মহড়া: মোহনবাগান অনুশীলনে সতীর্থদের সঙ্গে পাপা (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র
মোহনবাগান জনতার ‘বস্’ ফ্রান গঞ্জালেস থেকে ফ্রান মোরান্তে সবাই মনে করছেন, সেনেগালের স্ট্রাইকারই তাঁদের খেতাব জেতার প্রধান ভরসা। কোচ কিবু ভিকুনা তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত।
অথচ সেই পাপা বাবাকর দিয়োহারা ড্রেসিংরুম এবং সমর্থকদের এই প্রত্যাশা সম্পর্কে অবহিত হলেও তা নিয়ে কোনও চাপ নিতে নারাজ। মঙ্গলবার বিকেলে যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে অনুশীলনের পরে লা লিগায় খেলে আসা পাপা স্পষ্ট বলে দিলেন, ‘‘লা লিগায় খেলার সময় কোনও চাপ ছিল না, এখানেও নেই। মাঠে নামার সময় দু’টো জিনিস মাথায় রাখি। এক) আমাকে দলে দেওয়া হয়েছে গোল করার জন্য। দুই) প্রত্যেকটি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করে যেতে হবে। চাপ নিয়ে কী লাভ। কাজটা ঠিকঠাক করলেই হল।’’ সেভিয়ার জার্সিতে আতলেতিকো দে মাদ্রিদ, রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে লা লিগায় গোল রয়েছে তাঁর। মোহনবাগান জার্সিতে প্রথম তিন ম্যাচে গোল না পেলেও পরের পাঁচ ম্যাচে ছয় গোল করে ফেলেছেন পাপা। বলছিলেন, ‘‘সব ম্যাচ সবাই জিততে পারে না। খেতাব পেতে হলে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। জিততে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য শুধু চার্চিল ব্রাদার্স ম্যাচ।’’ অনুশীলনে একের পর গোল করলেও অদ্ভুত ভাবেই শান্ত থাকতে পারেন পাপা। কথাবার্তা খুব কমই বলেন। এ দিন ভাইকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসেই কথা বলছিলেন সবুজ-মেরুনের আশার অন্যতম প্রদীপ। একত্রিশ বছর বয়সি পাপা বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগান যতই এগিয়ে থাকুক, এখনও খেতাব জিতবই, এটা বলার সময় আসেনি। চার্চিল ম্যাচ হয়ে গেলেও আরও আটটি ম্যাচ খেলতে হবে। সেখানে অনেক কিছুই হতে পারে। ’’
লিগ শীর্ষে থাকা মোহনবাগান বারো ম্যাচের মধ্যে হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ। সেটা আবার চার্চিল ব্রাদার্সের সঙ্গেই। সেই দলের বিরুদ্ধেই খেলা। গোয়ায় জোসেবা বেইতিয়ারা যাবেন বৃহস্পতিবার। শনিবার ম্যাচ। তার আগে এ দিন ফুটবলারদের কঠোর অনুশীলন করালেন কিবু। প্রায় দু’ঘণ্টার হাড়ভাঙা পরিশ্রম। সেট পিস থেকে পাসিং ফুটবল, শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর নানা কসরত, কিছুই বাদ গেল না। পজেশনাল রণনীতি তৈরির সময় চোট সারিয়ে ফেরা ড্যানিয়েল সাইরাসকে দেখা গেল স্টপারে ফ্রান মোরান্তের সঙ্গে। লালকার্ড দেখে বাইরে চলে যাওয়া ধনচন্দ্র সিংহের জায়গায় খেলানো হল গুরজিন্দর কুমারকে।
চার্চিলের দুই প্রধান অস্ত্র উইলিস প্লাজ়া এবং সিসেকে আটকাতে রণনীতি তৈরি করলেন কিবু। তবে খেতাবের লড়াইতে থাকা গোয়ার পারিবারিক দলকে নিয়ে দু’রকম ভাবনার প্রতিফলন দেখা গেল সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের মধ্যে। ড্যানিয়েল সাইরাস যেমন বলে দিলেন, ‘‘ওদের হেড করতে দেওয়া যাবে না। সব চেয়ে বড় কথা, দলটা শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে। আমাদেরও শেষ মিনিট পর্যন্ত প্রস্তুত থাকতে হবে।’’ অন্য দিকে দিপান্দা ডিকার সঙ্গে আই লিগের যুগ্ম সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান গঞ্জালেস বলছেন, ‘‘আমরা লিগে একটা ম্যাচ হেরেছি। এবং সেটাও নিজেদের ভুলে। প্লাজ়া বড় মানের ফুটবলার কিন্তু আমাদের পাপা আছে। পাপা আই লিগে খেলা সেরা ফুটবলার।’’ পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর এক স্টপার ফ্রান মোরান্তে। গঞ্জালেস তাঁকে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করলেন, আমাদের পাপা-ই তো সবার সেরা? মোরান্তে বললেন, ‘‘পাপা, পাপা,’’ বলেই দৌড়ে উঠে পড়লেন গাড়িতে। বোঝাই গেল পাপা দিয়োহারার গোলে ফেরা পুরো দলকেই উজ্জীবিত করে তুলেছে।