mohammed azharuddin

ম্যাচ গড়াপেটা থেকে পদ খোয়ানো, আজহারউদ্দিনের গোটা জীবনটাই নির্বাসিত

বাইশ গজে ব্যাট হাতে যতটা সাবলীল তিনি, মাঠের বাইরে বিতর্ক তৈরি করতে ততটাই ওস্তাদ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ১৬:৪৬
Share:

মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ফাইল ছবি

বাইশ গজে ব্যাট হাতে যতটা সাবলীল তিনি, মাঠের বাইরে বিতর্ক তৈরি করতে ততটাই ওস্তাদ। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম বর্ণময় চরিত্র তিনি, আবার কখনও দেশবাসীর কাছে ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে খলনায়ক। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক। তিনি বিতর্ককে ছাড়তে চাইলেও, বিতর্ক কোনওদিন তাঁর পিছু ছাড়েনি। বৃহস্পতিবারের ঘটনা যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম। নিয়ম ভাঙার দায়ে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। আজহারউদ্দিনের গোটা জীবনটাই যেন নিয়মভাঙার খেলা।

Advertisement

শুরুটা হয়েছিল ’৯০-এর দশকে। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তখন তুঙ্গে। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু-মুসলিম বিদ্রোহে তোলপাড় গোটা দেশ। এই সময়কালে বারবার প্রশ্ন উঠেছে তাঁর ভূমিকা নিয়ে। যখনই ভারত বনাম পাকিস্তানের খেলা হত, তখনই আজহারউদ্দিনকে নিয়ে তৈরি হত বিতর্ক। প্রতিবার তিনি আউট হলেই মনে করা হত, ইচ্ছাকৃত ভাবে পাকিস্তানকে সুবিধা করে দিতেই আউট হয়েছেন। বিতর্ক আরও বৃদ্ধি পায় যখন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ দল থেকে আজহারউদ্দিনকে বাদ দেন মনোজ প্রভাকর। সরাসরি তিনি আজহারের নাম তুলে বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি।

এরপরেই আসে তাঁর জীবনের সব থেকে কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সরাসরি ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জড়িয়ে গিয়েছিলেন অজয় জাডেজা, অজয় শর্মা, মনোজ প্রভাকরও। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে সরাসরি তাঁর নাম করেছিলেন। বলেছিলেন, আজহারই তাঁকে জনৈকি জুয়াড়ি এম কে গুপ্তর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁকে আজীবন নির্বাসিত করে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় ক্রিকেটের ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচিয়েছিলেন এক বাঙালি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঠান্ডা মাথা এবং অসাধারণ কৌশলে ভারতীয় ক্রিকেটকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনেন।

Advertisement

মাঠের লড়াইয়ে যখন এই অবস্থা, তখন মাঠের বাইরে আজহারের ব্যক্তিগত জীবনও টালমাটাল। অল্প বয়সেই নুরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজহার। কিন্তু ক্রিকেটজীবনের মধ্যগগনে থাকা অবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় সঙ্গীতা বিজলানির। সঙ্গীতার সঙ্গে সম্পর্কের কথা শোনা গিয়েছিল সলমন খানেরও। ত্রিকোণ প্রেমের রসালো গল্প তখন প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পাচ্ছে। ক্রিকেট থেকে আজহারও ক্রমশ দূরে সরছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর উপর থেকে নির্বাসন তুলে নেয় ভারতীয় বোর্ড। ২০১২-তে অন্ধ্রপ্রদেশের হাই কোর্ট আজহারের নির্বাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে।

ক্রিকেটকে সাময়িক ভাবে দূরে সরিয়ে রেখে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন আজহার। কংগ্রেসের টিকিটে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। এমন সময় জীবনে আরও বড় ধাক্কা আসে। বাইক দুর্ঘটনায় হারান ছেলেকে। রাজনৈতিক জীবনও খুব সুখের যায়নি আজহারের কাছে। ক্রিকেটের প্রশাসনে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকেন তিনি। অবশেষে বছর দুয়েক আগে ভোটে জিতে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদকালে বারবার তাঁর ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কখনও ভুল সিদ্ধান্ত, কখনও খামখেয়ালী মেজাজ সংস্থার অন্দরেই তাঁর একাধিক বিরোধী তৈরি করে দিয়েছিল। তারই অন্তিম পরিণতি সংস্থার পদ থেকে নির্বাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement