রঞ্জি ট্রফি জয়ী সৌরাষ্ট্র।
স্বপ্ন ভাঙল বাংলার। ৩৮১ রানে শেষ হয়ে গেল বাংলার প্রথম ইনিংস। তীরে এসে তরী ডুবল এ বারও। তিরিশ বছর আগের সোনালি বিকেল ফিরল না রাজকোটে।
প্রথম ইনিংসে বাংলা ৪৪ রানে পিছিয়ে থাকায় প্রথম বার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল কারসন ঘাউরির সৌরাষ্ট্র। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা যে ঘটতে চলেছে পঞ্চম দিনের সকালে, তা কি বাংলার সমর্থকরা ভেবেছিলেন?
চতুর্থ দিনের শেষে বাংলা শিবিরেই যে জয়ের গন্ধ ম ম করছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছিল প্রবল চর্চা। নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। পঞ্চম দিনের সকালের সেশনে বাংলার ব্যাটিং তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। জয়দেব উনাদকটের লেন্থ বল এসে আছড়ে পড়ল বাংলার সব চেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান অনুষ্টুপের পায়ে। বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল তাঁর ব্যাট। ঠিক সময়ে বলের লাইনে গেল না ব্যাট।
রিভিউ নিলেও তা বাঁচাতে পারেনি চলতি রঞ্জিতে বাংলার সব চেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানকে। অনুষ্টুপের ব্যাটই তো ক্রমশ চওড়া হয়ে উঠছিল। তাঁর ব্যাটে ভর করেই তো কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে পৌঁছেছিল বাংলা। টেল এন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর মরিয়া লড়াই ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ দিন ব্যক্তিগত ৬৩ রানে তিনি ফিরে যেতেই বাংলা শিবিরে নেমে এল অন্ধকার।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে বাতিল ম্যাচ, ফাঁকা ইডেনেই লড়াই বিরাটদের
ঠিক দু’বল পরেই ফের ছন্দপতন। শিক্ষানবিশের মতো রান আউট হয়ে ফিরলেন আকাশদীপ। খাতা খুলতে পারেননি তিনি। মুকেশ কুমারও (৫) ফিরে গেলেন চটজলদি। ঈশান পোড়েলকে এলবিডব্লিউ করে সৌরাষ্ট্রকে রঞ্জি ট্রফি এনে দিলেন উনাদকট। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল সৌরাষ্ট্র। দ্বিতীয় ইনিংসের আর গুরুত্ব ছিল না এই ম্যাচে। সৌরাষ্ট্র দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেটে ১০৫ রান করার পরে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। শাহবাজ আহমেদ (২টি), আকাশদীপ (১) ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (১টি) সৌরাষ্ট্রের উইকেটগুলো নেন। তা অবশ্য ম্যাচের ভাগ্য বদলায়নি।
এর আগে ১১ বার রঞ্জি ফাইনালে পৌঁছেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলা। সেই দুঃস্বপ্ন কাটানোর সুযোগ এসে গিয়েছিল এ বার। রাজকোটে মনোজ তিওয়ারি শততম রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। আগের দু’বার (২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭) বাংলা যখন রঞ্জি ফাইনালে পৌঁছেছিল, সে বারও দলে ছিলেন তিনি। তিন-তিনবার রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে পৌঁছেও ট্রফি অধরাই থেকে গেল মনোজের।
তিরিশ বছর আগে তাঁর মগজাস্ত্রের জন্যই বাংলা রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল। সেই অরুণ লাল এ বার ছিলেন বাংলা দলের ‘চাণক্য’। এ বার বাংলা চ্যাম্পিয়ন হলে দারুণ এক নজির গড়তে পারতেন অরুণ। ক্রিকেটার ও কোচ হিসেবে রঞ্জি জিতে অন্য এক কক্ষপথে পৌঁছে যেতেন। সেটাও সম্ভব হল না ‘ফাইটার’ কোচের। পঞ্চম দিনের সকালের এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেল বাংলা। এরই নাম যে ক্রিকেট। মুহূর্তেই স্বপ্ন ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন: যত চর্চা এখন বিদেশিদের ভিসা নিয়েই