ms dhoni

ছক্কা প্রতি পুরস্কার ৫০ টাকা, রাঁচীর যুবকের হেয়ারস্টাইল, বাইকপ্রেমের নেপথ্যে বলি নায়ক

তাঁর ব্যাটের জোরে ‘এ ডিভিশন’-এ উত্তরণ ঘটে সিসিএল-এর। সে সময় ধোনিকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রত্যেক ওভার বাউন্ডারির জন্য পঞ্চাশ টাকা করে দিতেন দেবল।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২০ ১১:৪৫
Share:
০১ ৩২

ব্যাডমিন্টন এবং ফুটবল, দুটোই দারুণ খেলে রাঁচীর ডিএভি জওহর বিদ্যামন্দিরের কম কথা বলা ছাত্রটা। বিশেষ করে ফুটবলে গোলরক্ষকের ভূমিকায় তো তাঁর জুড়ি নেই। এক দিন তাকে অন্য এক খেলার জন্য ডেকে পাঠালেন কোচ। স্থানীয় ক্লাবে উইকেটরক্ষকের প্রয়োজন ছিল।

০২ ৩২

এবং, জীবনে এক দিনও ক্রিকেট না খেলা সেই কিশোর প্রথম দিনই বাজিমাত করল উইকেটকিপিংয়ে। রাঁচীর কম্যান্ডো ক্রিকেট ক্লাবে নিজের অজান্তেই ভবিষ্যতের ইতিহাস লিখেছিল সেই কিশোর। যার পুরো নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।

Advertisement
০৩ ৩২

ধোনির পরিবার আদতে উত্তরাখণ্ডের আলমোরা জেলার। তাঁর বাবা কর্মসূত্রে চলে এসেছিলেন রাঁচীতে। সেখানেই জন্ম মহেন্দ্রর। ১৯৮১-র ৭ জুলাই। বোন জয়ন্তী এবং ভাই নরেন্দ্রর সঙ্গে রাঁচীতেই বেড়ে ওঠা তাঁর।

০৪ ৩২

ক্লাব ও জেলাস্তরের ফুটবল ও ব্যাডমিন্টনে ধোনি ছিলেন উদীয়মান খেলোয়াড়। কিন্তু দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে পছন্দের ঝোঁক ঘুরে গেল বাইশ গজে। দু’চোখ তখন বুঁদ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও সচিন তেন্ডুলকরের পারফরম্যান্সে। আরও এক তারকার ফ্যান ছিলেন ধোনি। তিনি জন আব্রাহাম। তাঁকে দেখেই হেয়ারকাট নিয়ে নিত্যনতুন পরীক্ষানিরীক্ষা করে গিয়েছেন তিনি। বাইকের প্রতি ভালবাসাও জনকে অনুসরণ করেই।

০৫ ৩২

সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস লিমিটেড বা সিসিএল-এর দলে তাঁকে সুযোগ দিলেন দেবল সহায়। তাঁর ব্যাটের জোরে ‘এ ডিভিশন’-এ উত্তরণ ঘটে সিসিএল-এর। সে সময় ধোনিকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রত্যেক ওভার বাউন্ডারির জন্য পঞ্চাশ টাকা করে দিতেন দেবল।

০৬ ৩২

ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর বুনিয়াদ গড়ে তোলার পিছনে ধোনি কৃতজ্ঞতা জানান দেবল সহায়কে। ১৯৯৭-’৯৮ মরসুমে ধোনি সুযোগ পেলেন অনূর্ধ্ব ১৬ বিনু মাঁকড় ট্রফিতে। এর পর বিহারের অনূর্ধ্ব ১৯-এর ধাপ পেরিয়ে রঞ্জি দলে সুযোগ ১৯৯৯-২০০০ মরসুমে।

০৭ ৩২

পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ধোনিকে রঞ্জি দলে সুযোগ পেতে সাহায্য করেছিল বিহারের প্রাক্তন ক্রিকেটকর্তা দেবল সহায়ের রেফারেন্সও। পরে ঝাড়খণ্ডের হয়েও রঞ্জি, দলীপ এবং দেওধর ট্রফি-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজের প্রতিভার পরিচয় দেন ধোনি।

০৮ ৩২

উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে ধোনিকে চিহ্নিত করেন প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রকাশ পোদ্দার। বাংলা ও রাজস্থানের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা প্রকাশ ২০০৩-এ প্রথম ধোনিকে খেলতে দেখেন। জামশেদপুরে ধোনি তখন খেলছিলেন ঝাড়খণ্ডের হয়ে।

০৯ ৩২

ষাটের দশকে বাংলার হয়ে অধিনায়কত্ব করা প্রকাশকে দায়িত্ব দিয়েছিল বিসিসিআই। ছোট শহর থেকে প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারদের চিহ্নিত করার জন্য। তিনি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে জানান ধোনি সম্পর্কে।

