সেরা: রেকর্ড গড়ে সোনা কিনিয়ার বার্সোটনের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
রেকর্ড ভাঙার ছড়াছড়ি কলকাতার জনপ্রিয় দৌড় প্রতিযোগিতা ২৫কে-তে। রবিবার পুরুষদের (এলিট) বিভাগে কিনিয়ার লিয়োনার্ড বার্সোটন সোনা জিতলেন এই প্রতিযোগিতায় নতুন রেকর্ড করে। ২৫ কিমি দৌড়াতে তিনি সময় নিলেন ১ ঘণ্টা ১৩. ০৫মিনিট। দু’বছর আগে ২০১৭ সালে এই প্রতিযোগিতায় নতুন রেকর্ড করেছিলেন ইথিয়োপিয়ার কেনেনিসা বেকেলে। তিনি সময় করেছিলেন ১ ঘণ্টা ১৩.৪৮ মিনিট।
নতুন রেকর্ড গড়ে সোনা জেতার পরে লিয়োনার্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দু’সপ্তাহ আগে জানতাম না কলকাতায় আসতে পারব কি না। সেখানে কেনেনিসা বেকেলের মতো বিখ্যাত দৌড়বীরের রেকর্ড ভেঙে দারুণ লাগছে। কলকাতা ২৫কে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার জীবনে।’’ যোগ করেন, ‘‘চলতি বছরে সাফল্য পাওয়ার জন্য শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলাম। রাতে শুতে দেরি না করার পাশাপাশি, সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠতাম। অনুশীলনে কোনও খামতি রাখিনি। তার ফল পাচ্ছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রথম ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত অন্য অ্যাথলিটদের সঙ্গেই দৌড়িয়েছি। কিন্তু শেষের পাঁচ কিলোমিটারে ওদের পিছনে ফেলে নিজের ছন্দে দৌড়েছি।’’ পদক প্রাপ্তির পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বার্সোটন জানিয়ে দেন, এর পরে দুবাইয়ে ম্যারাথন দৌড়াতে যাবেন তিনি।
পুরুষদের বিভাগে রুপো ও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন ইথিওপিয়ার বেতেসফা গেটাহুন (১ ঘণ্টা ১৩.৩৩ মিনিট) ও বেইলিন ইয়েগস (১ ঘণ্টা ১৩.৩৬ মিনিট)। এই দু’জনেও ভেঙেছেন কেনেনিসার রেকর্ড।
মেয়েদের বিভাগে (এলিট) বিভাগে সোনা জিতলেন এথিয়োপিয়ার গুটেনি শোন। তিনি সময় করেছেন ১ ঘণ্টা ২২.০৯ মিনিট। তিনিও ভেঙেছেন এই প্রতিযোগিতায় আগের রেকর্ড। মহিলাদের বিভাগে এতদিন কম সময়ে দৌড় শেষ করার রেকর্ড ছিল ডেগেটু আজ়িমেরোর। তিনি তিন বছর আগে ২৫কে দৌড় শেষ করতে সময় করেছিলেন ১ ঘণ্টা ২৬.০১ মিনিট। চ্যাম্পিয়ন হয়ে গুটেনি বলেন, ‘‘সোনার পদকের সঙ্গে নতুন রেকর্ড তৈরি করে ভালই লাগছে। আবহাওয়া একটু উষ্ণ ছিল। অনেক বাঁক অতিক্রম করে এগোতে হয়েছে। তাই ক্লান্তি বেড়েছে।’’
এই বিভাগে রুপো ও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন বাহরিনের ডেসি জিসা (১ ঘণ্টা ২৩.৩২ মিনিট) ও টেজিটু ডাবা (১ ঘণ্টা ২৪.৩২ মিনিট)।
ভারতীয় পুরুষদের বিভাগে সোনা পেয়েছেন শ্রীনু বুগাথা। আর ভারতীয় মেয়েদের বিভাগে সোনা পেয়েছেন কিরণজিৎ কৌর। সোনা জিতে শ্রীনু বলেন, ‘‘এর আগে কলকাতায় এই প্রতিযোগিতায় দৌড়াতে এসে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। কিন্তু এ বার হয়ে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে।’’
ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন বাংলার মেয়ে শ্যামলী সিংহ। মেদিনীপুরের মেয়ে শ্যামলীর বয়স ২৬ বছর। কৃষক পরিবারে বড় হয়েছেন। দু’বছর আগে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও উদ্যম হারাননি। চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের জন্য মুম্বই ম্যারাথনে দৌড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এ দিন রুপো পেয়ে শ্যামলী বলে যান, ‘‘চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ের জন্যই মুম্বই ম্যারাথনে দৌড়েছিলাম। আমার স্বামী সন্তোষ হলেন কোচ। এখনও পাকস্থলীতে ব্যথা হয়। তবে দৌড় ছাড়ব না। পাঁচ ও দশ হাজার মিটার, ১০ কিলোমিটার, ২৫ কিলোমিটার, হাফ ও পুরো ম্যারাথন দৌড়াতে চাই আগামী দিনে।’’ দু’বছর আগেই ক্যানসারে অস্ত্রোপচার করিয়ে আপাতত রোগমুক্ত শ্যামলী।
রবিবার এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ১৫, ৪৪৫ জন। তাঁদের উৎসাহ দিতে হাজির ছিলেন প্রাক্তন আর্জেন্টিনীয় বিশ্বকাপার এর্নান ক্রেসপো। অভিনেতা রাহুল বোস। সকালে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপালও।