অপেক্ষা: চহালের সঙ্গে ফের জুটি বাঁধতে চান কুলদীপ। ফাইল চিত্র
নতুন বছরে নতুন শপথ নিয়ে লড়াই শুরু করতে চান কুলদীপ যাদব।
গত এক বছর যে তাঁর খুব কঠিন সময় গিয়েছে, এটা মানছেন ভারতের এই চায়নাম্যান বোলার। যে কারণে নতুন বছরের লক্ষ্যও স্থির করে নিয়েছেন কুলদীপ। বৃহস্পতিবার, ভারত-শ্রীলঙ্কা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিকদের কুলদীপ বলেন, ‘‘২০১৯ সালটা আমার জন্য খুব কঠিন গিয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বুঝতে পেরেছি যে, প্রত্যেক ম্যাচের আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে মাঠে নামা দরকার। তাই এখন থেকে সেটাই আরও ভাল ভাবে করতে চাই।’’
গত বছর আইপিএল থেকে খারাপ সময় শুরু হয় কুলদীপের। ইডেনে মইন আলি তাঁর বোলিংয়ে এক ওভারে ২৭ রানও তুলেছিলেন। যার পরে কেঁদেও ফেলেন এই তরুণ বাঁ-হাতি স্পিনার। কুলদীপ বলছেন, ‘‘এখন বুঝতে পারছি, আমি যদি নিজের বোলিং নিয়ে আর একটু ভাবতাম, আর একটু সময় দিতাম, তা হলে গত বছরে ভাল বল করতে পারতাম।’’
যে ভুলটা তিনি করেছেন, তার আর পুনরাবৃত্তি চান না ২০২০ সালে। নতুন বছরে নিজের সামনে কী লক্ষ্য রেখেছেন, তাও জানিয়েছেন কুলদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘এই বছর আমি ঠিক করেছি প্রতিটা ম্যাচের আগে ভাল করে পরিকল্পনা ছকে নেব। আর নিজেকে আরও সময় দেব। যেটা খুবই জরুরি। পরের ম্যাচটায় কী রকম বল করব, সেটা ভাবার জন্য সময় দরকার। এই বছরটা আমি মানসিক ভাবে আরও তৈরি থাকতে চাই।’’
কী ভাবে নিজেকে আরও উন্নত করতে চান কুলদীপ? কী ভাবে পরিকল্পনা করতে চান? জবাব আসে, ‘‘আমি অবশ্যই ভিডিয়ো বিশ্লেষকের সঙ্গে বসব। নেট প্র্যাক্টিসে আমাদের বোলিং কোচ বি অরুণের সঙ্গে কথা বলব। দেখব, কোন ব্যাটসম্যানের কোথায় দুর্বলতা আর কী ভাবে সে খেলে।’’
গত কয়েকটা সিরিজে দেখা গিয়েছে, ভারতের সেই বিখ্যাত ‘কুল-চা’ জুটি ভেঙে গিয়েছে। অর্থাৎ চায়নাম্যান কুলদীপ এবং লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল একসঙ্গে খেলছেন না। আপনি কি আবার চহালের সঙ্গে বল করতে চান? এ বার সতর্ক কুলদীপের মন্তব্য, ‘‘এখন পর্যন্ত দেখছি এক জন স্পিনারই খেলছে। আমি জানি না সাপোর্ট স্টাফ এই নিয়ে কী ভাবছে। তবে আশা করব, পরের ম্যাচে একসঙ্গে খেলতে পারব। তা ছাড়া অনেক ম্যাচ আছে সামনে। আশা করছি, আমাদের দু’জনের একসঙ্গে খেলার সুযোগ ঠিক আসবে।’’
এর পরেই কুলদীপ জানাচ্ছেন, নতুন বছরে চমক দিতে চান তিনি। কী ভাবে? কুলদীপের মন্তব্য, ‘‘এখন সবাই জানে কুলদীপ কী ভাবে বল করে। সবাই জানে, ও এক জন চায়নাম্যান বোলার, যার হাতে গুগলিও আছে। ফ্লিপারটাও দিতে পারে। কিন্তু আমার বোলিংয়ে এ বার কিছু বদল আনতে চাই। এমন কিছু বদল আনতে হবে যাতে ব্যাটসম্যান আমার বলটা ধরতেই না পারে।’’
কুলদীপের মুখে শোনা গিয়েছে দলের ফাস্ট বোলারদের প্রশংসাও। এই বাঁ-হাতি স্পিনার মনে করছেন, ফাস্ট বোলাররা চাপ কমিয়ে দেওয়ায় স্পিনাররা নানা রকম পরীক্ষা করতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্পিনারদের উপরে এখন চাপটা কম পড়ছে। এই তো ইনদওরের শেষ ম্যাচটায় আমি যখন বল করতে এলাম, ১০ ওভার হয়ে গিয়েছে। পেসাররা আমাদের ভাল জায়গায় নিয়ে এসেছিল। ফলে স্পিনাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পেরেছে।’’ কুলদীপ এও বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে পেসাররা প্রচুর রান দিয়ে ফেলে। তখন স্পিনারদের রান আটকানোর জন্য বল করতে হয়। কিন্তু আমাদের পেসাররা এত ভাল বল করছে যে, স্পিনারদের পরীক্ষা চালাতে সমস্যা হচ্ছে না।’’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বল করতে এলে আপনার লক্ষ্য কী থাকে? উইকেট তোলা না রান আটকানো? কুলদীপের জবাব, ‘‘যদি বিপক্ষের একটা-দুটো উইকেট পড়ে যায়, তা হলে তখন রান আটকানোটা লক্ষ্য থাকে। আবার যদি দেখি একটা বড় জুটি তৈরি হচ্ছে, তা হলে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি যদি কোনও জমে যাওয়া ব্যাটসম্যানকে বল করি, তা হলে লক্ষ্য থাকে উইকেট নেওয়া। কারণ তখন উইকেট নিতে পারলে বিপক্ষের উপরে চাপ তৈরি করা যায়। আবার যখন আমরা পরে বল করি, তখন রান আটকানোর উপরে বেশি নজর দিই।’’
ইনদওরে ৩৮ রান দিয়ে দু’উইকেট নেন কুলদীপ। দেখা গিয়েছে, তিনি ব্যাটসম্যানদের অফস্টাম্পের বাইরে বাইরে বল করছিলেন। কেন? কুলদীপ জানাচ্ছেন, বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই বল করেছেন তিনি। কুলদীপের কথায়, ‘‘ইনদওরের মাঠটা ছোট ছিল। ছোট মাঠে এক রকম পরিকল্পনা নিয়ে বল করতে হয় আবার বড় মাঠে আর এক রকম। ইনদওরে ছোট মাঠ বলে আমি ব্যাটসম্যানদের থেকে একটু দূরে বলটা রাখতে চাইছিলাম।’’