রাতারাতি বদলে গিয়েছিল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলের জীবন। আইপিএল-এর সুবাদে নিজের গ্রামে তিনি হয়ে গিয়েছিলেন নায়ক। কিন্তু স্বপ্নের ঘোর কাটতে বেশি দিন সময় লাগেনি। অতীত আইপিএল নায়ক কামরান খান আবার ফিরে গিয়েছেন বিস্মৃতির অন্ধকারে।
দেশের ক্রিকেট-মানচিত্রে অখ্য়াত মউ জেলার অবস্থান উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে ৩২১ কিমি দূরে। সেখানেই নাড়ওয়া সরাই গ্রামের ছেলে কামরান। তাঁর বাবা ছিলেন কাঠুরে। কখনও কখনও ট্যাক্সিও চালাতেন। মা বিড়ি বাঁধতেন। ব্য়াকরণ রপ্ত না করেই শুরু করেছিলেন ক্রিকেট খেলা।
ছোটখাটো এক টি-২০ প্রতিযোগিতায় তাঁকে দেখেছিলেন ড্যারেন বেরি। তিনি সে সময় ছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের মূল প্রশিক্ষক। দ্রোণাচার্যের চোখ ভুল করেনি একলব্যের প্রতিভাকে চিনতে। কামরান ডাক পেয়েছিলেন ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার।
একটি মাত্র পরিচ্ছন্ন সাদা পোশাক ছিল সম্বল। সেটা পরে ট্রায়ালের পথে রওনা। পথে প্ল্যাটফর্ম টিকিট কিনে রাত কাটিয়েছিলেন বিভিন্ন স্টেশনে। ট্রায়ালে তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রাজস্থান রয়্য়ালসের তৎকালীন অধিনায়ক শেন ওয়ার্ন।
ছোটখাটো চেহারার কামরানকে ঘণ্টায় ১৪০ কিমি বেগে বল করতে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ওয়ার্ন। সে বছর রাজস্থান রয়্য়ালসে যোগ দেন কামরান। সেটা ছিল ২০০৯। আইপিএল-এর দ্বিতীয় মরসুম।
এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে প্রথম সুপারওভারে বল করেছিলেন কামরান। রাজস্থান রয়্য়ালস এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্য়াচ টাই করিয়ে সুপারওভার অবধি নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন কামরান। প্য়াভিলিয়নে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্য়ান্ডসের ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া কলকাতা অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
সেদিনের ১৮ বছরের তরুণ তুর্কি কামরান আজ ২৯। এখনও তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত সেই আইপিএল ম্য়াচে সুপারওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ৩ রানে হারিয়ে রাজস্থানকে জয় এনে দেওয়া। শেন ওয়ার্ন এখনও তাঁর কাছে রোল মডেল।
রাজস্থান রয়্য়ালসের সঙ্গে আইপিএল-এর দু’টি মরসুমে খেলেছেন কামরান। ২০০৯-এ আইপিএল-এ অভিষেকের পাশাপাশি অন্য এক দিক থেকেও কামরানের জীবন ঘটনাবহুল। আইপিএল-এই তাঁর বোলিং অ্য়াকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
দু’ সপ্তাহের জন্য তাঁকে রিহ্যাবে পাঠানো হয়। ফিরে আসার পরে তাঁর বোলিং অ্য়াকশন পাল্টে যায়। সেইসঙ্গে হারিয়ে ফেলেন নিজের পুরনো ফর্মও।
২০১১-য় কামরান যোগ দেন পুণে ওয়ারিয়র্স-এ। সেটি তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত বল মনে করেন কামরান। পুণের হয়ে সেই মরসুমে একটি মাত্র ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
রাজস্থান রয়্য়ালসের বিপক্ষে সেই ম্য়াচে পুণের কামরান দু’ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে দুরমুশ হয়েছিলেন। বাকি টুর্নামেন্টে চোট আঘাতের কারণে পুণের রিজার্ভ বেঞ্চেই দিন কেটেছিল কামরানের।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলেই আইপিএল-এ অভিষেক হয়েছিল কামরানের। ২০১১-র পরে তিনি আর ডাক পাননি আইপিএল-এ। তার দু’ বছর পরে শ্রীলঙ্কার কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দুনিয়ায় পা রাখেন।
আইপিএল-এর প্রত্যেক মরসুমে সংবাদমাধ্যমের কোথাও না কোথাও ভেসে ওঠেন কামরান খান। বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি নাকি ক্রিকেটে সুযোগ না পেয়ে কৃষিকাজ করছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কামরান জানিয়েছেন, সেই তথ্য ঠিক নয়। তিনি কোনওদিন ক্রিকেট ছেড়ে নিয়মিতভাবে চাষের কাজে ফিরে যাননি। ক্রিকেট অনুশীলন তিনি বন্ধ করেননি। লকডাউনে ছিলেন মু্ম্বইয়ে। কিন্তু আবাসনের পার্কিং জোনে তাঁর ক্রিকেট অনুশীলন ঘিরে অভিযোগ জানা পড়শিরা।
তাই মুম্বই থেকে আপাতত নিজের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন কামরান। সেখানেই চলছে অনুশীলন। আবার ক্রিকেটে ফিরতে বদ্ধ পরিকর এই বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার।