আলো-অন্ধকার: অনবদ্য ফিটনেসের নিদর্শন। লং অন থেকে অনেকটা ছুটে এসে হেটমায়ারের অসাধারণ ক্যাচ নিলেন কোহালি। মাটিতে পড়েও ছুঁলেন না বাউন্ডারি লাইন।
হায়দরাবাদে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি বলেছিল, রান তাড়া করা এই ভারতীয় দলের অন্যতম শক্তি।
রবিবার তিরুঅনন্তপুরমে যখন টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল, তখন বিরাটের ওই কথাটা মনে পড়ছিল। মন আরও বলছিল, শিশির ভেজা মাঠে শুরুতে ফিল্ডিং করে নিলেই অনেক চিন্তামুক্ত ভাবে খেলতে পারত ভারতীয় দল।
সেই চিন্তা যে ঠিক ছিল, তা বোঝা গেল খেলার শেষ লগ্নে এসে। শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারত করেছিল ১৭০-৭। জবাবে নয় বল বাকি থাকতেই ১৮.৩ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান তুলে আট উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলার ও ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় সিরিজ আপাতত ১-১।
আমার মতে, এ দিন ভারত ম্যাচটা হারল ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়। যে ছবিটা হায়দরাবাদ থেকে তিরুঅনন্তপুরমে এসেও পাল্টায়নি। ফের এই ম্যাচেও সহজ ক্যাচ ধরতে পারল না ওয়াশিংটন। বলের লাইনেই ছিল না ও। কেন এক ভুল বার বার, তা ভারতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরের কাছে জানতে চাওয়া হোক।
আরও পড়ুন: বিরাটকে ফিরিয়ে উইলিয়ামসের নতুন উৎসব ভঙ্গিতে চাঞ্চল্য
পিচে বাউন্স নেই। শিশির পড়ছে। এ রকম মাঠে ভারতের করা ১৭০-৭ খুব একটা খারাপ রান নয়। কিন্তু ম্যাচটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে ঘুরে গেল সেই ফিল্ডিং ব্যর্থতায়। পাওয়ার প্লে চলার সময় পঞ্চম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে মিড অফে দাঁড়িয়ে লেন্ডল সিমন্সের সহজ ক্যাচ ফেলল ওয়াশিংটন। তার এক বল পরেই এভিন লুইসের ক্যাচ বাঁ দিকে ঝাঁপিয়েও ধরতে পারল না ঋষভ পন্থ। একজন প্রাক্তন উইকেটকিপার হিসেবে আমি মনে করি ওই ক্যাচ ধরা উচিত ছিল ঋষভের। লুইস বাঁ হাতি। ও বলটা মারার জন্য অনসাইডে সরে গিয়েছিল। ফলে ঋষভ কিন্তু অনেকক্ষণ বলটা দেখেছে। ও যদি অফসাইডে সরে গিয়ে তার পরে ঝাঁপাত, তা হলে ক্যাচটা ঋষভের হাতে আসত। কিন্তু ঋষভ যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেখান থেকেই ঝাঁপিয়েছে বলেই ক্যাচটা ধরতে পারেনি।
লেন্ডল সিমন্স তার পরে ৪৫ বলে অপরাজিত ৬৭ রান করল। আর লুইস করল ৪০রান। ম্যাচটা
ওখানেই ঘুরে গেল।
১৪তম ওভারে রবীন্দ্র জাডেজার বলে লং অন থেকে ডান দিকে ছুটে এসে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শিমরন হেটমায়ারের (২৩) ক্যাচ ধরল বিরাট কোহালি। অনবদ্য। যে ভাবে ক্যাচটা ধরার পরে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখল, তা প্রশংসনীয়। আসলে বিরাট এ সব কঠিন ক্যাচ ধরতে পারে ফিটনেসের শিখরে থাকার জন্য। আর ওয়াশিংটনরা সহজ ক্যাচ ফেলে ফিটনেস ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে।
এ দিন সিমন্স ম্যাচ সেরা হলেও আমার নজর কাড়ল নিকোলাস পুরান। ছেলেটার হাতে সাবলীল স্ট্রোক আছে। শট নির্বাচন চমৎকার। ভাল পুল ও ড্রাইভ মারতে পারে। ১৮ বলে অপরাজিত ৩৮ রান করে ও ভারতীয়দের ম্যাচে ফিরতেই দেয়নি।
পরের ম্যাচ মুম্বইয়ে। সেই ম্যাচে দলে বদল দরকার। ওয়াশিংটন সুন্দরকে দেখা হয়ে গিয়েছে। ওর জায়গায় কুলদীপ যাদবকে ফেরানো হোক। মুম্বইয়ের পিচে বাউন্স আছে। সেখানে রিস্টস্পিনার কুলদীপের সঙ্গে যুজবেন্দ্র চহালকে খেলা সহজ হবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে। কুল-চা জুটিকে ফেরাতেই হবে। দীপক চাহারকে বুঝতে হবে ওর বলে যা জোর, তাতে সিমন্সদের শর্ট বল না করাই শ্রেয়। মুম্বইয়ে ওর জায়গায় শামিকে খেলানো যেতেই পারে।
ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়ে এ দিন, অধিনায়ক বিরাট কোহালি তিন নম্বরে নিজে না নেমে পাঠিয়েছিল শিবম দুবেকে। ও শুরুতে ব্যাটে-বলে করতে পারছিল না। কিন্তু আট ওভারের মাথায় জেসন হোল্ডারকে ডিপ স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মেরে ছন্দে ফেরে। বোঝা গেল, পাওয়ার হিটার শিবমকে দিয়ে স্কোরবোর্ডে দ্রুত রান যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। শিবম বাঁ হাতি। সেই সময়ে বাঁ হাতি স্পিনার বল করছিল। ফলে ওকে নামানোর সিদ্ধান্ত ঠিক। মুম্বইকর এই অলরাউন্ডার ঘরোয়া ক্রিকেটে বিধ্বংসী মেজাজে খেলে। এর আগে রঞ্জি ট্রফি ও মুম্বই প্রিমিয়ার লিগে এক ওভারে পাঁচটি ছক্কা মারার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছেলেটার ব্যাটিংয়ের বিশেষত্ব হল, হাই ব্যাক লিফ্ট। ব্যাটের সঙ্গে বলের সংযোগটা ভাল। অপেক্ষা করে খাটো লেংথের বলের জন্য। এ দিন ৩০ বলে চারটি ছক্কা ও তিনটি চার সহযোগে ৫৪ রান করে ভারতীয় দলের রান ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাইরের বল চালাতে গিয়ে আউট না হলে আরও বড় রান করতে পারত।