দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পেশির চোটে খেলতে পারেননি ঝুলন। ভারতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ৫ বিশ্বকাপে টানা ৩৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই প্রথম বার তাঁকে ছাড়া খেলতে নামলেন মিতালি। খেলা চলাকালীন মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল ঝুলনের অভাব বোধ করছেন।
সাজঘরে বসে ঝুলন ছবি: টুইটার।
মাথায় হাত হরমনপ্রীত কউরের। বোলার দীপ্তি শর্মা বুঝতে পারছেন না কী করবেন। চুপ করে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মিতালি রাজ। এক মুহূর্ত আগে যে জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা এক লহমায় বদলে গিয়েছে। হারের মুখে দাঁড়িয়ে দল। ঠিক তখনই ক্যামেরা তাক করল তাঁকে। সাজঘরে বসে ঝুলন গোস্বামী। থমথমে মুখ। দু’হাত দিয়ে কোনও রকমে কান্না চেপে রেখেছেন। দৃষ্টি মাঠের দিকে। চশমার পিছন থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, আরও এক বার ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছে দেশে। এই নিয়ে টানা পাঁচ বার। তবে কি এটাই শেষ? আর কি বিশ্বকাপে নামবেন? নাকি অনেক হয়েছে, আর নয়। সে সবই হয়তো ভাবছিলেন মহিলাদের ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সেই সঙ্গে মরণ-বাঁচন এই ম্যাচে মাঠে নামতে না পারার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছিল তাঁকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পেশির চোটে খেলতে পারেননি ঝুলন। ভারতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ৫ বিশ্বকাপে টানা ৩৪ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এই প্রথম বার তাঁকে ছাড়া খেলতে নামলেন মিতালি। খেলা চলাকালীন মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল ঝুলনের অভাব বোধ করছেন। বল করার সময় যখনই তিনি চাপে পড়েন বল তুলে দেন ঝুলনের হাতে। কিন্তু রবিবার সেটা করতে পারছিলেন না। ম্যাচ শেষে ঝুলনের অভাবের কথা স্বীকারও করে নেন মিতালি।
আর ঝুলন কী বলছেন? অনুশীলনের সময় চোট পেয়েছিলেন। সেটা তাঁর হাতে ছিল না। তাই যন্ত্রণা একটু বেশি হয়েছে। দলের মেয়েদের লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু নিজে শামিল হতে পারেননি সেই লড়াইয়ে। বল হাতে বহু বছর ভারতের মেয়েদের দলের বোলিংয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই ঝুলন নামতেই পারলেন না মাঠে। তিনি থাকলে হয়তো আরও একটু সাহস পেতেন পূজা বস্ত্রকর, মেঘনা সিংহরা। হয়তো আরও একটু বেশি লড়াই করতে পারতেন তাঁরা। তাতে হয়তো খেলার ফল অন্য হতে পারত।
মেয়েদের বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরে ৩৯ বছর বয়সি ঝুলন অবসর নেবেন কি না তা এখনও জানাননি। অবশ্য জল্পনার শেষ নেই। কেউ বলছেন, এ বার ভারতের সব থেকে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার মিতালি ও ঝুলনের অবসর নেওয়া উচিত। অনেকের মতে, এখনও ভারতের মহিলা ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে তাঁদের। দলের তরুণ ক্রিকেটারদের স্বার্থে আরও কয়েক বছর খেলুন তাঁরা। আর এই জল্পনার মাঝে ‘চাকদহ এক্সপ্রেসের’ মন হয়তো চলে যাচ্ছে ছোটবেলায়। যে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন সেই স্বপ্ন কি তবে অধরা থেকে যাবে? থমথমে মুখে উত্তর খুঁজছেন বাংলার ঝুলন