কে হাসবে শেষ হাসি? আন্তোনিও লোপেজ হাবাস না সার্জিও লোবেরা? ছবি - আইএসএল
বড় অদ্ভুত জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটো দল। এবং দুই দলের দুই স্প্যানিশ প্রশিক্ষক। আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস এই ম্যাচ জিততে পারলেই আইএসএলের ইতিহাসে প্রথম প্রশিক্ষক হিসেবে হ্যাটট্রিক করে বিরল নজির গড়তে পারবেন। অন্য দিকে সার্জিও লোবেরা এটিকে মোহনবাগানকে ফের একবার হারিয়ে দিলে হাবাসের দলের বিরুদ্ধে জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলবেন। তাই হাবাসের কাছে আইএসএল-এর এই ফাইনাল যেমন বদলার ম্যাচ, তেমন লোবেরার কাছে শনিবারের ফতোরদা স্টেডিয়ামের ফাইনাল নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার ম্যাচ।
গ্রুপ পর্বে হারের জ্বালা মেটানোর সুযোগ এটিকে মোহনবাগানের সামনে। আইএসএলের আবির্ভাবেই আগ্রাসন ও আধিপত্যের মিশেলে ফাইনালে পৌঁছেছে সবুজ-মেরুন। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন এটিকে-র দর্প চূর্ণ করে ভারতীয় ফুটবলে নিজেদের আধিপত্য দেখানোর সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া মুম্বই।
এক দলের বদলা, অন্য দলের প্রেরণা
চলতি আইএসএলে দারুণ ছন্দে রয়েছে এটিকে মোহনবাগান। তবে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দু’বার হেরে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন রয় কৃষ্ণ, প্রীতম কোটালরা। এর মধ্যে গত ম্যাচে মুম্বইয়ের কাছে হেরে যাওয়ার জন্য এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন ডেভিড উইলিয়ামস, মনবীর সিংহরা। সেই হারের বদলা নেওয়ার জন্য রীতিমতো ফুটছে এটিকে মোহনবাগান।
অন্য দিকে মুম্বই সিটি এফসি শিবিরও চেগে রয়েছে। এ বার লিগশিল্ড জেতা হয়ে গিয়েছে। ২০২২ সালে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে খেলা পাকা করে ফেলেছে তারা। এই প্রথমবার ফাইনালে গিয়ে জয়ী দলের তকমা পেলে সেটা হবে সোনায় সোহাগা। এর আগে দু’বার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় মুম্বইকে। তাই এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ হুগো বুমৌস, মুর্তাদা ফল-রা।
মুম্বইয়ের আক্রমণের র্যখতে মরিয়া সন্দেশ। ফাইল চিত্র।
দুই প্রশিক্ষকের ধারালো মস্তিষ্কের যুদ্ধ
দুই ধারালো স্প্যানিশ ফুটবল মস্তিষ্ক দুটো দলকে চালনা করে। রণনীতি, দল বাছাই থেকে শুরু করে তাঁদের খেলার গতিপথ, সবই দুই স্প্যানিশ কোচের ওপর নির্ভর করে। এক দিকে ৬৩ বছর বয়সি অভিজ্ঞ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। অন্য দিকে, ৪৪ বছরের সার্জিও লোবেরা। দু’জনেই একই দেশ থেকে এলেও তাঁদের ফুটবল দর্শনে রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত। হাবাসের পছন্দ গতিময়, আগ্রাসী, আকর্ষণীয় ফুটবল। লোবেরা অবশ্য ঠান্ডা মাথায়, ধীরস্থির ভাবে, পাসিং ও প্রেসিং ফুটবল খেলে বিপক্ষকে পরাস্ত করতে সিদ্ধহস্ত।
পিছন থেকে আক্রমণ তৈরি করাই পছন্দ মুম্বইয়ের ফুটবলারদের। বল নিজেদের অঞ্চলে রেখে ও নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে খেলতে বিপক্ষের বক্সের কাছে গিয়ে আক্রমণ করাই মুর্তাদা ফলদের খেলার বৈশিষ্ট। লিগে এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক ১০ হাজার ৫৭০টি পাস খেলেছে মুম্বই। পাসের সংখ্যার দিক থেকে এটিকে মোহনবাগান অনেকটাই পিছিয়ে। এখনও পর্যন্ত ২২ ম্যাচে ৭ হাজার ৩১১টি পাস খেলেছেন কার্ল ম্যাকহিউ, হাভি হার্নান্ডেজরা।
