দলকে নিখঁুত করতে চান ফাওলার। ফাইল চিত্র
একটা জয় লাল-হলুদ শিবিরের ছবিটাই বদলে দিয়েছে। আইএসএলের অষ্টম ম্যাচে রবিবার ওড়িশা এফসিকে ৩-১ হারিয়ে ব্রাইট এনোবাখারে বলেছিলেন, ‘‘এসসি ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার পরে এই প্রথম সকলের হাসিমুখ দেখলাম।’’
সদ্য যোগ দেওয়া নাইজিরীয় তারকার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, টানা ব্যর্থতায় কতটা চাপে ছিলেন কোচ রবি ফাওলার থেকে মহম্মদ রফিকেরা। রবিবারের দুরন্ত জয়ের পরে ফের ফুরফুরে মেজাজে ফুটবলারেরা। তবে ফাওলার সতর্ক। ফুটবলারদেরও তিনি উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে বারণ করে দিয়েছেন। কারণ, ছ’দিনের মধ্যে দু’টি ম্যাচ খেলতে হবে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। বুধবার প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। শনিবার লড়াই সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে। যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত ফাওলার। সোমবার থেকেই গোয়া ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ।
ওড়িশার বিরুদ্ধে প্রথম দলে খেলা ফুটবলারেরা টিম হোটেলেই জিম করেছেন। বাকিদের অনুশীলন করান ফাওলার। তার আগে সহকারীদের নিয়ে ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচে লাল-হলুদের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে বসেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে লাল-হলুদ কোচের দুশ্চিন্তার কারণ দু’টি। এক) রক্ষণের ব্যর্থতাতেই ওড়িশার বিরুদ্ধে গোল খেয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। দুই) মাঝমাঠ ঠিক মতো খেলতে পারছে না। ওড়িশার বিরুদ্ধে অ্যান্টনি পিলকিংটন, জা মাগোমা, মহম্মদ রফিক দুর্দান্ত খেললেও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ মিলন সিংহ ও টোম্বা সিংহ। টিম ম্যানেজমেন্টের পর্যবেক্ষণ, এই কারণেই রক্ষণের উপরে বাড়তি চাপ পড়ে যাচ্ছে। যা বিপর্যয় ডেকে আনছে। রবিবার ম্যাচের পরেই ফাওলার বলেছিলেন, ‘‘আদর্শগত ভাবে আমরা সকলেই চাই কোনও গোল না খেয়ে ম্যাচ জিততে। তাই একটু হতাশ লাগছে গোল খাওয়ায়।’’
পরিস্থিতি সামলাতে ভাল মানের কয়েক জন ভারতীয় মিডফিল্ডার চাইছেন ফাওলার। সূত্রের খবর, সে ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে মিলনকে। ক্লাব কর্তারা ইতিমধ্যেই বিকল্প ফুটবলারের সন্ধানে নেমে পড়েছেন।
লাল-হলুদ কোচ ছ’দিনে দু’টি ম্যাচ খেলা নিয়েও চিন্তিত। ব্রাইট অবশ্য তা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। লাল-হলুদের নতুন তারকার কথায়, ‘‘এই জয় আমাদের দারুণ উদ্বুদ্ধ করবে। পরের দু’টি ম্যাচে এই ছন্দটা ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য।’’ নাইজিরীয় তারকার সঙ্গে একমত রফিকও। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘টানা ম্যাচ থাকলে ক্লান্তি আসবে। আমাদের সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে ভাল খেলতে হবে।’’ লাল-হলুদের দুই তারকাই উচ্ছ্বসিত ফাওলারকে নিয়ে। ব্রাইট বলেছেন, ‘‘কোচ আমাকে বলছিলেন, তোমার ফুটবলজীবনের সেরা অভিষেক হতে চলেছে। এই ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখো। আমি তা করতে পেরেছি বলে দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’’ রফিকের কথায়, ‘‘কোচ আমার নতুন নামকরণ করেছেন রাফা। কেউ আর এখন রফিক বলে ডাকছে না।’’
ওড়িশার বিরুদ্ধে মাগোমা ও পিলকিংটনের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কখনও স্বস্তিতে থাকতে দেননি রফিক। বলছিলেন, ‘‘ওড়িশার বিরুদ্ধে প্রত্যেকে দারুণ লড়াই করেছে।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা সব সময় জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামি। কিছু ম্যাচ হেরেছি ও ড্র করেছি। বছরের শুরুতেই এই জয়টা আমাদের দারুণ ভাবে উদ্বুদ্ধ করছে। দলে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে।’’
টানা সাত ম্যাচে জয় অধরা থাকায় রফিক কাউকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাননি। বললেন, ‘‘আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, ওড়িশাকে হারানোর পরেই সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাব।’’ এখানেই শেষ নয়। বাঙালি মিডফিল্ডারের উদ্যোগেই টিম হার্ডল শুরু হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলে। রফিক বললেন, ‘‘অতীতেও আমরা খেলা শুরু হওয়ার আগে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ান টু থ্রি...ইস্টবেঙ্গল, বলতাম। আইএসএলে প্রথম কয়েকটি ম্যাচে তা হয়নি। আমি প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার পরেই সকলকে বলেছিলাম, আমরা একসঙ্গে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে এই হুঙ্কারটা দেব। কারণ, এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার জন্য আমরা গর্বিত। ম্যাচের শুরু থেকেই তাই লড়াই করতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘লাল-হলুদ জার্সিতে মাঠে নেমে সব সময় মনে করি, এটাই আমার শেষ ম্যাচ। তাই শুরু থেকেই দুশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। এখন সব ম্যাচেই আমাদের মরণ-বাঁচন লড়াই। পরের ম্যাচটাও ভাল খেলার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’