কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা চুল। চোখে এভিয়েটর সানগ্লাস। ফ্রেমে যে সুন্দরী তরুণীকে দেখছেন, তিনি কিন্তু কোনও মডেল নন। বরং প্রচণ্ড মারকুটে এক মহিলা। মেয়েরা তো বটেই, ছেলেরাও যাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেন না।
ইনি আসলে একজন কুস্তিগীর। ডব্লিউডব্লিউই-র রিংয়ে দাপানো প্রথম ভারতীয় মহিলা। নাম কবিতা দেবী।
১৯৮৬ সালে হরিয়ানার মালভিতে জন্ম কবিতার। তাঁর আসল নাম কবিতা দালাল। কিন্তু কুস্তির রিং তাঁকে কবিতা দেবী বা হার্ড কেডি (কবিতা দেবীকেই সংক্ষেপে কেডি বলা হয়) নামে চেনে।
২০০৯ সালে ভলিবল খেলোয়াড় গৌরব তোমরের সঙ্গে বিয়ে হয় কবিতার। তাঁদের দীর্ঘ দিনের পরিচয়। ২০১০ সালে তাঁদের প্রথম সন্তান অভিজিতের জন্ম। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা গৌরব সশস্ত্র সেনা বলে কর্মরত।
ছেলের জন্মের পর পাওয়ার লিফটার কবিতা ভেবেছিলেন তিনি ভারোত্তলন ছেড়ে দেবেন। কিন্তু স্বামীর অনুপ্রেরণাই আবার ফিরে আসেন।
কবিতারা পাঁচ ভাইবোন। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়া গেমস্-এ পাওয়ার লিফ্টিংয়ের ৭৫ কেজি বিভাগে সোনা জিতে বিশ্বের কাছে প্রথম পরিচিতি পান কবিতা। পাওয়ার লিফ্টিংয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন তিনি।
ওই বছরই সশস্ত্র সীমা বলের কনস্টেবল পদে চাকরিও পেয়ে যান কবিতা। সেখান থেকে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে সাব-ইনস্পেক্টর হন। কিন্তু এই কাজে মন টিকছিল না তাঁর। যোগ দেন গ্রেট খালির কুস্তির আখড়ায়।
দলীপ সিংহ রানা ওরফে দ্য গ্রেট খালি ডব্লিউডব্লিউই রিং দাপিয়েছেন বহু দিন। তাঁর কুস্তির প্যাঁচে আন্ডারটেকারও কাহিল হয়ে গিয়েছিলেন। খালির কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁর ডব্লিউডব্লিউই-র আঙিনায় পা দেওয়া।
২০১৭ সালে ভারতীয় ডব্লিউডব্লিউই কুস্তীগির হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কবিতা দেবী। সালোয়ার কামিজ পরে তিনি রিংয়ে উঠেছিলেন। তিনিই ছিলেন প্রথম কোনও মহিলা, যিনি এমন ঢিলেঢালা পোশাক পরে কুস্তি লড়েন। রিংয়ে সব সময়ই সালোয়ার কামিজ আর কোমরে শক্ত করে ওড়না বেঁধে লড়েন কবিতা। এটাই তাঁর ট্রেডমার্ক।
মে ইয়ং ক্লাসিক ইভেন্টে আর এক কুস্তিগীর ডাকোতা কাইয়ের সঙ্গে লড়াই ছিল কবিতার। কমলা রঙের সালোয়ার আর কোমরে জড়ানো ওড়না দেওয়া কবিতা দু’হাতে ডাকোতাকে মাথার উপরে তুলে নিয়েছিলেন। সেই ছবি রাতারাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পরিবার এবং পেশা দুটোকেই সমান ভালবাসেন কবিতা। পেশার জন্য যাতে কোনও ভাবেই পরিবার যাতে বঞ্চিত না হয়, সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখেন। সুযোগ পেলেই তাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। তাঁর ইনস্টাগ্রাম জুড়ে রয়েছে স্বামী ও ছেলের সঙ্গে একাধিক স্মৃতি জড়ানো ছবি।
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা কবিতা ভীষণ ফ্যাশনেবল। হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা কবিতা আজ পুরোপুরি শহুরে আদবকায়দা রপ্ত করেছেন। ফি বছর ডব্লিউডব্লিউই-র থেকে প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা পান তিনি। কিন্তু তা বলে নিজের গ্রামকেও ভোলেননি। আজও সময় পেলেই চলে যান গ্রামে।
কবিতার সাফল্যের পর ডব্লিউডব্লিউই কর্তৃপক্ষ ভারতে বাজার ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কবিতার মতো আরও কুস্তিগীরের খোঁজে সম্প্রতি মুম্বইয়ে একটা ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতাও হয়েছে।
আগামী দিনে খালি বা কবিতার মতো আর কোনও ভারতীয় কুস্তিগীরকে ডব্লিউডব্লিউই রিং মাতাতে দেখা যাবে বলেই আশা করছেন ডব্লিউডব্লিউই কর্তৃপক্ষ।