হাবাসের দল অবশ্য অত্যাধিক পাসিংয়ের চেয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে হানা দেওয়ার পক্ষপাতী। যাকে ফুটবলের ভাষায় বলে প্রতিআক্রমণ করা। তাই শটের সংখ্যার দিক থেকে তারা রয়েছে দু’নম্বরে, এফসি গোয়ার পরেই। গোয়ার দল যেখানে ৩০০ গোলমুখী শট মেরেছে ২২ ম্যাচে, সেখানে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের শটের সংখ্যা ২৭৮। মুম্বই সিটি এফসি-ও কাছাকাছি রয়েছে। তাদের শটের সংখ্যা ২৭১। তবে রয় কৃষ্ণর শটের সংখ্যার (৫৮) কাছাকাছি নেই মুম্বইয়ের কোনও ফুটবলার।
মহা ফাইনাল জেতার পাশাপাশি 'সোনার বুট'এর লক্ষ্যে নামছেন রয় কৃষ্ণ। ফাইল চিত্র।
শক্তি বনাম দুর্বলতা
ঘর সুরক্ষিত রেখে শত্রুকে আক্রমণ করাই হাবাসের মূল নীতি। তাই এটিকে মোহনবাগান এ বার দল বাছাইয়ের সময় শুরুতে রক্ষণ ভাগে সন্দেশ, তিরি, শুভাশিসদের মতো ফুটবলারদের দলে নেওয়া হয়েছিল। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে তারা (২২ ম্যাচে ১৭)। এফসি গোয়ার কোচ থাকাকালীন লোবেরা গোল খাওয়া নিয়ে বেশি ভাবতেন না। কিন্তু এ বার মুম্বইয়ে যোগ দিয়ে তিনি এই দিকে জোর দিয়েছেন। ফলে এই মরসুমে ২২ ম্যাচে ২০ গোল খেয়েছে মুম্বই। ফলে বোঝা যাচ্ছে দুই দলের রক্ষণ বেশ মজবুত।
হাবাসকে এ জন্য অবশ্য অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। তিনি রক্ষণাত্মক ফুটবলকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এমন আলোচনাও হয়েছে। যদিও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। দু’বারের আইএসএল জয়ী কোচের আগ্রাসী, প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল সামলে মুম্বই তাঁদের পাস নির্ভর ফুটবল কী ভাবে খেলবে সেটাই দেখার।
গত দুটো ম্যাচে সবুজ-মেরুনের রক্ষণের ফাঁক দিয়ে গোল করেছে মুম্বই। মুম্বইয়ের রক্ষণকে ভাঙতে হলে হাবাসের দলকে উইং-প্লে অনেক বাড়াতে হবে, যা তাদের আগের দুই ম্যাচেই ছিল কম। একই সঙ্গে গত দুটো ম্যাচে সেট পিস থেকে গোল হজম করেছিল কলকাতার দল। তাই ফাইনালের যুদ্ধে নামার আগে দলকে সেট পিস অনুশীলন করিয়েছেন হাবাস, যাতে পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এটিকে মোহনবাগান:
গোলরক্ষক: অরিন্দম ভট্টাচার্য, অভিলাষ পাল, আর্শ শেখ
রক্ষণ: তিরি, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি, সালাম রঞ্জন সিংহ
মাঝমাঠ: প্রণয় হালদার, হাভি হার্নান্ডেজ, এদু গার্সিয়া, কার্ল ম্যাকহিউ, লেনি রড্রিগেজ, জয়েশ রানে, রেজিন মাইকেল, শেখ সাহিল, এন ইংসন সিংহ
আক্রমণ: ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণ, মনবীর সিংহ, মার্সেলো পেরেইরা, কোমল থাটাল, মহম্মদ ফারদিন আলি মোল্লা
মুম্বই সিটি এফসি:
গোলরক্ষক: অমরিন্দর সিংহ, নিশিথ শেট্টি, বিক্রম সিংহ, ফুর্বা লাচেনপা
রক্ষণ: অমেয় রানাওয়াডে, ভলপুইয়া, মুর্তাদা ফল, মেহতাব সিংহ, মন্দার রাও দেশাই, তোনদোনবা সিং, মহম্মদ রকিপ
মাঝমাঠ: আমেদ জাহু, বিদ্যানন্দ সিংহ, বিপিন সিংহ, হার্নান সান্তানা, রেইনিয়ের ফার্নান্ডেজ, রাওলিন বোর্জেস, হুগো বুমৌস, সি গদার্ড, আসিফ খান, জ্যাকিচন্দ সিংহ, ডি ভিগ্নেশ, বিক্রম প্রতাপ সিংহ, প্রাঞ্জল ভূমিজ
আক্রমণ: অ্যাডাম লে ফন্দ্রে, বার্থোলোমিউ ওগবেচে