খেলরত্ন পুরস্কারের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
কারও পা কাটা গিয়েছে ট্রেনের লাইনে আটকে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই গোটা পঞ্চাশেক পদক জিতে ফেলেছেন।
কারও আবার বাসের চাকার নীচে পড়ে পায়ের হাড় গুড়িয়ে গিয়েছিল। তারপর সারা জীবনের মতো হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেও চমকে দিয়েছেন অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে।
কারও বয়স নব্বই ছুঁই ছুঁই। ডেভিস কাপে আট বার দেশের প্রতিনিধিত্ব এবং একবার অধিনায়কত্ব করেও কখনও রাজ্য থেকে কোনও স্বীকৃতি পাননি।
আর একজন সতেরো বছর ভারত সেরা, ছ’বার এশীয় সেরা, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি পাননি সে ভাবে।
সোমবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য সরকারের দেওয়া সম্মানে এঁরা সকলে ছিলেন। মাঠের অবহেলিত মুখ, প্যারালিম্পিক্সে সফল খেলোয়াড়, প্রাক্তন এবং বর্তমান তারকা— সবাই হাজির। কারও হাতে খেল সম্মান, কারও হাতে বাংলার গৌরব, কেউ পেলেন ক্রীড়াগুরু সম্মান। সঙ্গে জীবনকৃতি পুরস্কার তো আছেই। গলায় উত্তরীয়, নানা অঙ্কের চেক হাতে উঠল সকলের।
‘‘রেল লাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের চাকায় কাটা গিয়েছিল বাঁ পা। কিন্তু আমি লড়াই ছাড়িনি। নকল পা নিয়েই সাঁতারে অনেক পদক এনেছি। পঞ্চাশটার বেশি। ভাবিনি কখনও এ রকম সম্মান পাব’’ বলার সময় মধ্যমগ্রামের লীলা সাহার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। একটু দূরে তখন দাঁড়িয়ে ‘আয়রন লেডি’ পাওয়ার লিফটিংয়ের শম্পা গুহ। ‘বাংলার গৌরব’ পুরস্কার হাতে নিয়ে। সুমিতা লাহার পর এই খেলায় রাজ্যের সেরা মুখ। ‘‘আমার বাড়িতে জাতীয় পর্যায়ে বা এশীয় স্তরের বা কমনওয়েলথ গেমসের এত পদক আছে, জানি না কারও আলমারিতে সেটা আছে কি না? কিন্তু কেউ তো খোঁজও রাখে না,’’ বলে দেন উত্তরপাড়ার শম্পা।
আরও পড়ুন: ভাষা আন্দোলনের কালপঞ্জী
এ দিন মোট ৩৫ জন ক্রীড়াবিদকে পুরস্কৃত করা হল। মোহনবাগানকে তেরো বছর পর আই লিগ এনে দেওয়া সঞ্জয় সেন ক্রীড়াগুরু হলেন। সাঁতারের বিশ্বজিৎ দে চৌধুরী বা জিমন্যাস্টিক্সের জয়নারায়ণ দাশের সঙ্গে। টেবল টেনিসের অনিন্দিতা চক্রবর্তীর দীর্ঘ দিন দাপিয়ে বেড়ানো যেমন স্বীকৃতি পেল তেমনই দেশের দু’নম্বর সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় পেলেন খেল সম্মান।
নির্ধারিত সময়ের একটু আগে এসে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্য। ‘‘শুধু কম্পিউটর, মোবাইল, ভিডিও গেমে আটকে থাকুক ছেলে-মেয়েরা, এটা চাই না। মস্তিস্ক এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ছোট ছোট পড়ুয়াদের পিঠে ভারী ব্যাগের বোঝা কমাতে হবে। কাজ শুরু করেছি। আরও কমাব। স্কুলে ফুটবল-সহ সব খেলাকে পাঠ্য করছি আমরা। সবাই খেলুক।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়ে দেন, সরকার ক্রীড়ানীতি তৈরি করেছে। বাংলায় খেলার উন্নতি করতেই হবে। সাফল্য পেলে পুরস্কৃত করা হবে। ‘‘কলকাতা লিগে খেলা দলগুলোকে টাকা দিয়েছি। এ বার ছোট খেলার রাজ্য সংস্থাগুলোকে পাঁচ লাখ করে দেব,’’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঞ্চে তখন জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত প্রাক্তন টেনিস তারকা নরেশ কুমার এবং প্রাক্তন ফুটবলার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের পাশে বসে চুনী গোস্বামী, গুরবক্স সিংহ, সৈয়দ নইমুদ্দিন, আখতার আলি। জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত নরেশকুমার বলে গেলেন, ‘‘সম্মান পেয়ে ভাল লাগছে। তবে সবচেয়ে বড় পাওনা স্কুলের পাঠ্যক্রমে খেলাকে আবশ্যিক করার ঘোষণা। এটা না হলে বাংলার খেলা এগোবে না।’’