনির উত্তরসূরি ঋষভ পন্থ রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যর্থ। রবিবাসরীয় ম্যাচে সঠিক রিভিউ না নিয়ে দলকে ডোবালেন পন্থ।
আরও পড়ুন: ভারতকে হারিয়ে প্রবল উচ্ছ্বাসের মাঝে গর্জন বাংলাদেশ জুড়ে
দশম ওভারে যুজবেন্দ্র চহালের দুটো ডেলিভারি এসে আছড়ে পড়েছিল মুশফিকুরের প্যাডে। দুটো ক্ষেত্রেই চহাল নিজে জোরালো আবেদন করেন। প্রথম বার চহাল ও পন্থের সঙ্গে কথা বলার পরে রোহিত রিভিউ নেননি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কোনও আলোচনাই হয়নি। ধোনি হলে এই ভুল করতেন না বলেই মনে করছে ক্রিকেটমহলের একটা বড় অংশ। রিভিউ নেওয়ার জন্য তিনি নিজেই অধিনায়কের উপরে চাপ তৈরি করতেন।
চহালের দুটো ডেলিভারির ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ধরেই নিয়েছিলেন, বল পিচ পড়েছে লেগ স্টাম্পের বাইরে। কিন্তু, রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে বল ঠিক লাইনেই ছিল এবং দু’বারই বল স্টাম্পে আঘাত করত। ফলে মুশফিকুর জীবন ফিরে পান। সেই ওভারেই রিভিউ নেন পন্থ। কিন্তু সেটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। সৌম্য সরকারের বিরুদ্ধে আউটের আবেদন করে বসেন পন্থ। তিনি ভেবেছিলেন, সৌম্যর ব্যাটে লেগে বল তাঁর হাতে এসেছে। রোহিতকে রিভিউ নিতে জোর করেন পন্থ।
পরে দেখা যায় বল ব্যাটেই লাগেনি। রিভিউ নষ্ট করে ভারত। প্রথম দুটো রিভিউ না নিয়ে বোধহয় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছিলেন পন্থ। উল্টে আরও বড় ভুল করে দলকে ডুবিয়ে বসেন। রিভিউ নষ্ট হওয়ায় মাঠের ভিতরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অধিনায়ক রোহিত। পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুশফিকুরের রিভিউ প্রসঙ্গে ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘‘রিভিউ না নিয়ে আমরা ভুল করেছি। প্রথম বলটা ব্যাকফুটে খেলেছিল মুশফিকুর। আমরা ভেবেছিলাম বলটা বেরিয়ে যাচ্ছে। পরের বলটা ফ্রন্ট ফুটে খেলে। কিন্তু, আমরা ঠিকমতো বিচার করতে পারিনি।’’
শুধু রিভিউ না নেওয়ায় বেঁচে গিয়েছেন মুশফিকুর এমন নয়, ১৮তম ওভারে জিততে হলে ১৬ বলে ৩৩ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। সেই সময়ে ক্রুণাল পাণ্ড্য ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকের। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ব্যাট হাতেও পন্থ হতাশ করেছেন এ দিন। তাঁর সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিকঠাক না হওয়ায় রান আউট হতে হয় শিখর ধবনকে। নিজেও বড় শট খেলে দলের রান বাড়াতে পারেননি। অভিজ্ঞতার অভাব ধরা পড়ছে বাঁ হাতির খেলায়।
আরও পড়ুন: দু’ দলকেই ধন্যবাদ সৌরভের, অনভিজ্ঞতাকে দুষছেন রোহিত