গতিতে বাজিমাত বঙ্গ পেসারের

টেবল টেনিস ক্লাস ছেড়ে ক্রিকেটে এসে নায়ক ঈশান

ব্যস, সেখান থেকেই এক নতুন ইনিংস শুরু এই তরুণ গতিময় পেসারের। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

দুরন্ত: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বল হাতে পাকিস্তানকে হারানোর নায়ক ঈশান। ফাইল চিত্র

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি একটা অদ্ভুত টান তাঁর। বাবা টেবল টেনিসের ক্লাসে ভর্তি করে দিলেও মন বসাতে পারেননি তিনি। বিকেল হলেই শিবতলার মাঠে ক্যাম্বিস বলে ক্রিকেট খেলতে চলে যেতেন। কে জানত, এই ছেলেটাই একদিন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে? কে জানত, চন্দননগরের ছোট্ট বিট্টুই একদিন ভারতীয় জার্সি গায়ে হয়ে উঠবেন ঈশান পোড়েল?
ছোটবেলায় সাত বছর বয়সে চন্দননগরের ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবে প্রথম বার লাল বলটি হাতে ধরেন তিনি। যদিও শুরু থেকেই ব্যাটিংয়ের দিকে বেশি আগ্রহ ছিল ঈশানের। যে হেতু ছোটবেলা থেকেই ঈশান বেশ লম্বা, তাই কোচ প্রদীপ মণ্ডলই তাকে প্রথম বার পেস বল করার কথা বলেন। ব্যস, সেখান থেকেই এক নতুন ইনিংস শুরু এই তরুণ গতিময় পেসারের।

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই খুব জেদি ছিলেন ঈশান। যে কাজটা একবার করার সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটা করেই ছাড়তেন। তবে পড়াশোনা করা নিয়ে কখনও ছেলেকে কিছু বলেননি ঈশানের বাবা চন্দ্রনাথ পোড়েল। তিনিও রাজ্য স্তরে কবাডি খেলেছেন। ছেলের সাফল্যে আপ্লুত চন্দ্রনাথবাবু আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, ‘‘আমিও মন দিয়ে খেলাধুলো করেছি তো, তাই বুঝতে পারি যে, দুটো জিনিস কখনও একসঙ্গে করা যায় না। যে কোনও একটা জিনিস আপনাকে বেছে নিতে হবে।’’ আরও যোগ করেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিট্টু খুবই জেদি ছেলে। যে কাজটা ও করবে ভাবত সেটা করেই ছাড়ত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে চোট পাওয়ার পরে আমিও খুব ভেঙে পড়ি। তখন ও আমাকে বলেছিল, চিন্তা কোরো না, আমি ঠিক খেলব।’’
ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবে কয়েক দিন নিয়মিত অনুশীলনে যাওয়ার পরে ঈশানের প্রথম কোচ প্রদীপ মণ্ডল ওর মধ্যে অদ্ভুত নিষ্ঠা লক্ষ্য করেছিলেন। প্র্যাক্টিসে আসতে এক মিনিটও দেরি হতো না ঈশানের। ন’বছর বয়সে ক্রিকেট যাত্রা শুরু হওয়ার পর গাজা পার্কে দেবাঙ্গ গাঁধীর কোচিং ক্যাম্পে ঈশানকে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন প্রদীপবাবু। বল করার সময় ভুল পায়ে লাফিয়ে ডেলিভারি করার কারণে সেই ক্যাম্পে সুযোগ পাননি ঈশান। সেই ক্লাবেই তখন কোচ ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রয়াত চম্পি চট্টোপাধ্যায়। তিনিই দু’দিন ধরে ঈশানকে অনুশীলন করিয়ে ওর ভুল পায়ের (রং ফুট) ডেলিভারিকে ঠিক করে দিয়েছিলেন। ফোনে আবেগপ্রবণ গলায় সেই কথাই জানালেন চন্দ্রনাথবাবু। বলেন, ‘‘চম্পিবাবু বেঁচে থাকলে হয়তো আজকের দিনে খুবই খুশি হতেন। ঈশানের ক্রিকেটার হওয়ার পিছনে ওঁর অবদান অনস্বীকার্য।’’
তার পরেই শ্যামবাজারের উৎপল চট্টোপাধ্যায় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে বিভাস দাসের কাছে শিখতে যান ঈশান। দশ বছরের ঈশানকে প্রথম দিন দেখেই বিভাসবাবু বুঝেছিলেন ছেলেটির মধ্যে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কী দেখে এই কথা মনে হল বিভাসবাবুর? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম দিনই ওর পেস দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। দশ বছরেই যে এত জোরে বল করতে পারে, আগামী দিনে তো সে আরও পোক্ত হয়ে উঠবে।’’
সেখান থেকেই সিএবি অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্ম করলেন তিনি। তার পর বাংলা অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ। ভিশন ২০২০-তে ওয়াকার ইউনিসেরও নজর কেড়েছিলেন ঈশান। তরুণ বঙ্গ পেসারের শক্তি যে তাঁর গতি, তা প্রথম দিন দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন ওয়াকার। তাই পেসের সঙ্গে কোনও রকম আপস করতে ঈশানকে মানা করেছিলেন ওয়াকার। ঈশানকে প্রথম দিনই ওয়াকার বলে দিয়েছিলেন যে, বল সুইং করাতে চাইলেও পেস কমিয়ে তা করা চলবে না। গতির সঙ্গেই সমান ভাবে সুইং করানোর শিক্ষাই তিনি পেয়েছিলেন ওয়াকারের থেকে। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে সুযোগ। ১৯ বছর পরে বাংলাকে কোচবিহার ট্রফি পাইয়ে দেওয়ার অন্যতম নায়ক ছিলেন ঈশানই। তবে তাঁর থেকে এখন প্রত্যাশা অনেক বেশি। দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে। তিনি কি পারবেন? চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘পারবে! পারতে তো ওকে হবেই!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement