দাদা-ভাইয়ের যুগলবন্দির উদাহরণ যেমন ভারতীয় ক্রিকেটে আছে, তেমনই এর উল্টোটাও রয়েছে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে এক ভাই তারকা ক্রিকেটার আর অন্য ভাই প্রায় অচেনা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্য ভাইয়ের ক্রিকেট সত্তাও নেই। দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু দাদা-ভাইয়ের জুটিকে।
বিরাট কোহালি ও বিকাশ কোহালি। বিরাটের ভাই জড়িত সঙ্গীত জগতের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গীত ঘরানার মধ্যে রয়েছে জ্যাজ, হিপ হপ, পাঙ্ক, মেটাল, কান্ট্রি বলিউড পপ সঙ্গীত। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব পড়েছিল বিকাশের কাঁধে। তিনিই টেনেছিলেন সংসার।
বিরাটের সঙ্গে বিকাশের সম্পর্ক ভাল। দু’জনের কাজের মধ্যে মিল না থাকলেও মানসিক দূরত্ব নেই। তা সে বিরাট যতই এখন ভারত অধিনায়ক হন না কেন। বিরাটও পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে থাকেন সচেতন।
রোহিত শর্মা ও বিশাল শর্মা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হিটম্যান নিজস্ব জায়গা করে ফেলেছেন। গত বছর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে পাঁচ সেঞ্চুরি করে গড়েছেন নজির। এক দিনের ক্রিকেটে তিন বার ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। যা রেকর্ড। এই ফরম্যাটে ২৬৪ রানের শিখরেও তিনি। কিন্তু, তাঁর এক ভাইও আছে, যাঁর নাম শোনাই যায় না কার্যত।
রোহিতের সেই ভাইয়ের নাম বিশাল। রোহিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। বিশাল ইনস্টাগ্রামে প্রবল সক্রিয়। তাঁর কাজের ক্ষেত্রে সাহায্যও করেন রোহিত। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যে ভাল, তা বিশালের তোলা ইনস্টাগ্রাম ছবিতে সপরিবারে রোহিতের উপস্থিতিতেই প্রতিফলিত।
যুবরাজ সিংহ ও জোরাবর সিংহ। সাদা বলের ক্রিকেটে যুবরাজ চিহ্নিত ম্যাচ-উইনার হিসেবে। তাঁর পকেটে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন যুবি। শুধু বাইশ গজেই নয়, ক্যানসারকে হারিয়ে যুবির মাঠে ফেরাও অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার।
যুবরাজের ভাই জোরাবর তেমন নাম করতে পারেননি। একসময় অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও স্থায়ী জায়গা পাননি। বরং তাঁর বিবাহ-বিচ্ছিন্না স্ত্রী বিগ বসে গিয়ে নানা মন্তব্য করেছিলেন, যা তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলেছিল।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও নরেন্দ্র সিংহ ধোনি। বলা হয় যে দুই ভাইয়ের সম্পর্ক খুব একটা স্বাভাবিক নয়। ধোনির বায়োপিকে নরেন্দ্রর কোনও ভূমিকা ছিল না। যা এই জল্পনায় ইন্ধন দিয়েছিল। কিন্তু নরেন্দ্র তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন সোজাসুজি। বলেছিলেন, ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দারুণ।
নরেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছিলেন, “বায়োপিকে আমার চরিত্র দেখানো হয়নি কারণ, ধোনির জীবনে আমার তেমন কোনও ভূমিকা ছিল না। ছোটবেলাই হোক বা তরুণ হিসেবে লড়াইয়ের দিনগুলো বা বিশ্বক্রিকেটে ওর এমএসডি হয়ে ওঠার সময়, আমার অবদান কোনও সময়েই ছিল না। আর সিনেমাটা ছিল মাহিকে নিয়ে, ওর পরিবারকে নিয়ে নয়।”
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির মহারাজ ও রাজ। দাদা স্নেহাশিসকে দেখেই ক্রিকেটে আগ্রহ বেড়েছিল সৌরভের। বাঁ-হাতে ব্যাট করতে শুরু করেন তিনি। আবার দাদার জায়গাতেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সৌরভের। রঞ্জি ফাইনালে ইডেনে অভিষেকে ছোট্ট ইনিংসে নজরও কেড়েছিলেন।
স্নেহাশিস বাংলার হয়ে বছর দশেক ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপটে খেলেছেন। এখন তিনি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-র সচিব। আর ভারতের সফলতম ক্যাপ্টেনদের অন্যতম সৌরভ এখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তার আগে সিএবি-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ক্রিকেটার জীবনের মতো প্রশাসক হিসেবে কেরিয়ারেও তিনি যথেষ্ট উজ্জ্বল।
রাহুল দ্রাবিড় ও বিজয় দ্রাবিড়। রাহুল দ্রাবিড়ের ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে অবদান রয়েছে দাদা বিজয়ের। দু’জনের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় তাঁদের মধ্যে। তবে ক্রিকেটার ভাইয়ের ছায়ায় ঢাকাই থেকেছেন বিজয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রাবিড় কেরিয়ার জুড়ে ভরসা দিয়েছেন দলকে। টেস্ট ও এক দিনের ক্রিকেট, দুই ঘরানাতেই দিয়েছেন নেতৃত্ব। খেলা ছাড়ার পর এখন কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।