প্রশিক্ষক বাণী সরকারের সঙ্গে মৃত্তিকা। নিজস্ব চিত্র
মাত্র দু’মাসের ব্যবধানে বদলে গেল পদক। অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দাবায় দু’মাস আগেই রানার্স-আপ হয়েছিল বাংলার মেয়ে মৃত্তিকা মল্লিক। এ বার অনূর্ধ্ব-১৪ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হল সে। আমদাবাদে ৯-১৪ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩৪তম জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতা। সেখানেই চ্যাম্পিয়ন হয় মৃত্তিকা।
বাড়ির কেউ কোনও দিন দাবা খেলেনি। কিন্তু মৃত্তিকা শুধুমাত্র নিজের চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের জোরেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। হুগলির চুঁচুড়ার ২ নম্বর কাপাসডাঙা কলোনির বাসিন্দা সে। স্থানীয় বিনোদিনী গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সম্প্রতি ভারতের দাবাড়ু প্রজ্ঞানন্দ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে দু’বার হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছে। ১৪ বছরের সেই প্রজ্ঞাকেই অনুসরণ করে মৃত্তিকা। জাতীয় স্তরে থেমে না গিয়ে তার লক্ষ্য বিশ্ব দাবায় নিজের ছাপ রাখা।
পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা এবং গান গাওয়ার প্রতি ঝোঁক রয়েছে তার। দাবা খেললে মাথা পরিষ্কার হয়, মেয়ের অঙ্কে মাথা ভাল হবে, এই ভাবনা থেকেই মেয়েকে দাবায় ভর্তি করিয়েছিলেন মা। মেয়ে যে তার পরে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হবে, এটা ভাবতেও পারেননি তিনি।
মৃত্তিকার দাবায় হাতেখড়ি হয় প্রতিবেশী বাণী সরকারের সূত্রে। এর পর চুঁচুড়া টাউন ক্লাবে অভিষেক সরকারের কাছে তালিম নেয় সে। এখন কলকাতার গোর্কি সদনে দুর্গাপ্রসাদ মহাপাত্রর কাছে দাবা খেলা শিখছে। অনলাইনে ইউক্রেনে এক প্রশিক্ষকের কাছেও দাবা শিখছে। মৃত্তিকার ঝুলিতে পুরস্কারের সংখ্যাও কম নয়। এর আগে অনূর্ধ্ব-১১ জাতীয় দাবায় রানার্স হয়েছিল মৃত্তিকা। ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৩ এশিয়ান স্কুল দাবায় অনলাইন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সে। ২০২২ সালে অনলাইন দাবায় এশিয়ান টিম চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে ‘এ’ দলে খেলে মৃত্তিকা। ওই প্রতিযোগিতায় সে ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে বিজয়ী হয়। অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয় গত ১৪ মে। এ বার অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৬ এশিয়ান ও বিশ্ব দাবায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে সে।
আগামী দিনে মেয়েকে আরও বড় দাবাড়ু তৈরি করতে চাইছেন মৃত্তিকার বাবা-মা। মৃত্তিকার বাবা ছোট ব্যবসা করেন। দাবা খেলার প্রশিক্ষণে অনেক খরচ। তবে সমস্যা হলেও মেয়ের স্বপ্ন চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাঁরা। মৃত্তিকা জানায়, বাণী সরকারের কাছে দাবা খেলা শিখতে যাওয়ার পর প্রশিক্ষক তাকে একটি দাবার প্রতিযোগিতা দেখাতে নিয়ে যান। সেই থেকেই মৃত্তিকার দাবার প্রতি আগ্রহ। দিনের বেশির ভাগ সময় সে দাবা নিয়েই কাটায়। জাতীয় স্তরে দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল মৃত্তিকা। ১৫০ জন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে অনূর্ধ্ব ১৪ জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সে।
মৃত্তিকার মা মীনাক্ষী মল্লিক বলেন, সাত বছর বয়সে পড়াশোনায় ভাল হবে বলে দাবা কিনে দিয়েছিলাম। মেয়ে দাবাড়ু হয়ে যাবে ভাবিনি। মৃত্তিকার বাবা অরিন্দম মল্লিক জানান, দাবা খুব ব্যয়বহুল খেলা। প্রশিক্ষকদের বেতনও অনেক। তার মধ্যে শুধু মেয়ের সাফল্য তাঁদের সমস্ত পরিশ্রমকে ভুলে নতুন করে উদ্দীপ্ত করে।