সাজছে তাঁবু। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
শিলংয়ে সনি নর্ডিরা যখন আই লিগের ম্যাচ জেতার জন্য ঝাঁপাবেন, তার আগেই কলকাতায় তাঁদের ক্লাব তাঁবুতে হয়তো শুরু হয়ে যাবে ‘অন্য যুদ্ধ’। ক্লাবের ক্ষমতা দখলের লড়াই।
আজ শুক্রবার বিকেল চারটেয় বাগানের সাধারণ সভা। সেখানে গত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ করা হবে। কিন্তু যে সভা আগের কয়েক বছরে দশ মিনিটেই শেষ হয়ে গিয়েছে ‘পাস, পাস’ বলে, এ বার সেই সভা ঘিরেই টানটান উত্তেজনা। বিরোধীরা ছন্নছাড়া হলেও, দুই ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বা মন্ত্রী, মেয়র পারিষদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অতীন ঘোষদের গত কয়েক মাসের লাগাতার তোপের মুখে রীতিমতো অস্বস্তিতে বর্তমান শাসকরা। এতটাই যে, নির্বাচনের আগে টুটু-অঞ্জন-সৃঞ্জয়-দেবাশিসরা এই সভাকে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হিসাবে দেখাতে চাইছেন। সভার আগের দিন বিকেলে নবনির্মিত ঝাঁ চকচকে বাগান তাঁবুতে গিয়ে অন্তত সেটাই মনে হল। লরি-বাসে করে কে কত ‘সদস্য’ সভায় আনবেন তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে কর্মসমিতির সদস্যদের মধ্যে। সাড়ে আট হাজার সদস্যের মধ্যে হাজারখানেক ‘সদস্য’ আনার চেষ্টা চলছে। চেয়ার অবশ্য পাতা হচ্ছে পাঁচশো।
এখানেই শেষ নয়। ফেড কাপের ব্যর্থতার পর পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া প্রেসিডেন্ট টুটু বসু, সচিব অঞ্জন মিত্র এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত আজকের সভার মঞ্চে প্রথমবার পাশাপাশি বসবেন। অন্তত সে রকম দাবি করেছেন খোদ সচিবই। ব্যতিক্রম শুধু সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্লাব তাঁবুতে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “আমি পদত্যাগপত্র তুলছি না। তবে সভায় যাব সাধারণ সদস্য হিসাবে।” বিরোধীরাও বসে নেই। আজ বিকেল তিনটেয় গোষ্ঠ পাল মূর্তির নিচে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বললেন, “আমরা সভায় যাব। বেআইনি হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলব। টুটুবাবুর লোকজন যদি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তা হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তার জন্য দায়ী থাকবেন কিন্তু ওঁরাই। আমরা দায় নেব না।”
শাসক ও বিরোধীদের এই দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় পুলিশ আর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে মুড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে তাঁবু। ক্লাবের সদস্য কার্ড ও সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে সদস্যদের ঢুকতে হবে মাঠে। মোহন-সচিব বললেন, “আমরা নিয়ম মেনে সভা ডেকেছি। কোনও গণ্ডগোল হলে প্রশাসন সেটা দেখবে।”
রাজ্য বাজেটের জন্য কমর্সমিতির সদস্য রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাসের সভায় থাকার সম্ভাবনা কম। সম্ভবত থাকছেন না বিরোধীদের প্রধান মুখ সুব্রত ভট্টাচার্যও। রাতে তিনি বলে দিলেন, “আমি হলফনামায় সই করে মামলা করেছি। আইনগতভাবে সভায় যেতে পারি না। গিয়েও বা কি হবে? গুণ্ডাদের এনে সভা ভর্তি করবে টুটু-অঞ্জনরা। কোনও ঝামেলা বা মারামারি হোক চাই না। আমি তো আদালতে গিয়েছি। সেখানেই বিচার হোক।’’ এ দিন অবশ্য হাইকোর্টে সুব্রতরা ‘বেআইনি সভা স্থগিত রাখা হোক’ দাবি নিয়ে বিচারকের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতি সোমেন সেন ব্যক্তিগত কারণে তা শুনতে চাননি। জানা গিয়েছে, আজ সকালে অন্য বিচারকের এজলাসে তা তোলার চেষ্টা চলছে।