১০ ৩২

নির্বাচকদের ও তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখে ধোনি পড়েন ২০০৩-’০৪ মরসুমে। সে সময় তিনি ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে জিম্বাবোয়ে ও কেনিয়া সফর করছিলেন। ৬ ইনিংসে ৩৬২ রান করে ধোনি হয়ে ওঠেন জাতীয় দলে খেলার প্রধান দাবিদার।

১১ ৩২

২০০৪-’০৫ মরসুমে ধোনি প্রথম সুযোগ পান বাংলাদেশ সফরে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার জন্য। প্রথম ম্যাচেই শূন্য রানে রানআউট। মাঝারি মানের সফরের পরেও ধোনি সুযোগ পান পাকিস্তানের বিপক্ষে এক দিনের সিরিজে।

১২ ৩২

প্রাক্তন উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানির সমালোচনা সত্ত্বেও ধোনি ধীরে ধীরে দলে স্থায়ী জায়গা করে নেন। সে সময়কার অন্য উইকেটকিপার পার্থিব পটেল এবং দীনেশ কার্তিককে পিছনে ফেলে ধোনি-ই হয়ে ওঠেন প্রধান উইকেটরক্ষক।

১৩ ৩২

২০০৭-এ বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যায় ভারত। সে সময় দেশ জুড়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন ধোনি। প্রতিযোগিতায় তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ২৯ রান।

১৪ ৩২

কেরিয়ারের এই ছন্দপতনকে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেননি এম এস। বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পরে দ্রুত ছন্দে ফেরেন তিনি। সেইসঙ্গে দলও। ২০০৭-এ ইংল্যান্ড সফরে রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে থাকা ভারতীয় দলের সহ অধিনায়ক ঘোষিত হন ধোনি। সে বছরই সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান তিনি।

১৫ ৩২

ধোনির কেরিয়ারে অন্যতম মাইলফলক ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রতিযোগিতায় ধোনি খুব বেশি রান করতে পারেননি। ৭ ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৫০ রান। কিন্তু এই টুর্নামেন্ট থেকেই ধোনির নামের পাশে জুড়ে যায় ‘ফিনিশার’ পরিচয়।

১৬ ৩২

কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া এবং সেমিফাইলানে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইলানে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় ভারত। ২৭৫ রান তাড়া করতে নেমে ভারতকে জয় তথা বিশ্বকাপ এনে দেয় গম্ভীর, ধোনি এবং যুবরাজের ইনিংস। ৯১ রানে অপরাজিত ধোনি ম্যাচ শেষ করেন ওভার বাউন্ডরিতে।

১৭ ৩২

২০০৭ বিশ্বকাপের অপমানের জ্বালা ২০১১-এ সুদেআসলে এম এস পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু তারও আগে, ‘টিম ইন্ডিয়া’ ধারণা তৈরি করা বঙ্গসন্তানকে অধিনায়কত্ব থেকে অপসারণের পিছনেও যে তিনি সক্রিয় ছিলেন, এমন মতো পোষণ করেন ক্রিকেট ভক্তদের একটা বড় অংশ।

১৮ ৩২

ক্রিকেটপ্রেমী অনেকেরই মত, দলের ভিত নিজের হাতে তৈরি করেও ২০০৩ বিশ্বকাপে শেষ হাসি হাসতে পারেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর তৈরি জমিতেই পরে ধোনি সোনার ফসল ফলিয়েছেন বলে ধারণা অনেকের।

১৯ ৩২

আবার অনেকের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। তাঁদের মতে, ভারতীয় দলের সাফল্যের পিছনে ক্যাপ্টেন কুলের অবদান অনস্বীকার্য। পরিসংখ্যানের দিক থেকেও অধিনায়ক হিসেবে ২৭টি টেস্ট জয় করে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন সৌরভের ২১ টেস্ট জয়ের কৃতিত্বকে। তাঁর নেতৃত্বেই ১১০ টি ওয়ানডে এবং ৪১ টি টি-২০ ম্যাচে জয়ী হয়েছে ভারত।

২০ ৩২

২০১১ বিশ্বকাপের পরেও ধোনির ভারত নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছিল। ২০১৩-এ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরল কৃতিত্বের ভাগীদার হন ধোনি। তাঁর নেতৃত্বে টি২০ বিশ্বকাপও জেতে ভারত। পৃথিবীতে একমাত্র ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির সব ট্রফি জেতার রেকর্ড রয়েছে শুধুমাত্র তাঁর পকেটেই।

২১ ৩২

পরের বিশ্বকাপেও জয়ের দোরগোড়া থেকে কার্যত বিদায় নিতে হয় ধোনির ভারতকে। প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিনি বিশ্বকাপের গ্রুপ স্তরের সব ম্যাচে জয়ী হন। কিন্তু জয়ের স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে যায় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে।

২২ ৩২

২০১৭-র জানুয়ারিতে সীমিত ওভারে ম্যাচে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন ধোনি। তার আগে ২০১৪-র ডিসেম্বরে ছেড়ে দেন টেস্ট ক্রিকেট। ২০১৯-এ তিনি বিরাট কোহালির নেতৃ্ত্বে খেলেন বিশ্বকাপে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নেয় ভারত। ৯ জুলাই খেলা ওই ম্যাচই ধোনির কেরিয়ারের ৩৫০ তম তথা শেষ ওয়ানডে।

২৩ ৩২

২০২০-র ১৫ অগস্ট সবরকম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ধোনি। মনে করা হচ্ছে, করোনা-অতিমারির জেরে আমূল পাল্টে যাওয়া ক্রীড়াসূচিই কার্যত ধোনির স্টাম্প ভেঙে দিল।

২৪ ৩২

তাঁর মতো তারকা ক্রিকেটার করোনাকালে কার্যত আড়ালে থেকেই সরে গেলেন আন্তর্জাতিক আসর থেকে। বিদায়বেলায় মাঠে উপস্থিত থেকে অঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ অধরা থেকে গেল ভক্তদের। অবশ্য ধোনি বরাবরই সবাইকে চমকে দিতে ভালবাসেন।

২৫ ৩২

খেলার সুবাদে চাকরি পেয়েছিলেন ভারতীয় রেলে। খড়গপুর স্টেশনে দু’বছর ছিলেন টিকিট পরীক্ষকের দায়িত্বে। সহকর্মীরা তাঁকে চিনতেন সৎ ও পরিশ্রমী হিসেবে। টিটিই-র কালো কোট থেকে টিম ইন্ডিয়ার নীল জার্সির যাত্রাপথে বার বার তিনি বিস্মিত করেছেন বাকিদের।

২৬ ৩২

মনের ঝড় লুকিয়ে রাখতে সিদ্ধহস্ত এই ক্রিকেটার থামলেন ৯০ টেস্টে ৪৮৭৬ রান করে। সর্বোচ্চ রান ২২৪। ৩০ ওয়ানডে তে তাঁর সংগ্রহ ১০,৭৭৩ রান। সর্বোচ্চ স্কোর আপরাজিত ১৮৩। ৩১৭ টি টি-২০ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৬৬২১। সর্বোচ্চ আপরাজিত ৮৪। ২০১৮-এ তিনি সম্মানিত হন পদ্মভূষণ সম্মানে।

২৭ ৩২

উইকেট কিপিংয়ের রেকর্ডও নজরকাড়া। টেস্টে তিনি কট বিহাইন্ড করেছেন ২৫৬ জনকে। স্টাম্পিংয়ের শিকার ৩৮। ওয়ানডেতে ক্যাচ নিয়েছেন ৩২১ জন ব্যাটসম্যানকে। স্টাম্প করেছেন ১২৩ জনকে। টি ২০ ম্যাচে এই পরিস‌ংখ্যান যথারীতি ১৭০ ও ৮৩।

২৮ ৩২

বর্ণময় কেরিয়ারে বার বার ধোনির নাম জড়িয়েছে বলিউড তারকাদের সঙ্গে। দীপিকা পাড়ুকোন, রাই লক্ষ্মী থেকে আসিন, বিভিন্ন সময়ে ধোনির সঙ্গে শোনা গিয়েছে এই নায়িকাদের গুঞ্জন।

২৯ ৩২

সব গুঞ্জন বন্ধ করে ধোনি সাতপাকে বাঁধা পড়লেন ২০১০-এর জুলাই মাসে। জীবনসঙ্গীর সাক্ষীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে। দেহরাদূনের মেয়ে সাক্ষী সেখানে ট্রেনি ছিলেন। চিনতে না পেরে তিনি ধোনির কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছিলেন। নিজের কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকা তরুণীই মন জয় করে নিয়েছিলেন তারকা ক্রিকেটারের।

৩০ ৩২

২০১৫-এ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হওয়ার ঠিক আগে বাবা হন ধোনি। মেয়েকে দেখেছিলেন বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে। কাপ জিততে না পারার দুঃখ অনেকটাই প্রশমিত করেছিল সদ্যোজাত কন্যার হাসিমুখ।

৩১ ৩২

রেলের টিকিট পরীক্ষক থেকে ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক হওয়ার যাত্রাপথে লুকিয়ে আছেন আরও এক জন। তিনি ধোনির প্রথম প্রেমিকা। শোনা যায়, তরুণীর নাম ছিল প্রিয়ঙ্কা ঝা। তাঁর সঙ্গেই বাকি জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন ধোনি। ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে ধোনি যখন বিদেশে সফররত, সে সময় এক পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল প্রিয়ঙ্কার, যিনি সাক্ষী এবং সঙ্গী ছিলেন ধোনির প্রথমপর্বের জীবনসংগ্রামের।

৩২ ৩২

তাঁর এই জীবনসংগ্রামকে যিনি সেলুয়েলেড রূপায়িত করেছিলেন, সেই সুশান্ত সিংহ রাজপুত কয়েক মাস আগে পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। এ বার ধোনিও বছরের বেশির ভাগ সময়ের জন্য সিন্দুকবন্দি করে ফেললেন তাঁর ব্যাট-প্যাড। মাহির আইকনিক হেলিকপ্টার শট আর থাকল না জাতীয় দলের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement