দুরন্ত: অ্যান্ডারসনের রিভার্স সুইং জাদুতে বোল্ড অজিঙ্ক রাহানে। চেন্নাইয়ে মঙ্গলবার। ক্রিকেট দুনিয়া মুগ্ধ ইংল্যান্ডের তারকা পেসারের রিভার্স ভেল্কিতে। ছবি: পিটিআই।
মনে করা হচ্ছিল, চিদম্বরম স্টেডিয়ামের শেষ দিনে স্পিনাররাই হয়তো বড় ভূমিকা নেবেন। কিন্তু দেখা গেল, জিমি অ্যান্ডারসন নামের এক চল্লিশ ছুঁই ছুঁই পেসার আর তাঁর রিভার্স সুইং শেষ করে দিল ভারতের যাবতীয় প্রতিরোধ। নিজের করা প্রথম ওভারেই শুভমন গিল এবং অজিঙ্ক রাহানের স্টাম্প ছিটকে দিলেন অ্যান্ডারসন। ম্যাচও ঘুরে গেল ইংল্যান্ডের দিকে।
বলা হচ্ছে, টেস্টে এখনও পর্যন্ত যে ৫৬৮৩ ওভার বল করেছেন অ্যান্ডারসন, তার মধ্যে এ দিনেরটাই সেরা! নায়কের কী মনে হচ্ছে? বিনয়ী অ্যান্ডারসনের জবাব, ‘‘আমার ভাগ্যটা ভাল ছিল। উইকেটে একটা স্পট তৈরি হয়েছিল। ওখানে বল ফেলতে পেরেছিলাম। রিভার্স সুইংটাও পেয়ে যাই।’’ যোগ করেন, ‘‘তবে রিভার্স সুইং আমাদের কাছে আজ বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছিল।’’
রিভার্স সুইংয়ের কথা ভেবেই অ্যান্ডারসনকে বল দেওয়া হয় ২৭ নম্বর ওভারে। আপনারা কি বলের পালিশের উপরে নজর রেখে যাচ্ছিলেন? ম্যাচের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে এসে অ্যান্ডারসনের জবাব, ‘‘অবশ্যই। জফ্রা প্রথমে বলেছিল, ও কিছুটা রিভার্স সুইং পাচ্ছে। কিন্তু আমরা তার পরেও কয়েকটা ওভার স্পিনারকে দিয়ে বল করাই। চেয়েছিলাম, বলের এক দিকটা যাতে আরও বেশি খরখরে হয়ে যায়।’’
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট মনে করেন, তিনি যে সব ম্যাচে খেলেছেন, সেখানে কখনও এত ভাল একটা ওভার কাউকে করতে দেখেননি। তুলনায় শুধু আসছে ২০০৫ সালের অ্যাশেজে করা অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের একটা ওভার। রুটের কথায়, ‘‘এজবাস্টন টেস্টে এক ওভারে রিকি পন্টিং এবং জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে তুলে নিয়েছিল ফ্লিনটফ। ওই ওভারটার কথা মনে পড়িয়ে দিল জিমি। তবে এই ম্যাচের নিরিখে জিমির ওভারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরো ছবিটাই বদলে দেয়।’’
ওই ওভারটা নিয়ে অ্যান্ডারসন কী বলছেন? ‘‘আমার কাজটা ছিল, ঠিক জায়গায় বল রাখা। হাওয়ায় বলটা সুইং করছিল। তাই ব্যাটসম্যানদের কাজটা কঠিন হয়ে যায়।’’ বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, হয়তো এলবিডব্লিউ হতে পারে ব্যাটসম্যান। বল নিচু হচ্ছিল। মিডউইকেটে ক্যাচ যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। তবে দুটো স্টাম্প ওই ভাবে ছিটকে যাওয়ার দৃশ্যটা এই বয়সে দেখতে পেয়ে দারুণ লাগল। এই বয়সে এ রকম দৃশ্য সচারচর দেখা যায় না তো!’’
রুটের কাছে ৩৮ বছর বয়সি অ্যান্ডারসন হলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটের আসল ‘জিওএটি’— গ্রেটেস্ট অব অল টাইম। ‘‘যত বয়স হচ্ছে, তত যেন ওর উন্নতি হচ্ছে। দক্ষতা ক্রমশ বাড়ছে,’’ বলেন অধিনায়ক।
অতীতের অ্যান্ডারসন আর এই অ্যান্ডারসনের মধ্যে পার্থক্য কী? ১৫৮ টেস্টে ৬১১ উইকেটের মালিকের কথায়, ‘‘অনেক উন্নতি করেছি। হাতে বেশ কিছু অস্ত্র আছে। সব রকম পিচে বল করতে পারি।’’ ভারতের মাটিতে এর আগেও সফল হয়েছেন। আপনার কি মনে হয়, এখন আরও ভাল বল করছেন? অ্যান্ডারসন বলেন, ‘‘অবশ্যই। আমি এখন আরও ভাল বোলার হয়ে উঠেছি।’’
চেন্নাইয়ের গরমও তাঁকে কাহিল করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কা সফর থেকেই ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্টের কৌশল হল, অ্যান্ডারসনদের দিয়ে চার-পাঁচ ওভারের স্পেল করানো। অ্যান্ডারসন বুঝিয়ে দিয়েছেন, ৩৮টা স্রেফ সংখ্যা। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, তিরিশ বছর বয়সের পর থেকে পেসারদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট পেয়েছেন তিনি। ৩৪৩। দু’নম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ (৩৪১)।
ভারতের চিন্তা বাড়িয়ে আরও একটা কথা বলে রাখলেন অ্যান্ডারসন— ‘‘আমি কিন্তু পরের টেস্ট খেলতেও তৈরি। ব্যাটসম্যানরা ছন্দে থাকলে খেলে যেতে চায়। বোলাররা কেন ব্যতিক্রম হবে?’’