স্মৃতিমেদুর: বিশ্বকাপ জয়ের সংবর্ধনা ভুলতে পারেননি ধোনি। পিটিআই
তাঁর অবসর নিয়ে ক্রিকেটমহলে জল্পনা অব্যাহত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি জানিয়ে দিলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের আগে তা নিয়ে যেন কোনও প্রশ্ন না করা হয়!
মঙ্গলবারই ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি আগামী বছর আইপিএলে প্রাক্তন অধিনায়কের ফর্ম দেখার পরেই তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বুধবার মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে এসে ধোনি তাঁর অবসর প্রসঙ্গ নিয়ে মুখ খুললেন। বলে দিলেন, ‘‘জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন করবেন না।’’
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই একমাত্র অধিনায়ক, যাঁর দখলে রয়েছে আইসিসি পরিচালিত তিনটি ট্রফি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালে ওয়াংখেড়েতে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ ট্রফি জয়। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক জানিয়েছেন তাঁর জীবনে সেই দুই ট্রফি জয়ের স্মৃতি অমলিন রয়ে যাবে চিরকাল। তিনি জানিয়েছেন, ওই দুই বিশ্বকাপ জয়ের পরে যে সংবর্ধনা পেয়েছিলেন, তা কোনও দিন ভুলতে পারবেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক্রিকেট জীবনের সেরা দুই মুহূর্ত বেছে নিতে বলা হলে বলব ২০০৭ এবং ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জয়।’’ সেখানেই না থেমে তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে ফেরার পরে মুম্বইয়ে খোলা বাসে আমাদের দলকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল। মেরিন ড্রাইভের পাশে আমরা খোলা বাসের ছাদে দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তায় দেখেছিলাম জনপ্লাবন। সকলেই আমাদের দেখার জন্য নিজেদের গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। সেই মুহূর্তটা কোনও দিন ভুলতে পারব না।’’
প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরে তাঁর অনুভূতি কেমন ছিল? ধোনি বলেছেন, ‘‘সকলের মুখে খুশির হাসি দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল। আরও ভাল লেগেছিল এটা দেখে যে, ওই ভিড়ে এমনকিছু মানুষও ছিলেন যাঁদের বিমান ধরার তাড়া ছিল। হয়তো তাঁদের অনেক জরুরি কাজও ছিল। কিন্তু সেই জনপ্লাবনের কারণে তাঁরা নির্ধারিত সময়ে বিমান ধরতে পারেননি। মেরিন ড্রাইভের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত মানুষের ঢল দেখে বিস্মিত হয়ে পড়ি।’’
দ্বিতীয় স্মরণীয় মুহূর্ত তার চার বছর পরে। ওয়াংখেড়েতে ঐতিহাসিক ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ধোনি জানিয়েছেন, ভারত জয়ের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সময় যে ভাবে গ্যালারিতে সমর্থকেরা বন্দেমাতরম গান গেয়ে উঠেছিলেন, তাতে তিনি রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছিলেন। ধোনি বলেছেন, ‘‘তখনও জেতার জন্য খুব সম্ভবত ১৫-২০ রান বাকি ছিল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সমর্থকেরা একযোগে শুরু করেছিলেন বন্দেমাতরম গাইতে।’’ আরও বলে দিয়েছেন, ‘‘আমার চোখে এই দুটো মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি হওয়া খুবই কঠিন। হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে দুটো বিশ্বকাপ জয়ের পরে মানুষের এই ভালবাসা।’’
ভারতে সব চেয়ে জনপ্রিয় খেলা কেন ক্রিকেট, সেই প্রশ্নের জবাবে ধোনি জানিয়েছেন, এই খেলাটা এতই অনিশ্চয়তায় ভরা যে, তা মানুষকে আরও বেশি আকর্ষণ করে। তিনি বলেছেন, ‘‘এই খেলায় প্রত্যেকটা ডেলিভারি ম্যাচের আবহ পাল্টে দেয়। ফলে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো প্রত্যেক ডেলিভারিতেই ম্যাচের চেহারা রাতারাতি বদলে যায়।’’
নিজের ক্রিকেট জীবনের শুরুর দিনের কথাও উঠে এসেছে ধোনির মুখে। বলেছেন, ‘‘আমি তো রাঁচীর ছোট্ট একটা শহর থেকে উঠে এসেছি। অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়েই এগোতে হয়েছে। অবশেষে ২০০৩ সালে ভারত ‘এ’ দলের সফরে জায়গা পেয়ে ছবিটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তিগত ক্ষমতা এবং দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থেকে যদি নিজেকে উন্নত করার ইচ্ছাশক্তি থাকে, তা হলে সাফল্য আসবেই। কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই।’’