হাবাস ও কিবু। দুই স্পেনীয় কোচের লড়াই দিয়ে শুরু আইএসএল। -ফাইল চিত্র।
দুই স্পেনীয় কোচের লড়াই দিয়ে শুরু হচ্ছে এ বারের আইএসএল। শুক্রবার মেগা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাসের এটিকে-মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ কেরল ব্লাস্টার্স। তাদের কোচ কিবু ভিকুনা। যাঁর হাত ধরে গত মরসুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহনবাগান।
হাবাসের ট্রেডমার্ক হল, ডিফেন্স জমাট রেখে আক্রমণে ওঠা। তাঁর হাতে রয়েছেন রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের মতো দুই ফুটবলার। যাঁরা গোল করতে দক্ষ। অন্য দিকে, কেরলের সম্পদ কিবুর ফ্রি ফ্লোয়িং ফুটবল। মাঠের লড়াই শুরুর আগে কেরল কোচকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হাবাস বলেন, “কিবু ভিকুনার সময় ভাল গিয়েছে মোহনবাগানে। গত বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। আইএসএল অবশ্য ভিন্ন টুর্নামেন্ট। ওকে শ্রদ্ধা করি। তবে শুক্রবারের ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্টই আমার লক্ষ্য।”
আরও পড়ুন: কোটি টাকার লিগে দুই প্রধান, নজর থাকবে কোন ফুটবলারদের দিকে?
এটিকে ও কেরলের লড়াইয়ের কথা সবারই জানা। প্রথম মরসুমে কেরলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এটিকে। পরে হোসে মোলিনার কোচিংয়ে সেই কেরলকে হারিয়েই খেতাব জিতেছিল কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি। গত বার অবশ্য কেরলের কাছে দুটো সাক্ষাতেই হেরে গিয়েছিল এটিকে। এদিকে, এ বার পরের ম্যাচেই অপেক্ষা করে রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। শুক্রবারের ম্যাচ শেষ হলেই শুরু হয়ে যাবে ডার্বির কাউন্টডাউন। এ দিনও প্রথম ম্যাচের আগে হাবাসের দিকে উড়ে এল ডার্বি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন। স্পেনীয় কোচ বললেন, “সবার বিরুদ্ধেই সবাইকে খেলতে হবে আইএসএল-এ। এটাই নিয়ম। নির্দিষ্ট কোনও দলের বিরুদ্ধে প্রথমে খেলব, এমন কোনও চিন্তা আমার নেই। আমার প্রথম প্রতিপক্ষ কেরল। ওদের শ্রদ্ধা করি। আগে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচটা শেষ হোক, পরে ডার্বি ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা করব।”
ফুরফুরে মেজাজে এটিকে-মোহনবাগানের কোচ ও সাপোর্ট স্টাফরা।
এ বারের আইএসএল অবশ্য অন্যান্য বারের থেকে আলাদা। কোভিড পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন ফুটবলার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফরা। আত্মীয়, পরিবার, বন্ধু বিচ্ছিন্ন হয়ে সবাইকে থাকতে হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আগে কখনও খেলতে হয়নি কাউকে। পরিস্থিতি যে কঠিন তা মেনে নিচ্ছেন হাবাস স্বয়ং। দর্শকহীন স্টেডিয়াম কি ফুটবলারদের মোটিভেট করতে পারে? সমর্থকদের সমর্থন ছাড়া কি কোনও দল নিজেদের উজাড় করে দিতে পারে? হাবাস গতবারের আইএসএল ফাইনালের উদাহরণ টানছেন। বলছেন, “আগের বারও তো দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই খেলা হয়েছে। আর এখন তো বিশ্বের সর্বত্র ফাঁকা স্টেডিয়ামেই ম্যাচ খেলা হচ্ছে। আমাদেরও দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে পরিস্থিতির সঙ্গে।” গতবারের ফাইনাল যখন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন করোনা থাবা বসাতে শুরু করেছে এ দেশে। আগাম সতর্কতার জন্য দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হয়েছিল নজিরবিহীন ফাইনাল। এ বার শুরু থেকে শেষ সব খেলাই হবে দর্শকহীন স্টেডিয়ামে।
আরও পড়ুন: ঝুঁকি এড়াতে হাল্কা অনুশীলন হাবাসের
স্টেডিয়ামে উপস্থিত না থাকলেও এটিকে-মোহনবাগানকে নিয়ে আশার ফানুস উড়িয়েছেন ভক্তরা। প্রিয় দলকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাঁদের। প্রত্যাশার চাপ তাই ক্রমশ বাড়ছে। হাবাস বুঝছেনও তা। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “সাপোর্টাররা সব সময়ে চায় দল প্রতিদিন জিতুক। ওদের প্রত্যাশাকে শ্রদ্ধা করি। মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করবে ছেলেরা।”
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কেরল ব্লাস্টার্স।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে যখন খেলতেন, তখন হাবাসের কোচ ছিলেন লুইস অ্যারাগোনেস। তাঁর কোচিংয়ে ২০০৮ সালে ইউরোপ সেরা হয়েছিল স্পেন। পরে অ্যারাগোনেসের হাত থেকে স্পেনের রিমোট কন্ট্রোল ওঠে দেল বস্কির হাতে। বস্কির উত্তরসূরি, ইউরো জয়ী অ্যারাগোনেসকেই গুরু মানেন এটিকে-মোহনবাগানের হেডস্যর হাবাস। নিজে বলেও থাকেন, “অ্যারাগোনেসই আমার কাছে স্পেশ্যাল ওয়ান।”
অ্যারাগোনেসের মতোই হাবাসও লড়াকু মানসিকতার। রয় কৃষ্ণদের ভিতরেও সেই মানসিকতাই সঞ্চারিত করে দিয়েছেন তিনি। সেই কারণেই আইএসএল-এর ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সফল কোচের নাম আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।