বিশ্বসেরা লভলিনা। অলিম্পিক্সে পদকের পর এ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পেলেন তিনি। ছবি: পিটিআই
বক্সিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের ঘরে আরও একটি সোনা। রবিবার ফাইনালে ৭৫ কেজি বিভাগে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাটলিন অ্যান পার্কারকে হারালেন লভলিনা বরগোঁহাই। ভারতের ঘরে চতুর্থ সোনা চলে এল। যে চার জন ফাইনালে উঠেছিলেন, প্রত্যেকেই সোনা জিতলেন। অলিম্পিক্সের পর এ বার বিশ্বসেরা হয়ে গেলেন লভলিনা।
গত বছর অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন লভলিনা। সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলেন তুরস্ক এলনাজ সুরমেনেলির কাছে। কিন্তু দেশের মাটিতে হওয়ার বক্সিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কোনও ভুল করেননি তিনি। প্রথম থেকেই প্রত্যয়ী ছিলেন সোনা জয়ের ব্যাপারে। সামনে যে প্রতিপক্ষ এসেছে, উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁকেই। ফাইনালেও দেখা গেল একই রকম দাপট। প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দিলেন না।
অলিম্পিক্সের পদক জেতার পর রাতারাতি খ্যাতির শিরোনামে চলে এসেছিলেন। অসমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তাঁর উঠে আসার কাহিনী অনুপ্রাণিত করেছিল অনেককেই। অলিম্পিক্সে পদক জিতে ফেরার পর তাঁকে বরণ করে নিয়েছিল গোটা গ্রাম। বাড়িতে ব্যাপক ভুরিভোজ হয়। সে সময় লভলিনা বলেছিলেন, অলিম্পিক্সে সোনা জিতে তার পরে বিয়ের কথা ভাববেন। কিছু মাস পরে জানা যায়, তিনি ইতিমধ্যেই বিবাহিত। সেই বিবাহে সমস্যা থাকায় বিচ্ছেদ চেয়েছেন স্বামীর কাছে। আগে কখনও নিজের বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আনেননি তিনি।
তার পরে কমনওয়েলথ গেমসের আগে বিতর্কে জড়ান। তাঁর কোচকে গেমস ভিলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে এক হাত নেন বক্সিং ফেডারেশনকে। পরে অনুমতি মেলে। কিন্তু পাল্টা লভলিনাকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি কর্তারা। এক কর্তা বলেও দেন, লভলিনার মানিয়ে নেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। কমনওয়েলথে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়ে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু মনোযোগ ঠিক রেখে বিশ্বমঞ্চে সাফল্য পেলেন অসমের বক্সার।
রবিবার সন্ধেয় ফাইনালে সোনা জেতেন নিখাত জ়ারিন। ভিয়েতনামের গুয়েন থি তামকে ৫-০ ব্যবধানে হারান। প্রথম থেকেই বিপক্ষকে চাপে রেখেছিলেন তিনি। থি তাম কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। জ়ারিনের দ্বিতীয় বার সোনা জেতার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
জ়ারিনের জন্ম তেলেঙ্গনার নিজ়ামাবাদে। এমন একটি জায়গায় থাকতেন তিনি, যেখানে মেয়েদের ছোট জামাকাপড় পরাকে ভাল চোখে দেখা হত না। কিন্তু বক্সিং লড়তে গেলে শর্টস তো পরতে হবেই। ফলে জ়ারিন যখন বক্সিং শুরু করেছিলেন, তখন নাক সিঁটকেছিলেন অনেকেই। কিন্তু গত বছর বিশ্বসেরা হয়ে সবার মুখ বন্ধ করে তিনি। দ্বিতীয় বার সোনা জিতে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে পার করেও বিশ্বমঞ্চে সফল হওয়া যায়।
শনিবার লাইট ফ্লাইওয়েট বিভাগের ফাইনালে মঙ্গোলিয়ার প্রতিযোগী লুৎসাইখান আলতানসেতসেগকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জেতেন নীতু। ভারতকে দ্বিতীয় সোনা এনে দেন সুইটি বোরা। লাইট হেভিওয়েট (৮১ কেজি) বিভাগে তিনি হারান চিনের ওয়াং লিনাকে। ভারতের সপ্তম বক্সার হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতন সুইটি।