মেরি কম ছবি পিটিআই।
টোকিয়ো অলিম্পিক্স এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে একইসঙ্গে ভাল এবং খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। ভাল অবশ্যই মীরাবাই চানুর ভারোত্তোলনে রুপো জেতার জন্য। কিন্তু অন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় হতাশার ছবিটাও স্পষ্ট। এর মধ্যেই মন ভাল করে দিয়েছে মঙ্গলবার আমাদের হকি দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের গ্লানি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্পেনকে হারানোয়।
অবশ্য শুধু হকি নয়। চমকে দিয়েছে আমাদের এক বক্সার, লাভলিনা বরগোহাঁইও। জার্মান বক্সার নাদিন আপাতেজ়কে ৩-২ ফলে হারানোটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না! দেখলাম, ম্যাচে ও নিজের বক্সিংয়ের ধরন খানিকটা পাল্টে লড়াইটা জিতল। বেশি মন দিয়েছিল পয়েন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশলে। কোয়ার্টার ফাইনালে ওর সামনে পড়েছে চিনা তাইপে-এর চেন নিয়েন-চিন। যার অর্থ দাঁড়াল, অলিম্পিক্স পদক নিশ্চিত করতে আর একটা কঠিন পরীক্ষায় সফল হতেই হবে লাভলিনাকে।
আমাদের বড় একটা আশার জায়গা মেরি কমও ওর প্রথম ম্যাচটায় দারুণ লড়েছে। এ বার ওকে হারাতে হবে ইনগ্রিট ভ্যালেন্সিয়াকে। বক্সিংপ্রেমীদের মনে থাকতে পারে, দিল্লিতে মেয়েদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মেরি কিন্তু কলম্বিয়ার ইনগ্রিটকেই ৫-০ হারিয়েছিল ২০১৬-তে। আমার তো মনে হয়, ভারতের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মহিলা বক্সারের পক্ষে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানো ভাল মতোই সম্ভব। মনে আছে, সে বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ও ফ্লাইওয়েটে ব্রোঞ্জ পদকও পেয়েছিল।
বক্সিংয়ে সবাই যে জিতছে এমন নয়। তবু আমি আশাবাদী সিমরনজিৎ কৌরকে নিয়ে। ওর প্রতি আমার বার্তা একটাই। জাতীয় শিবিরে পুরুষ বক্সারদের কে কী করল, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না। নিজেকে তৈরি করে বিপক্ষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমার নিজের তিনটি অলিম্পিক্সে নামার অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এমন কথা বলতে পারছি।
কেউ কেউ যে খুব খারাপ লড়ে বিদায় নিয়েছে, তা কিন্তু নয়। লাইটওয়েট বিভাগে লিউক ম্যাকরমাকের বিরুদ্ধে মনীশ কৌশিক তো রীতিমতো লড়াই করে একটুর জন্য হেরেছে। এমনিতে আমি হতাশ হয়েছি বিকাশ কৃষাণের পারফরম্যান্সে। ওকে হারিয়েছে ২০১৯-এর এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালিস্ট জাপানের সেয়োন ওকাজ়াওয়া। আমি ভাবিইনি যে বিকাশ পারবে না! এই ম্যাচে আগাগোড়া আমার বাজি ভারতীয় বক্সারই ছিল। ভুললে চলবে না বিকাশও এশিয়ান গেমসের মিডলওয়েটে ব্রোঞ্জ জিতেছিল ১৯১৮-তে।
খারাপ লাগছে আশিস কুমারও হেরে গিয়েছে ভেবে। মিডলওয়েটে ওকে হারিয়েছে এরবিয়েক তুয়োহেতা। এখন যা অবস্থা, তাতে মিডলওয়েটে থাকার মধ্যে শুধু অমিত পঙ্ঘাল। প্রি-কোয়ার্টারে ওকে হারাতে হবে কলম্বিয়ার ইয়োবারজান মার্তিনেজ়কে। যে রিয়ো অলিম্পিক্সের রুপোজয়ী। সে যাই হোক, আমার ধারণা অমিতই জিতবে। জিতলে শেষ আটে ওকে লড়তে হবে জাপান বা চিনের বক্সারের বিরুদ্ধে। আমার মনে হয়, নিজের বিভাগে বিশ্বের এক নম্বর থেকে লড়তে পারাটা বিরাট সুবিধে। বিচারকদের মাথায় কিন্তু সবসময়ই এই ব্যাপারটা থাকবে। সেই সঙ্গে চাপে থাকবে ওর প্রতিপক্ষরাও।
এমনিতে আমাদের বক্সিং আর কুস্তির দলে যথেষ্ট প্রতিভা রয়েছে। পদক নিয়ে ওরা দেশে ফিরতেই পারে। উন্মুখ হয়ে আছি বজরং পুনিয়া আর বিনেশ ফোগত কী করে দেখার জন্যও। আমি নিশ্চিত, বহুদিন বিদেশে অনুশীলন করার সুবিধাটাও ওরা পাচ্ছে। আমারও যে অভিজ্ঞতা আছে। সঙ্গে নিজেকে তৈরি রাখতে বিদেশে বড় প্রতিযোগিতাতেও নামা দরকার।