প্রথম বার রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করার সুযোগ পেলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল।—ছবি পিটিআই।
টেস্টে প্রথম বার রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করার সুযোগ পেয়েছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। আর প্রথম ইনিংসেই ‘হিটম্যান’-এর রাজকীয় ব্যাটিং ভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত তাঁর তরুণ ওপেনিং পার্টনার। যার ইঙ্গিত পাওয়া গেল দ্বিতীয় দিন মায়াঙ্কের ২১৫ রানের ইনিংসে।
বুধবার অপরাজিত ৮৪ রান করে টিম হোটেলে ফেরার পরে ছোটবেলার কোচ আর মুরলীধরকে ফোন করেছিলেন মায়াঙ্ক। জানিয়েছিলেন, ক্রিজে রোহিতের বিধ্বংসী মেজাজ দেখে তিনিও প্রভাবিত। যা তাঁর সাহস ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। বৃহস্পতিবার ৩৭১ বলে মায়াঙ্ক ২১৫ রান করে মায়াঙ্ক ড্রেসিংরুমে ফেরার পরে তাঁর কোচ মুরলীধরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার। ফোন ধরেই মুরলীধর বলে দিলেন, ‘‘মায়াঙ্ক কিন্তু নিজের দক্ষতায় এই সাফল্য পেয়েছে। আমি ওকে সাহায্য করেছি মাত্র। ওর তাগিদ ও পরিশ্রম করার ইচ্ছে না থাকলে এই সাফল্য পেত না।’’
ছোটবেলা থেকেই মায়াঙ্ক তাঁর কোচের খুব প্রিয় ছাত্র। প্রথম বার নেটে দেখেই মুরলীধর বুঝতে পেরেছিলেন, ‘‘ছেলেটি লম্বা রেসের ঘোড়া।’’ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য কর্নাটক ক্রিকেটমহলে চর্চিত নাম হয়ে উঠেছিলেন মায়াঙ্ক। চঞ্চল মানসিকতার ছেলেটিকে কী ভাবে শান্ত করে তোলা যায়, সেটাই ছিল কোচের চ্যালেঞ্জ। প্রত্যেক ম্যাচেই মায়াঙ্কের লক্ষ্য থাকত কম বল খেলে বড় ইনিংস গড়ার। তাই এক সময় প্রচুর সেঞ্চুরি নষ্ট করেছেন। ধৈর্য হারিয়ে খারাপ শট খেলে আউট হওয়ার প্রবণতাও ছিল। কী ভাবে সেই খুঁত সারিয়ে তুললেন মুরলীধর? কোচ বলছিলেন, ‘‘দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় জওয়ান’স ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল। তার পর থেকেই অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিল। বাজে শট খেলে আউট হতে শুরু করল। রান আসছিল না। একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ওকে এক দিন বোঝালাম, বড় ইনিংস খেলার জন্য ক্রিজেও বেশিক্ষণ থাকতে হবে। বেশি বল খেলতে হবে। ড্রেসিংরুমে ফিরে বড় ইনিংস খেলার স্বপ্ন দেখলে চলবে? তার পর থেকেই ওর অনুশীলনের সময় বাড়িয়ে দিলাম। কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ‘ভি’-এর মধ্যে (মিড-অফ থেকে মিড-অন অঞ্চলে) খেলার।’’ তার পর থেকে ঠিক কী পরিবর্তন চোখে পড়ল? কোচের উত্তর, ‘‘সাইড স্ট্রোকের সঙ্গেই বোলারের সোজাসুজি শট নেওয়ায় উন্নতি হল। অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৬ সফরকারী দলের বিরুদ্ধে টানা তিন ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিল কর্নাটক অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে। তার দু’বছর পরেই অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলে সুযোগ। সেখান থেকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।’’
মায়াঙ্ক যে এখনও তাঁর আগ্রাসী রূপ বজায় রেখেছেন, তা বোঝা যাবে ইনিংসের পরিসংখ্যানেই। ২৩টি চার ও ছ’টি ছয়ের সৌজন্যে ২১৫ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ৫৭.৯৭। এমন কয়েকটি শট দেখা গিয়েছে যা সচরাচর টেস্ট ক্রিকেটে মারার সাহস পাওয়া যায় না। অফস্পিনারকে স্পিনের বিরুদ্ধে রিভার্স সুইপ করেছেন। বাঁ-হাতি স্পিনারকে মিড উইকেট অঞ্চলের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছেন। যা দেখলেই বোঝা যায়, এক সময় এ ধরনের ক্রিকেটই ছিল তাঁর প্রিয়।
কোচ যদিও বলছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতগুলো ইনিংসের মধ্যে ওকে এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করতে দেখিনি। কাল রাতে ফোন করে বলছিল, রোহিতের ব্যাটিং ওকে খুব প্রভাবিত করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ রকমও ভয়ডরহীন মেজাজে ব্যাট করা যায়, তা রোহিতকে দেখেই আন্দাজ করেছে।’’
বিনোদ কাম্বলি, দিলীপ সরদেশাই, করুণ নায়ারের পরে চতুর্থ ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক সেঞ্চুরির ইনিংসকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করলেন। গত তিন বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কর্নাটকের হয়ে অসাধারণ খেলেছেন। ২০১৭-র নভেম্বরে ২৭ দিনে এক হাজারের উপর রান করেছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি ও তিনটি সেঞ্চুরির সৌজন্যে রেকর্ড গড়েছিলেন মায়াঙ্ক। এ বার দেশের হয়ে সেই ছন্দে তাঁকে দেখার আশায় কোচ। মায়াঙ্কের প্রশংসা করতে গিয়ে গলা বুজে আসছিল মুরলীধরের। তবুও বলে গেলেন, ‘‘ডাবল সেঞ্চুরি করার পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন ব্যাট তুলল, মনে হল, এত দিনের পরিশ্রমকে কুর্নিশ করছে। আজ শুধু ও জিতল না, জিতল পরিশ্রম, ইচ্ছে ও তাগিদ।’’