কাকাই তাঁর প্রথম কোচ। বল কুড়োতে কুড়োতেই এই খেলার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। তার পর থেকে দীর্ঘ দু’দশক ভারতের হয়ে খেলেছেন। ৭৫-এর বেশি দেশের বিরুদ্ধে ৪০০-র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। পেয়েছেন প্রচুর পুরস্কার।
ফের অনুশীলন শুরু করেছেন মৌমা ফাইল চিত্র।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরে বিরতি নিয়েছিলেন। তার পর থেকে আর খেলতে নামেননি। মেয়ে অদিত্রী হওয়ার পরেও দু’বছর খেলার বাইরে ছিলেন মৌমা দাস। কিন্তু এ বার আর টেবিল টেনিস ছেড়ে থাকতে পারছেন না। তাই ফের অনুশীলন শুরু করেছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়া মৌমা। কিন্তু অনুশীলনে ফিরে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। এত বছর অনুশীলনের বাইরে থাকায় ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে তাঁকে।
কেমন চলছে মৌমার অনুশীলন? এই প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজার অনলাইনকে মৌমা বললেন, ‘‘ধীরে ধীরে শুরু করেছি। অনেক দিন খেলার বাইরে ছিলাম। তাই নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। প্রথম কেউ খেলা শুরু করলে যে ভাবে অনুশীলন করানো হয়, সে ভাবেই শুরু করেছি। প্রথম প্রথম তো ব্যাটে বল ছোঁয়াতেও সমস্যা হচ্ছে। এই কয়েক বছরে ওজন বেড়েছে। তাই খেলতে সমস্যা হচ্ছে।’’
মৌমাকে এখনই কঠিন অনুশীলনের মধ্যে রাখতে চাইছেন না প্রশিক্ষকরা। তাই ধীরে ধীরে নিজের খেলার মান বাড়াচ্ছেন তিনি। আর সেই কারণে এখনই কোনও প্রতিযোগিতায় নামছেন না। মৌমা বললেন, ‘‘অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে। তার পরেই কোনও প্রতিযোগিতায় নামতে পারব। প্রতিযোগিতায় না খেললে বুঝতে পারব না আমি কোন জায়গায় আছি। তাড়াহুড়ো করতে চাই না। ধাপে ধাপে এগতে চাই।’’ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় সাফল্যের পরেই আন্তর্জাতিক স্তরে নামার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার নিচ্ছেন মৌমা ফাইল চিত্র
মেয়ে হওয়ার পরে জীবন অনেকটা বদলেছে। আগে শুধু নিজের অনুশীলন, খেলা নিয়ে ভাবতেন। এখন মেয়েকে সামলাতে হয়। খেলার জন্য যাতে মেয়ের কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখেছেন। মৌমা বললেন, ‘‘এখন খুব সকালে অনুশীলন করতে যাই। মেয়ে তখন ঘুমোয়। মেয়ে উঠে পড়ার আগে ফিরে আসি। তবে তার মধ্যে কোনও সময়ে মেয়ে উঠে পড়লে অনুশীলনের মাঝেই বাড়ি ফিরে আসতে হয়। জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছে।’’
কাকাই তাঁর প্রথম কোচ। বল কুড়োতে কুড়োতেই এই খেলার প্রতি ভালবাসা জন্মায়। তার পর থেকে দীর্ঘ দু’দশক ভারতের হয়ে খেলেছেন। ৭৫-এর বেশি দেশের বিরুদ্ধে ৪০০-র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। পেয়েছেন প্রচুর পুরস্কার। ২০০০ সালে রাশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক পদক দিয়ে সেই যাত্রা শুরু। ২০১৫ সালে কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জেতার পরে দেশের হয়ে টেবিল টেনিসে সর্বাধিক পদকজয়ী খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসেও মণিকা বাত্রাকে সঙ্গে নিয়ে রুপো জিতেছেন।
২০১৩ সালে পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার। ২০২১ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী। শরথ কমলের (২০১৯) পরে দ্বিতীয় টেবিল টেনিস তারকা হিসাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন মৌমা। কিন্তু এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন মৌমা। দেশের হয়ে টেবিল টেনিসে আরও পদক জিততে চাইছেন। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। শূন্য থেকে শুরু করে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চান তিনি।