গত তিন বছর ধরে বিরাট কোহালির ভারত দেশে-বিদেশে উপহার দিয়েছে অনেক স্মরণীয় জয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরের মতো এত খারাপ সময় আর আসেনি। ওয়ানডে সিরিজে ০-২ হারার পর এ বার টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের খাঁড়া ঝুলছে বিরাটদের মাথার উপর। শনিবার থেকে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট। তার আগে প্রথম টেস্ট থেকে ভারতীয় দলের যে দুর্বলতা ও সাফল্যের রুপোলি রেখাগুলো বেরিয়ে এল, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
ইশান্ত শর্মার বোলিং যেমন ইতিবাচক দিক। ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের গোড়া থেকে ধরলে মাত্র ১৯ গড়ে ৭১ উইকেট নিয়েছেন দিল্লির পেসার। এখনও পর্যন্ত কেরিয়ারে ২৯৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে ৯৮টি ভারতে। মানে, অধিকাংশ উইকেটই তিনি নিয়েছেন দেশের বাইরে।
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের শেষ সফরে তিন টেস্টে মাত্র ২৩ গড়ে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন ইশান্ত। নিউজিল্যান্ডেও ছন্দে দেখিয়েছে তাঁকে। চোট সারিয়ে এসেই ফর্মে বল করেছেন তিনি। যা কোহালিকে নিশ্চয়ই স্বস্তি দিচ্ছে। ৩১ বছর বয়সি ইশান্তের থেকে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেও এমন পারফরম্যান্স দেখতে চাইছে ভারতীয় দল।
কিন্তু একা ইশান্ত যে টেস্ট জেতাতে পারবেন না, তা দেখা গিয়েছে ওয়েলিংটনেই। আর সেই কারণেই যশপ্রীত বুমরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চোট সারিয়ে ওঠার পর পুরনো মেজাজে বল করতে পারছেন না তিনি। ছয় ওয়ানডে ম্যাচে ২৮৭ রান দিয়ে নিয়েছেন মোটে একটি উইকেট। ডেথ ওভারে বিশ্বের ভয়ঙ্করতম বোলার মোটেই দেখাচ্ছে না তাঁকে।
ওয়েলিংটনে পেস সহায়ক পরিবেশেও একটার বেশি উইকেট তিনি পাননি। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট বা ইশান্ত শর্মার মতো যে কোনও সময় উইকেট আসতে পারে, এমন বোলারও দেখায়নি তাঁকে। চোট সারিয়ে ফিরছেন বলে হয়তো সময় লাগছে। কিন্তু ভারতকে দ্বিতীয় টেস্ট জিততে হলে বুমরাকে বিধ্বংসী হয়ে উঠতেই হবে।
অধিনায়ক বিরাট কোহালি ভরসা রাখার কথা বলেছেন পৃথ্বী শ-র উপর। কিন্তু, ভরসা রাখতে গিয়ে তো আর ম্যাচ হারা যায় না। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। ওয়েলিংটন টেস্টে সিম-সুইং কন্ডিশনে তাঁর টেকনিকের দুর্বলতা ধরাও পড়ে গিয়েছে। ক্রিকেটমহলে প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের পরিবেশে ওপেনিং করার ক্ষমতা তাঁর আছে তো!
ঘরের মাঠের পাটা উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টে সাড়া জাগিয়ে অভিষেক হয়েছিল পৃথ্বীর। কিন্তু ওয়েলিংটনে দেখা গিয়েছে, ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতির অবকাশ রয়েছে তাঁর। বল মুভ করলে সবসময় যে মারতে যাওয়া যায় না, সেই পরিণত মানসিকতারও অভাব দেখা গিয়েছে। ফলে, শুভমন গিলকে খেলানোর চাপ বাড়ছে।
হনুমা বিহারি এতদিনে খেলে ফেলেছেন আট টেস্ট। ৩৭ গড়ে প্রায় পাঁচশো রানও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওয়েলিংটনে সেই তাঁকেই নড়বড়ে দেখিয়েছে। মজার হল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের পরিসংখ্যান বাদ দিলে ছয় টেস্টে হনুমার গড় মাত্র ১৯!
ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় ইনিংসে হনুমা যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন, তখন কিন্তু বল আর তেমন নড়ছিল না। ব্যাটিং তখন খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু দলকে টানতে পারেননি তিনি। মিডল অর্ডারে লম্বা সময় ধরে খেলতে গেলে হনুমাকে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। দ্বিতীয় টেস্ট তাই অগ্নিপরীক্ষা হয়ে উঠছে তাঁর সামনে।
এবং বিরাট কোহালি। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটসম্যানের ব্যাডপ্যাচ চলছে এখন। এই সফরে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে মাত্র একটা হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে কাইল জেমিসনের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সারে ক্যাচ দেন উইকেটকিপারকে। বোঝাই যাচ্ছে, শট বাছাইয়ে ভুল করছেন তিনি।
স্বয়ং বিরাট যদিও সমস্যার কথা মানছেন না। তাঁর মতে, ভালই ব্যাট করছেন, শুধু বড় রান আসছে না। কিন্তু, রান যদি না আসে, তা হলে সেই ভাল ব্যাটিং আদতে মূল্যহীন। কোহালিকে তাই ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে রান করতেই হবে। তবে তার জন্য অফস্টাম্পের বাইরের বলের বিরুদ্ধে খেলার পুরনো রোগের ওষুধ দ্রুত বের করতে হবে। আর অধিনায়ক হিসেবেও থাকতে হবে আগ্রাসী।