গোল করার মূহুর্তে রয় কৃষ্ণ। ছবি আইএসএল।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে অভিষেক ডার্বি ২-০ জিতে মুখ আলো করে হাসছিলেন এটিকে-মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। ম্যাচ শেষে এক ঝলক টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচ রবি ফাওলারের মুখটাও। বাঙালির চিরকালীন আবেগের ডার্বির শতবর্ষে মহারণে হেরে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচের মুখ তখন গম্ভীর।
অনেকেই বলবেন, এটিকে-মোহনবাগান বিপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে জিতেছে। কিন্তু আমি সেই দলে পড়ছি না। ইস্টবেঙ্গল শুরুটা ভালই করেছিল। প্রথমার্ধের শেষ দিক থেকে ওরা ধাক্কা খেল ফিটনেস এবং পরিকল্পনায়। এখানেই ম্যাচটা বার করে নিয়ে গেলেন হাবাস।
সবুজ-মেরুন শিবিরের এই বড় ম্যাচ জয়ের নেপথ্যে রয় কৃষ্ণ, প্রীতম কোটাল, কার্ল ম্যাকহিউ, জাভি হার্নান্দেসদের কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে এটিকে-মোহনবাগান অনেক তৈরি দল। ওরা গত বছরের চ্যাম্পিয়ন। সেই দলটাকে ধরে রেখেছে। গত বছর রক্ষণে যা কিছু ত্রুটি ছিল, তা কেটে গিয়েছে সন্দেশ জিঙ্ঘান, তিরিদের দলভুক্ত করে। আক্রমণে কয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে মনবীর সিংহকে। আর এই কাজগুলো ফাওলার সেখানে দল হাতে পেয়েছেন আড়াই সপ্তাহের জন্য। তাই হাবাসের কাছে আইএসএল ডার্বি ছিল পরীক্ষা হলে ‘কমন’ পাওয়া প্রশ্নপত্রের মতো। কোনও কিছুই অজানা নয়। সেখানে ফাওলার এবং ইস্টবেঙ্গলের কাছে সব কিছুই যেন অজানা।
ফাওলারের বিদেশিরা নতুন। পরে প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভারতীয় ফুটবলারেরাও ফারাক গড়ে দেওয়ার মতো কিছু দেখাতে পারল না। ভারসাম্য থাকা দল তৈরির সময়টাই পায়নি এসসি ইস্টবেঙ্গল। বেশি দিন একসঙ্গে ট্রেনিং করার সুযোগ পায়নি বলে ফুটবলারদের পারষ্পারিক বোঝাপড়াটাও তৈরি হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রথম ২০-২৫ মিনিট বলের দখল ছিল জা মাগোমাদের পায়েই। মাঠি স্টেনম্যান, অ্যান্টনি পিলকিংটনরাও ছন্দেই খেলছিল। রক্ষণে ড্যানি ফক্সকে তো বেশ নেতৃত্ব দিয়েই খেলতে দেখলাম। শুরুতেই পিলকিংটন গোল করার মতো জায়গায় চলেও গিয়েছিল। দুর্ভাগ্য ও গোল পায়নি।
প্রস্তুতি এবং কিছুটা পরিকল্পনার অভাবে ফাওলারের দল ধরতে পারেনি এটিকে-মোহনবাগানের ডান দিক দিয়ে প্রবীর দাস-ডেভিড উইলিয়ামস-রয় কৃষ্ণদের তৈরি করা ত্রিভুজ আক্রমণ। একই সঙ্গে এই এটিকে-মোহনবাগানের খেলা তৈরির কারিগর জাভি হার্নান্দেসকেও নিষ্ক্রিয় করতে পারেনি লাল-হলুদের মাঝমাঠ। এই মাঝমাঠের যুদ্ধেই কার্যত হারল এসসি ইস্টবেঙ্গল। না হলে ড্যানি ফক্সরা কিন্তু রয় কৃষ্ণকে আটকে দিয়েছিল। কিন্তু স্কট নেভিলের ক্ষণিকের ভুলে ম্যাচটাই হেরে বসল।
দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই ক্লান্তি গ্রাস করছিল স্কট, মাঠি স্টেনম্যানদের। যার সুযোগ নিয়েছে মোহনবাগান। গোল করে গিয়েছে কৃষ্ণ, মনবীর সিংহেরা। হাবাসের যেমন রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি, ফাওলার দেখলাম সেখানেও ধাক্কা খেলেন। মনবীরের গোলটার সময় নায়ারণ অহেতুক আগে ট্যাকলে গেল। আসলে একেবারে শেষ মুহূর্তে আইএসএলে যোগ দেওয়া এসসি ইস্টবেঙ্গল দল গড়ার সময়টাই পায়নি। আর ওদের দুর্ভাগ্য, প্রথম ম্যাচটাই পড়ল ডার্বি।
বড় ম্যাচ হারলেও এত তাড়াতাড়ি এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচ, ফুটবলারদের কাঠগড়ায় তোলা ঠিক হবে না। রবি ফাওলারের মতো কোচ এসেছেন। তাঁকে সময় দিতে হবে। ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিরা বেশ ভালই। আরও কিছুটা সময় পেলে এই টিমটাই হয়তো পাল্টে যাবে! ওদের দরকার খেলা তৈরি করার মতো মিডফিল্ডার এবং রয় কৃষ্ণের মতো সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার। সামনেই অল্প কয়েক দিনে তিনটি ম্যাচ খেলবে ফাওলারের দল। এই তিন ম্যাচেই লাল-হলুদের শক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে।