মধ্যমণি: গোেলর পরে প্রবীর ও কৃষ্ণের সঙ্গে উল্লসিত মনবীর। আইএসএল
এটিকে-মোহনবাগানের রক্ষণ যে এ বারের আইএসএলে অন্যতম সেরা, প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই মনে হয়েছিল। আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের রণনীতিই হল রক্ষণ মজবুত করে খেলা। এই মরসুমে তিরি, সন্দেশ জিঙ্ঘন, শুভাশিস বসুকে সই করানোর অর্থই হল রক্ষণ আরও শক্তিশালী করে তোলা।
আইএসএলের প্রথম ম্যাচে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে সে ভাবে পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়নি সবুজ-মেরুন রক্ষণকে। ডার্বিতে এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কেমন খেলে হাবাসের ডিফেন্ডারেরা, সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম। কারণ, শক্তির বিচারে লাল-হলুদ শিবির অনেক বেশি শক্তিশালী কেরলের চেয়ে।
লাল-হলুদের কোচ রবি ফাওলার নিজে বড় স্ট্রাইকার ছিলেন। তিনি নিয়ে এসেছেন অ্যান্টনি পিলকিংটনের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ও সিটির বিরুদ্ধে গোল করা আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারকে। এ ছাড়াও বার্মিংহাম সিটির তারকা জা মাগোমা রয়েছে। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সফল দুই স্ট্রাইকার জেজে লালপেখলুয়া ও বলবন্ত সিংহ। আসল পরীক্ষা তো এই ম্যাচেই হবে।
শুক্রবার তিলক ময়দানে ভারতের দুই ফুটবল কিংবদন্তি প্রয়াত প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও চুনী গোস্বামীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে খেলা শুরু হয়। দিয়েগো মারাদোনার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ফুটবলাররা কালো ব্যান্ড পরে নেমেছিল। সবুজ-মেরুনের ডিফেন্ডারদের পারফরম্যান্স আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। সব চেয়ে ইতিবাচক লেগেছে রক্ষণ ও মাঝমাঠের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া।
হাবাসের প্রিয় ছক ৩-৫-২। এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও তা অপরিবর্তিত রেখেছিলেন। এই রণনীতি তখনই সফল হয়, যখন দুই রাইট ও লেফ্ট উইঙ্গার ঠিক মতো খেলতে পারে। অর্থাৎ, আক্রমণের পাশাপাশি, রক্ষণে নেমে এসে দলকে সাহায্য করে। মাইকেল সুসাইরাজ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় শুভাশিস বসু ছিল বাঁ-দিকে। ডান প্রান্তে ছিল প্রবীর দাস। দুই বাঙালি ফুটবলারই অসাধারণ খেলল। প্রথমার্ধের শুরুর দিকে প্রবীরের একটা সেন্টার তো এসসি ইস্টবেঙ্গলের ক্রসবার ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। একই ভাবে নীচে নেমে এসে সন্দেশদের দারুণ সাহায্য করছিল প্রবীর।
সুসাইরাজের পরিবর্ত হিসেবে নেমে কেরলের বিরুদ্ধে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি শুভাশিস। এ দিন বোঝাল, হাবাস ওর উপরে আস্থা রেখে কোনও ভুল করেননি। তবে প্রবীরের মতো শুভাশিস অতটা আক্রমণাত্মক নয়। ও রক্ষণ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। দুর্দান্ত খেলল কার্ল ম্যাকহিউ। রক্ষণ ও আক্রমণভাগের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজটা ও নিপুণ ভাবে করে গেল পুরো ম্যাচেই। দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলল প্রীতম কোটাল। এত অল্প সময়ে তিরি ও সন্দেশের মধ্যে যে বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে, তা অনবদ্য। রক্ষণ শক্তিশালী হলে স্ট্রাইকারেরা অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারে। ডার্বিতে রয় কৃষ্ণ ও মনবীর সিংহ গোল করে সেটাই আরও এক বার প্রমাণ করল।
এটিকে-মোহনবাগানের রক্ষণে একটাই দুর্বলতা আমার চোখে পড়েছে। ম্যাচের শেষের দিকে জমাট ভাবটা থাকছে না। দীর্ঘ দিন পরে ম্যাচ খেলার জন্য হয়তো এই সমস্যাটা হচ্ছে। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। সবে তো দু’টো মাত্র ম্যাচ হল।
এসসি ইস্টবেঙ্গল: দেবজিৎ মজুমদার, স্কট নেভিল, রানা ঘরামি (অভিষেক আম্বেকর), ড্যানিয়েল ফক্স, নারায়ণ দাস, মাঠি স্টেনম্যান, লোকেন মিতেই, সুরচন্দ্র সিংহ, অ্যান্টনি পিলকিংটন (ওয়াহেংবাম আঙ্গুওসানা), জা মাগোমা ও বলবন্ত সিংহ (মহম্মদ রফিক)।
এটিকে-মোহনবাগান: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, তিরি, সন্দেশ জিঙ্ঘন, প্রবীর দাস (সুমিত রাঠি), শুভাশিস বসু, জাভি হার্নান্দেস (গ্লেন মার্টিন্স), কার্ল ম্যাকহিউ, জয়েশ রানে (প্রণয় হালদার), রয় কৃষ্ণ (ব্র্যাড ইনমান) ও ডেভিড উইলিয়ামস (মনবীর সিংহ)।