নাগপুরে ভারতের দাপট। ছবি— এএফপি।
পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ভারত-বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি সিরিজ। নয়াদিল্লির প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারতের উপরে। রাজকোটের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে ভারত সিরিজে সমতা ফেরায়।
নাগপুরের ম্যাচের পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছিল বল গড়ানোর আগে থেকেই। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ কঠিন। সাম্প্রতিককালে ক্রিকেট মাঠে মুশিফকুর রহিমরা কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ভারতকে। রবিবারও মরিয়া লড়াই করল বাংলাদেশ। কিন্তু, দিনান্তে শেষ হাসি তোলা থাকল ভারতের জন্যই। প্রতিবেশি দেশকে ৩০ রানে হারিয়ে রোহিত শর্মার ‘টিম ইন্ডিয়া’ টি টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল ২-১-এ।
ভারতের ১৭৪ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ শুরুতেই দু’ উইকেট হারিয়ে বসে। লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন দীপক চহার। ভারতের সমর্থকরা মনে করেছিলেন, অসহায় ভাবে হয়তো ভেঙে পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু, বাংলাদেশের ওপেনার মহম্মদ নইম অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন। দলের ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতি ওপেনার পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন। যুজবেন্দ্র চহাল, শিবম দুবের উপরে নির্দয় ছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল তাঁর চওড়া ব্যাট। তিনি এবং মহম্মদ মিঠুন পার্টনারশিপে ৯৮ রান জুড়ে ভারতের উপরে পাল্টা চাপ তৈরি করেন। তখন উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছিল রোহিতকে। কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। রোহিতের চিন্তা দূর করেন দীপক চহার। মিঠুনকে ফেরান তিনি। পরের ওভারেই শিবমের বলে বোল্ড হন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। নইম তাও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ দিকে জেতার সমীকরণ ক্রমশ কঠিন হচ্ছিল বাংলাদেশের। শিবম দুবের বলে বোল্ড হন নইম (৪৮ বলে ৮১)। পরের বলেই দুবে ফেরান আফিফকে। তার পরে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচ বের করা আর সম্ভব হয়নি। কাজে এল না নইমের দুরন্ত লড়াই। দীপক চহার হ্যাটট্রিক করলেন। দুরন্ত বোলিং করেন এই তরুণ বোলার। ৩.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৭ রান দিয়ে ৬টি উইকেট নেন তিনি। টি টোয়েন্টির সেরা বোলিং ফিগারও চহারেরই।
এ দিন অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা নিজেরাই নিজেদের কাজটা কঠিন করে ফেলে। কী ভাবে? শ্রেয়াস আইয়ার তখনও খাতাই খোলেননি। ঠিক সেই সময়ে শফিউল ইসলামের বলে তাঁকে ফেলে দেন বিপ্লব। বাংলাদেশের কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি শ্রেয়াস আইয়ারের ওরকম লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেবেন বিপ্লব। তখন যদি শ্রেয়াস আইয়ার ফিরে যেতেন, তা হলে ভারত আরও সমস্যায় পড়ে যেত। কারণ শফিউলের সেই ওভারেই ফিরে গিয়েছেন শিখর ধাবন। তাঁরও আগে শফিউল ফিরিয়েছেন রোহিত শর্মাকে। শ্রেয়াস আইয়ার জীবন ফিরে পেয়ে শেষমেশ থামলেন ৬২ রানে। তিনি ছিলেন বলেই ২০ ওভারের শেষে ভারত করল ৫ উইকেটে ১৭৪ রান। শুরুতেই যদি শ্রেয়াস আইয়ার ফিরে যেতেন, তা হলে আরও কম রানেই শেষ হয়ে যেত ভারতের ইনিংস। সেই জায়গায় বেশ লড়াই করার মতো রান করে ভারত।
আরও পড়ুন: ১০ মাস নয়, সৌরভকে তিন বছর বোর্ড সভাপতি করার তোড়জোড় শুরু?
রবিবার টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াধ। কারণ টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমে ব্যাট করে বিপক্ষকে আটকে রাখার ক্ষেত্রে ভারতের দুর্বলতা রয়েছে। রোহিত যদি রবিবার টস জিততেন তা হলেও প্রথমে ফিল্ডিংই করতেন। চলতি সিরিজে দুটো ম্যাচে দেখা গিয়েছে যে দল পরে ব্যাট করেছে, সেই দলই ম্যাচ জিতেছে। সেই কারণেই মাহমুদুল্লাহ টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন।
দু’ দলই একটি করে পরিবর্তন আনে। ক্রুনাল পাণ্ড্যর জায়গায় প্রথম একাদশে এসেছেন মণীশ পাণ্ডে। বাংলাদেশ শিবিরে মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় প্রথম একাদশে এসেছেন মহম্মদ মিঠুন। কিন্তু খেলা শুরু হতেই ইন্দ্রপতন ঘটে।
ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা রাজকোটে ঝড় তুলেছিলেন। নাগপুরে তাঁকে ভয়ঙ্কর হতেই দিলেন না শফিউল ইসলাম। মাত্র ২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ‘হিটম্যান’। রোহিত চলে যাওয়া মানে বড় ধাক্কা। বাংলাদেশ সেটাই চেয়েছিল। রোহিতকে দ্রুত তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা তাদের কাজে দিয়েছে। অধিনায়ক ফেরার পরে ইনিংস গোছানো এবং দ্রুত লয়ে রান তোলার চেষ্টা করছিলেন শিখর ধবন এবং লোকেশ রাহুল। মুস্তাফিজুরের ওভারে দুটো বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের ওভারেই শফিউলকে চালাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন ধবন (১৯)। লোকেশ রাহুল ভাল ছন্দে ছিলেন। বাংলাদেশ বোলারদের শাসন করে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি করার পরেই উইকেট ছুড়ে দিলেন। ৫২ রানে ফিরলেন রাহুল। আরও কিছুক্ষণ উইকেটে থাকতেই পারতেন তিনি। হারাকিরি করে বসলেন। এর পরে শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাট কথা বলে। আফিফের ওভারে পর পর তিন বলে তিনটে ছক্কা হাঁকান। তিনটে বাউন্ডারি ও পাঁচটি ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল শ্রেয়াস আইয়ারের ইনিংস। অন্য দিকে, ঋষভ পন্থ এদিনও হতাশ করলেন। সৌম্য সরকারের স্লোয়ারে ঠকে গিয়ে আউট হলেন। করলেন মাত্র ৬ রান। দল তাঁর কাছ থেকে রান চাইছে, আর মোক্ষম সময়ে পন্থের ব্যাট কথা বলছে না। বাকি কাজটা করেন মণীষ পাণ্ডে (অপরাজিত ২২) এবং শিবম দুবে (৯)।
জবাব দিতে নেমে নইম একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দিনটা যে তাঁর ছিল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর— ভারত (২০ ওভার) ১৭৪-৫
বাংলাদেশ (১৯.২ ওভার) ১৪৪